Cash Crop Cultivation – অর্থকরী ফসল পাটের সহজ পদ্ধতিতে লাভজনক চাষ

খরিফ শস্যের মধ্যে পাট ভারতের অর্থকরী ফসল। পশ্চিমবঙ্গে হুগলী, নদীয়া, হাওড়া, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণা, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, সহ উত্তরের মালদা, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে পাট চাষ হয়। মে-জুন-জুলাই মাসে পাট পচানো গন্ধ পাট চাষের জানান দেয়।

স্বপ্নম সেন
স্বপ্নম সেন
Jute farming
Jute Farmers (Image Credit - Google)

খরিফ শস্যের (Cash Crop) মধ্যে পাট ভারতের অর্থকরী ফসল। পশ্চিমবঙ্গে হুগলী, নদীয়া, হাওড়া, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণা, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, সহ উত্তরের মালদা, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে পাট চাষ হয়। মে-জুন-জুলাই মাসে পাট পচানো গন্ধ পাট চাষের জানান দেয়।

আজও ভারতের অধিকাংশ চাষী গতানুগতিক পদ্ধতিতেই পাট চাষ করেন। আর তাই জাতীয় স্তরে এর উৎপাদনশীলতা বিঘা প্রতি মাত্র ৩-৩.৫ ক্যুইন্টাল (৮-১০ মণ)।

পাট চাষের বিভিন্ন দিকগুলি সম্পর্কে আজ বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

মৃত্তিকা (Soil) –

বেলে দো-আঁশ, পলি দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটিতে পাট ভালো হয়। মাটির পি.এইচ ৫.৫-৭.৫ আদর্শ। সাধারণত উঁচু ও মাঝারি জমিতে মিঠা পাট ও সব জমিতে তিতা পাট চাষ করা যায়। বীজ বোনার ৬০ দিন পর তিতা পাট দাঁড়ানো জল সহ্য করতে পারে, কিন্তু মিঠা পাট কোনভাবেই জল সহ্য করতে পারে না।

অনুকূল আবহাওয়া -

প্রাথমিকভাবে উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়া দরকার। পাটের বৃদ্ধির জন্য ২৪-৩৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা এবং ৯০% আপেক্ষিক আর্দ্রতা উপযুক্ত। আরেকটি দিক হল পাটের ভালো বৃদ্ধির জন্য সমবন্টিত ১৫০০-২০০০ মি.মি. বৃষ্টি প্রয়োজন, যার মধ্যে ২৫০ মি.মি. ফাল্গুনের মাঝামাঝি থেকে বৈশাখের মাঝামাঝি পর্যন্ত দরকার, যখন পাট বোনা হয়।

জমি তৈরী –

মাটি খুব ভালো করে চাষ দিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে কারণ, পাটের বীজ খুব ছোট। জমিকে ৫-৬ বার লাঙল অথবা ২-৩ বার ট্রাক্টর (হ্যারো) দিয়ে চাষ করা দরকার। মনে রাখতে হবে, ভালোভাবে চারা বেরনোর জন্য জমি সমান করা অবশ্যই দরকার।

উন্নত জাত –

ভাল ফলনের জন্য ভালো জাত আর ভালো বীজ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। মিঠা বা তিতা পাটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – নবীন (জেআরও ৫২৪) বিঘা প্রতি যার গড় ফলন ৪-৪.৫ ক্যুইন্টাল, চৈতালী (জেআরও ৮৭৮) ফলন ৩.৫-৪ ক্যুইন্টাল, বাসুদেব (জেআরও ৭৮৩৫) ফলন ৪-৪.৫ ক্যুইন্টাল, বৈশাখী (জেআরও ৬৩২) ফলন ৩.৫-৪ ক্যুইন্টাল। আর তিতা পাট বা সাদা পাটের মধ্যে সোনালী (জেআরসি ৩২১), সবুজ সোনা (জেআরসি ২১২) ও শ্যামলী (যেআরসি ৭৪৪৭) বিঘা প্রতি যাদের গড় ফলন – ৩.৫-৪ ক্যুইন্টাল। ইদানীং সময়কালে ব্যারাকপুর পাট গবেষণা কেন্দ্র থেকে উদ্ভূত কিছু নতুন মিঠা পাটের জাত – সুরেন (জেআরও ২০৪), ইরা (জেবিও ২০০৩ এ), সৌরভ (ইঘ ৫৮), যাদের গড় ফলন বিঘা প্রতি ৪.৬-৫.৩ ক্যুইন্টাল। হুগলী জেলায় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র দ্বারা পরিচালিত গবেষণায় দেখ গেছে কৃষকদের জমিতে নবীনের পরিবর্তে সুরেন জাতটি বেশ উল্লেখযোগ্য সাড়া ফেলেছে।

