বেবীকর্নের সাথে কোন সাথী ফসল চাষ করলে কৃষকভাই দ্বিগুণ লাভ পাবেন?

বেবীকর্ন স্বল্পমেয়াদী ফসল এবং যে কোন মরশুমে চাষের উপযোগী হওয়ায় ফসল বৈচিত্র্যকরণে ব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এবং বছরের বিভিন্ন সময়ে শস্য পর্যায়ে বেবীকর্ন চাষ করা যাবে। বেবীকর্নের সাথে ডাল শস্য, সবজী, ফুল প্রভৃতি চাষে ভালো লাভ পাওয়া যায়।

KJ Staff
KJ Staff
baby corn farming
Corn cultivation (Image Credit - Google)

বেবীকর্ন স্বল্পমেয়াদী ফসল এবং যে কোন মরশুমে চাষের উপযোগী হওয়ায় ফসল বৈচিত্র্যকরণে ব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এবং বছরের বিভিন্ন সময়ে শস্য পর্যায়ে বেবীকর্ন চাষ করা যাবে। বেবীকর্নের সাথে ডাল শস্য, সবজী, ফুল প্রভৃতি চাষে ভালো লাভ পাওয়া যায়।

বেবীকর্নের চাষের সাথে একত্রে ফসল চাষ চাষীদের উদ্বুদ্ধ করবে, এতে ফসল চাষের নিবিড়তা বাড়বে। বছরে ৩-৪ বার বেবীকর্নের চাষ করা যেতে পারে। জৈব চাষে এই ফসলটি বিশেষভাবে মানানসই। স্বল্পমেয়াদী ফসল হওয়ায় সার, কীটনাশকের ব্যবহার ও সেচের প্রয়োজন অন্যান্য ফসলের থেকে অনেক কম দরকার হয়। এই ফসল চাষ করে রাজ্যের কৃষকেরা নিজেদের আর্থিক উন্নতি করতে পারেন। এছাড়াও আরও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার সম্ভবনা আছে।

কর্মসংস্থানের সুযোগ (Rural employment ) –

বেবীকর্ন চাষ কৃষকদের অর্থনৈতিক বলিষ্ঠতার পাশাপাশি, গ্রামীণ মহিলা ও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করবে। এর ফলে ক্রেতা সহজে ও সুলভে বাজারে বেবীকর্ন পাবে। সমবায় ভিত্তিতে ব্লক স্তরে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে ওঠার সম্ভবনা তৈরী হবে।

সাথী ফসল (Companion Crop) –

বেবীকর্নের সাথে সাথী ফসল হিসাবে প্রায় ২০ ধরণের ফসল চাষ করা যায়। এর মধ্যে আলু, কড়াইশুঁটি, পালং, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুস, গাজর, বীন, গ্ল্যাডিওলাস প্রভৃতি বেবীকর্নের সাথে সাথী ফসল হিসাবে চাষ লাভজনক।

ঝুড়ি তোলা –

ঝুড়ি তোলা বেবীকর্ন চাষের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। জাত বিশেষে পুরুষ ফুল বা ঝুড়ি তুলে ফেলতে হবে। উচ্চ মানের বেবীকর্নের মোচা পেতে হলে সময়ে ঝুড়ি তোলা প্রয়োজন। গাছ থেকে তোলা ঝুড়ি গরু, ছাগল প্রভৃতি প্রানিকে খাওয়ানো যেতে পারে।

বেবীকর্নের মোচা তোলা –

বেবীকর্নের মোচা থেকে রেশম বেরিয়ে আসার তিন দিনের মধ্যে গাছ থেকে তুলে ফেলতে হবে।সাধারণত বীজ বোনার ৫০-৫৫ দিনে মোচার রেশম বেরনোর ২৪ ঘন্টার মধ্যে মোচা তুলে ফেলা বাঞ্ছনীয়। রেশমের দৈর্ঘ্য ২ সেমি.-এর বেশী হলে বেবীকর্নের মান খারাপ হবে। খরিফ খন্দে রোজ এবং রবি খন্দে এক দিন অন্তর মোচা তুলতে হবে। মোচা তোলার আদর্শ সময় হল সকালে হালকা ঠাণ্ডার সময়। উন্নত মানের হাইব্রিড জাতের প্রতিটি গাছ থেকে ৪-৫ বার করে মোচা তোলা যায়। প্রতিটি বেবীকর্ন ৮-১০ সেমি. লম্বা, ১-১.৫ সেমি. পরিধি যুক্ত এবং ৭-৮ গ্রাম ওজনের হার থাকে।

বেবীকর্নের উৎকর্ষতা –

ফসল তোলার পর উৎকৃষ্ট বেবীকর্ন বাছাই করার সময়ে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি লক্ষ্য রাখতে হবে –

১) বেবীকর্নের মাপ, আকার ও রঙ যেন একই প্রকারের হয়।

২) বেবীকর্নের রঙ ঘিয়ে থেকে হালকা হলুদ হওয়া বাঞ্ছনীয়।

৩) বেবীকর্নের গায়ে যেন কোন আঘাতের চিহ্ন না থাকে এবং খোসা পরিষ্কারভাবে মুক্ত করা থাকে।

৪) বেবীকর্নগুলি অবশ্যই তাজা, পচন মুক্ত, উপযুক্ত আদ্রতা বিশিষ্ট হতে হবে এবং সঠিক সময়ে যেন তোলা হয়ে থাকে।

৫) ডিম্বকের সজ্জা সারি অবশ্যই সোজা হতে হবে।

গো-খাদ্য – বেবীকর্ন চাষে পুরুষ ফুলের ঝুড়ি, মোচা তোলার পর সবুজ গাছ, মোচার ছাড়ানো খোসা প্রভৃতি গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহার বা বিক্রি করা যেতে পারে।

ফলন –

এই চাষ থেকে বিঘে প্রতি ২০০-২৫০ কেজি বেবীকর্ন পাওয়া যায়। এছাড়া অবশিষ্ট হিসাবে ২৬০০-৫৫০০ কেজি সবুজ গাছ গো-খাদ্য রূপে পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন - বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লাভজনক বেবীকর্ন চাষ

বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণ –

বেবীকর্ন মাঠ থেকে তোলার পরেই সুযোগ থাকলে সরাসরি বাজারে বিক্রির জন্য পাঠানো যেতে পারে। বিপণনের ক্ষেত্রে বাজারে ৪.৫-১০ সেমি. লম্বা ও ১.০-১.৫ সেমি. পরিধিযুক্ত বেবীকর্নের ভালো দর পাওয়া যায়। জাত হিসাবে এবং পরিচর্যার ওপরে বেবীকর্নের মান নির্ভর করে।

দু’ভাবে বেবীকর্নের সংরক্ষণ হতে পারে। সরুভাবে চাকা চাকা করে কেটে ড্রায়ারে শুকনো করে প্লাস্টিকের প্যাকেটে সিল করে দীর্ঘদিন রাখা যায়। এছাড়া ব্রাইন দ্রবণে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। পরিষ্কার করা বেবীকর্ন ১০ মিনিট ধরে সেদ্ধ করে ঠাণ্ডা জলে কিছুক্ষণ রাখতে হবে। এরপর বাছাই করা বেবীকর্ন একটি কাঁচের বোতলে ব্রাইন ও জলের দ্রবণে (২:১ অনুপাতে) ডুবিয়ে রেখে ভালো করে ঢাকা বন্ধ করে দিতে হবে।

বেবীকর্ন চাষে লাভ ও খরচ –

বেবীকর্ন মূলত ষাট দিনের ফসল। প্রধান ফসল চাষের পাশাপাশি ছোট জমিতে বা মূল ফসল হিসেবে যে কোন মরশুমে চাষ করে চাষী ভালো লাভ করতে পারেন।

বেবীকর্ন চাষের একরে লাভ খরচ –

চাষের খরচ – ১৩,০০০/-

বেবীকর্ন উৎপাদন (কেজি) – ৪,০০০

উৎপন্ন বেবীকর্নের মূল্য -  ২০,০০০/-

উৎপন্ন গো-খাদ্য (কেজি) – ১৪,০০০

উৎপন্ন গো-খাদ্যের মূল্য – ৪,২০০/-

বেবীকর্ন চাষে লাভ – ১১,২০০/-

সারা বিশ্বে বেবিকর্নের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার দিকে দৃষ্টি রেখে এ রাজ্যে কৃষির বৈচিত্র্যকরণে ও কৃষকের আর্থিক প্রগতিতে বেবীকর্নের চাষের উল্লেখযোগ্য প্রসার ঘটাতে প্রযুক্তিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে। এখন বিদেশের বাজার থেকে আমদানি করা বেবীকর্ন উচ্চবিত্তদের রসনা তৃপ্ত করছে। বড় বড় হোটেলে, শহরের বাজারগুলিতে বেবীকর্নের আধিপত্য চোখে পড়ার মতো।এ রাজ্যে তাই বেবীকর্নের যোগান মেটাতে বেবীকর্ন চাষের পরিধিও দ্রুত বাড়াতে হবে।

অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফসল বেবীকর্নের জনপ্রিয়তা দেশের সাধারণ ও দরিদ্র মানুষদের মধ্যে বিভিন্ন সম্প্রচারের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য করে তোলা দরকার। কারণ অপুষ্টি আমাদের দেশের অন্যতম সমস্যা। সমস্যার সমাধানে বেবীকর্ন সার্থক ভূমিকা নিতে পারে। এছাড়া বহির্বাণিজ্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, কর্মসংস্থানের বিশাল সম্ভবনা এবং কৃষিক্ষেত্রে আর্থিক উন্নতির ইঙ্গিতবাহী দিক বেবীকর্নের চাষ।

আরও পড়ুন - Sesame Cultivation: আপনিও কি তিল চাষে ইচ্ছুক? জেনে নিন পদ্ধতি

Published On: 24 May 2021, 10:41 AM English Summary: Which companion crop you should cultivated with baby corn, know how to get double profit

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters