দেশে মোট কলা উৎপাদনের ৩.৪% পশ্চিমবঙ্গতে উৎপন্ন হয়। রাজ্যে ০.০৪ মিটার এলাকা থেকে ১.০১ মেট্রিক টন কলা উৎপাদিত হয়। আমাদের রাজ্যে উন্নত কলার জাতের (Banana Variety) মধ্যে রয়েছে গ্র্যান্ড নাইনি, রোবাস্টা, মর্তমান, কাঁঠালি, এবং কাঁচকলার মধ্যে বেহুলা, ফিয়া ৩, সাবা প্রভৃতি।
তবে কলা চাষে (Banana Cultivation) কৃষি বিজ্ঞানীদের ভাবাচ্ছে ঢলে পড়া রোগ, এটি এতদিন কাঁঠালি কলায় দেখা যেত, তবে নদীয়ায় ক্যান্ডেভিস জাতের ক্ষেত্রেও এই রোগটির প্রকোপ বাড়তে থাকায় তা চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়ায়, তবে পরিস্থিতি এখন অনেকটা ভালো, আর কলার ফলনও বেড়েছে প্রবল। তবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন অনেক সময় সস্তায় চারা পেতে চাষিরা রোগাক্রান্ত জমি থেকে চারা সংগ্রহ করেন ফলে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে, যা কলা চাষের আগ্রগতিতে বাধা দেয়।
বর্তমান যুগে ব্যবসায়ীক সিঙ্গাপুরী কলা চাষে টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে তৈরি গ্র্যান্ড-নাইন বা G-9 কলার জাত চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে, তবে এই কলা একটু বেশী খাদ্য উৎপাদন চায়, তাই পুরো রাসায়নিক সার ব্যতিরেকে এই জাতের পুরো ফলন প্রকাশ পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু দেশি মর্তমান, কাঁঠালী ও অন্যন্য সিঙ্গাপুরীর সঙ্গে কাঁচকলায় জৈব প্রযুক্তিতে ভালই ফলনের সম্ভবনা।
টিস্যু কালচার কলা কী (Tissue Culture) ?
প্রথাগত তেউড় বাদে সুস্থ, নীরোগ, উন্নত গুণমানের, পরীক্ষিত ‘মা’ গাছের অংশ নিয়ে, অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরিতে, কৃত্রিম উপায়ে টেস্টটিউবের মধ্যে বাড়িয়ে, এক সঙ্গে হাজার হাজার উন্নত কলার চারা, পরিবেশে খাপ খাইয়ে, ছোট পলিপ্যাকে উৎপাদনই হল টিস্যু কালচার কলা। বর্তমানে জায়ান্ট গভর্নর বা সিঙ্গাপুরির মত টিস্যু কালচার কলার উন্নত জাত গ্র্যান্ডনাইন বহুল জনপ্রিয় ও অধিক বড় কাঁদিতে, অতি উন্নত কলার সঙ্গে, বিঘাতে লাখ টাকারও বেশী লাভ দিতে সক্ষম।
প্রথাগত তেউড়ের তুলনায় টিস্যু কালচার কলার সুবিধা – প্রথাগত তেউড়ের তুলনায় টিস্যু কালচার কলার চাষে কিছু সুবিধা পরিলক্ষিত হয়।
সেগুলি নিম্নে পর্যালোচনা করা হল –
-
এই পদ্ধতিতে এক সাথে অনেক চারা তৈরি করা সম্ভবপর হয়।
-
চারা সম্পূর্ণ রোগমুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
-
প্রথাগত তেউড়ের তুলনায় তুলনামূলক তাড়াতাড়ি, ৮ থেকে ৯ মাসের মধ্যে ফল আসে।
-
প্রথাগত সিঙ্গাপুরির তুলনায় ফলন দেড় থেকে দুই গুণ বেশী হয়, কাঁদির গড় ওজন হয় প্রায় ৫০-৫৫ কেজি।
-
এই পদ্ধতির আর একটি সুবিধা হল, এক সাথে ফল আসে ও একেবারে কাঁদি কাটা যায়।
-
একটি কাঁদিতে প্রায় ২২০ থেকে ২৪০ টি কলা থাকে।
-
কলা চাষের জমি আগে চুন দিয়ে শোধন করে মাসখানেকে গভীর চাষ দিয়ে ২০-২৫ কুইন্টাল গোবরসার ১৫ কুইন্টাল কেঁচোসারের সাথে ২০০ কেজি নিমখোল (না পেলে নিমদানা ২ কেজি)+ ২ কেজি হিউমিক আসিড + ২ কেজি জৈব উৎসেচক ও ৫৩ কেজি ছাই মিশিয়ে দিতে হবে।
-
গাছ বসানোর সময় ২০ কেজি গোবর সার/১০ কেজি কেঁচোসার ট্টাইকোডার্মা ও সিউডোমোনাস ৫০ গ্রাম করে প্রতিটি মিশিয়ে সঙ্গে ২৫ গ্রাম হিউমিক অ্যাসিড + ২৫ গ্রাম নিমদানা + ২৫ গ্রাম জৈব উৎসেক
ফলন : প্রথম বছর – ৯ – ১০ ছড়া / কাঁদি
দ্বিতীয় বছর – ১২ - ১৩ ছড়া / কাঁদি
কলার সংখ্যা – ১৬০ – ১৬৫ টি (প্রথম বছর), কাঁদি ৩০ - ৩৫ কেজি (প্রথম বছর)
২১০ – ২৪০ টি (দ্বিতীয় বছর), কাঁদি ৫০ – ৫৫ কেজি (দ্বিতীয় বছর)
সার ব্যবস্থাপনা (Fertilizer application) -
প্রথম মাসে- ১ কেজি নিমখোলের সাথে ২৫ গ্রাম জৈব উৎসেক, ২৫ গ্রাম গ্রোথ এনহান্সার জৈব দানা প্রতি মাসে বাড়িয়ে অষ্টম মাসে ২ কেজি নিমখোলের সাথে + ৫০ গ্রাম জৈব উৎসেচক + ৫০ গ্রাম জৈব দানা।
-
কলার ছড়া পড়লে দেদো পোকার আক্রমণ রোধে নিমবীজ নির্যাস বা নিমজাত কৃষি বিষ ২/৩ বার ৭ দিন ব্যবধানে স্প্রে ও পারলে পূর্ণতায় কাঁদি ঢাকা দিতে হবে।
-
গাছের মোচা নামার আগে অবধি ভিতরে শুঁটিজাতীয় সবজি বা ডালশস্য চাষ। খুব বেশী তেউড় না রেখে ১/২ টি সঠিক তেউড় পরের ফসলের জন্য বেছে রাখতে হবে।
আরও পড়ুন - Cash Crop Cultivation – অর্থকরী ফসল পাটের সহজ পদ্ধতিতে লাভজনক চাষ
অন্যান্য পরিচর্যা :
চারা লাগানোর মাস খানেকের মধ্যে প্রথম চাপান দেওয়ার সময় নালা বুজিয়ে ভেলী তুলে দিতে হবে। জলসেচ, আগাছা নিয়ন্ত্রণ, ঠেক দেওয়া, মোচা কাটা, কাঁদি ঢাকা ইত্যাদি পদ্ধতি সাধারণ কলা গাছের মতই একই পদ্ধতিতে করতে হবে। যদিও টিস্যু কালচার কলার ক্ষেত্রে পরবর্তী তেউড় রাখা মানা, তবে অধিক লাভের জন্য একটি তেউড় রাখবেন এবং তার পরের বছর বাকি তেউড় কেটে একটি তেউড়, এভাবে ক্রমান্বয়ে তিন বছরই ফল সংগ্রহ কার্য চলবে।
আরও পড়ুন - Seed Germination Process: বীজ অঙ্কুরোদগম পদ্ধতিগুলি কি কি?