বীজ শোধন ও বীজ বপন –

বীজবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বীজ শোধন একান্ত আবশ্যক। প্রতি কেজি বীজের জন্য কার্বেন্ডাজিম ২ গ্রাম অথবা ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ৫ গ্রাম ব্যবহার করা যেতে পারে। বীজ বোনা সাধারণভাবে স্থান অনুযায়ী, মাটির আর্দ্রতা, কালবৈশাখী ঝড়, বৃষ্টি ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। সাধারণত চৈত্র (মার্চ মাসের মাঝামাঝি), থেকে বৈশাখ (এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি) পাট বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। ছিটিয়ে বীজ বোনার চেয়ে সারিতে বীজ বুনলে যেমন বীজ কম লাগে, তেমনি নিড়ানি বা অন্তর্বর্তী কাজের খরচও অনেক কম হয়। মিঠা পাট ছিটিয়ে বুনলে বিঘা প্রতি ১ কেজি আর সারিতে বুনলে ৮৫০ গ্রাম বীজ লাগে। ছিটিয়ে বীজ বোনার চেয়ে সারিতে বুনলে ফলনও অপেক্ষাকৃত বেশী পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে, এক সারি থেকে অপর সারির দূরত্ব মিঠা পাটের জন্য ২০ সেমি. : ৫-৭ সেমি. আর তিতা পাটের জন্য ২৫ সেমি. : ৫-৭ সেমি.। সর্বস্তরে প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কৃষকদের সারিতে পাট বোনার বিষয়ে তেমনভাবে আগ্রহী করা যায় নি, যদিও ইদানীং সাড়া মিলছে কিছু প্রগতিশীল কৃষকের বিজ্ঞানসম্মত চাষে উদ্যোগী হওয়ায়।

সার প্রয়োগ –

মাটি পরিক্ষা করে সার প্রয়োগ করা ভাল। এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য যে জমি তৈরীর সময় বিঘা প্রতি ৮-১০ ক্যুইন্টাল জৈব সার এবং ১ কেজি করে অ্যাজোটোব্যাক্টর ও পিএসবি প্রয়োগ করা দরকার জমির সার্বিক উন্নতির জন্য।

তিতা পাটের ক্ষেত্রে কম উর্বর জমিতে নাঃফঃপঃ – ৬০:৩০:৩০ হেক্টরে (বিঘা প্রতি ৮:৪:৪ কেজি), মাঝারি উর্বর জমিতে যথাক্রমে ৫০:২৫:২৫ হেক্টরে (বিঘা প্রতি ২.৬:১.৩:১.৩ কেজি) আর উর্বর জমিতে নাঃফঃপঃ – ৪০:২০:২০ হেক্টরে (বিঘা প্রতি ২.৬:১.৩:১.৩ কেজি)। তাই মাঝারি ক্ষমতাসম্পন্ন জমিতে তিতা পাটের জন্য ইউরিয়া ১৮ কেজি, এসএসপি ২০ কেজি এবং এমওপি ৫.৫ কেজি প্রয়োজন।                                                              

মিঠা পাটের ক্ষেত্রে কম উর্বর জমিতে নাঃফঃপঃ – ৫০:২৫:২৫ হেক্টরে (বিঘা প্রতি ৬.৬:৩.৩:৩.৩ কেজি), মাঝারি উর্বর জমিতে যথাক্রমে নাঃফঃপঃ – ৪০:২০:২০ হেক্টরে (বিঘা প্রতি ২.৬:১.৩:১.৩ কেজি) ও উর্বর জমিতে নাঃফঃপঃ – ৩০:২০:৩০ হেক্টরে (বিঘা প্রতি ৪:১.৩:৪ কেজি)। সহজ হিসাব করলে মিঠা পাটের ক্ষেত্রে মাঝারি জমির জন্য ইউরিয়া ৬ কেজি, এসএসপি ৮ কেজি এবং এমওপি ২ কেজি।

মূল সার হিসাবে ইউরিয়া সার না প্রয়োগ করে সম্পূর্ণ ফসফেট ও অর্ধেক পটাশ সার এবং চাপান হিসাবে মোট নাইট্রোজেন সারের অর্ধেক এবং বাকি পটাশ সার ২ ভাগে বীজ বোনার ১৫ দিন ও ৩৫-৪০ দিন পর দিতে হবে। চাপান সার দেওয়ার আগে জমি পাতলা ও আগাছামুক্ত করে নিতে হবে। অনেক সময় শেষ চাপান সার মাটিতে প্রয়োগ না করে পাতায় স্প্রে করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ইউরিয়ার ২ % জলীয় দ্রবণ (২০ গ্রাম প্রতি লিটার জলে অর্থাৎ ব্যারেলে ৩০০ গ্রাম) ৩৫ বা ৫০ দিনের মাথায় পাতার নীচে স্প্রে করা যায়। বিঘা প্রতি ১০০ লিটার দ্রবণ দরকার। স্প্রে করার সময় ইউরিয়ার জলীয় দ্রবণের সাথে চাইলে রোগ বা পোকা নিয়ন্ত্রণ করার ঔষধ মেশানো যাবে। পাটের ক্ষেত্রে প্রতি লিটার জলে ১ গ্রাম অক্টাবোরেট গুলে চারার ৩ ও ৬ সপ্তাহ বয়সে বিঘা প্রতি যথাক্রমে ৩০ ও ১০০ লিটার জল স্প্রে করা হয়। এছাড়াও ঘাটতি যুক্ত জমিতে ৩-৪ বছরে একবার বিঘা প্রতি ১.৫ কেজি বোরাক্স জমি তৈরীর সময় দিতে হবে।

অন্তর্বর্তী পরিচর্যা -

বীজ বোনার ১৫-২০ দিন পর অর্থাৎ চারার বয়স ৭-১০ সেমি. হলে প্রথম বার এবং ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বার অর্থাৎ চারার বয়স ২০-২২ সেমি. হলে নিড়ান দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ছিটিয়ে বোনা পাটে ১০ সেমি. অন্তর ও সারিতে বোনা পাটে ৫-৭ সেমি. অন্তর চারা তুলে পাতলা করতে হবে। প্রতি বর্গ মিটারে ৫০-৬০ টি সুস্থ সবল চারা রেখে বাকি তুলে ফেলতে হবে। ভালো ফলনের জন্য এটা ভীষণ কার্যকরী।

পাটের আগাছা নিয়ন্ত্রণ –

সব ফসলের মতই আগাছা পাট চাষেও এক গভীর সমস্যা, যা সময় মতো নিয়ন্ত্রণ না করলে ফলনে বেশ প্রভাব পরে। তাই নিম্নে উল্লিখিত বিষয়গুলিতে বিশেষ নজর দিতে হবে। যেমন –

ক) আগাছামুক্ত বীজ ও জৈব সার।

খ) রাসায়নিক সার অযথা না ছড়িয়ে যতটা সম্ভব গাছের কাছে ব্যবহার করতে হবে।

গ) বোনার ১৫ এবং ৩০ দিনের মাথায় নিড়ান ২ বার ব্যবহার করতে হবে (সম্ভব হলে)।

ঘ) খড়, কচি পার্থেনিয়াম ইত্যাদির আচ্ছাদন ব্যবহার করতে হবে।

আরও পড়ুন - Dolomite Lime Fertilizer: ফসলের অধিক ফলন পেতে ব্যবহার করুন ডলোচুন

সময়মতো সঠিক পরিমাণে আগাছা নাশকের ব্যবহার। সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে বিঘা প্রতি ৪ ব্যারেল জল বা ৬০ লি. জলে আগাছানাশক ঔষধ ভালো করে মিশিয়ে ভেজা আর্দ্র জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

আরও পড়ুন - Seed Germination Process: বীজ অঙ্কুরোদগম পদ্ধতিগুলি কি কি?

Published On: 23 July 2021, 06:09 PM English Summary: Profitable crop Jute is a profitable method of cultivation

Like this article?

Hey! I am স্বপ্নম সেন . Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters