গ্রাম বাংলার এক অতি পরিচিত সুন্দর ফুল হলো জিনিয়া | এই ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে যেমন হয়ে থাকে তেমনি অনেকে বাড়ির ছাদে টবে এই ফুলের চাষ করে থাকেন | জিনিয়ার চাষ করা মোটেই ব্যয়বহুল নয়। এবং, খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে এই ফুল | তাই, কৃষকরা এই ফুল চাষে খুবই আগ্রহী হয় | সারা বছর এই ফুলের চাষ করা যায় | ফুলের রং লাল, গোলাপি, বেগুনি ও হলুদ প্রভৃতি হয়ে থাকে। ফুলদানিতে সাজাবার জন্য এবং তোড়া তৈরির জন্য এই ফুল বহুল ব্যাবহৃত হয় |
জাত:
জিনিয়া ফুল বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে | তবে, সিঙ্গেল ও ডাবল জাতের জিনিয়া সাধারণত চাষ হয়ে থাকে | এর জনপ্রিয় জাত হচ্ছে ডাবল ফুল, যা চন্দ্রমল্লিকার মতো দেখতে |
মাটি(Soil):
হালকা উর্বর দো-আঁশ মাটি এই ফুল চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। জলাবদ্ধ, ভিজে ও স্যাঁতসেতে জমিতে এই ফুল চাষ একদম ভালো হয় না |
জলবায়ু(Climate):
জিনিয়া ফুল চাষে উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়া প্রয়োজনীয়। কিন্তু ক্রমাগত ও অত্যাধিক বৃষ্টিপাতে গাছের পাতা কুঁকড়িয়ে যেতে পারে ও ফুল ছোট হয়ে যায়। সমভাবে ব্যাপ্ত ১০০-১২৫ সেমি. বৃষ্টিপাত ও ৩০-৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন মৌসুমি ফুলের পক্ষে বিশেষ অনুকূল।
চাষের সময়(zinia flower cultivation):
জুন মাসের মাঝামাঝি এবং অক্টোবর মাসে বীজ বপণ করে চারা প্রস্তুত করা হয় |
আরও পড়ুন - Lotus cultivation guide: কিভাবে ঘরে চাষ করবেন পদ্মফুল, জেনে নিন পদ্ধতি
জমি তৈরী:
সাধারণত, এই ফুল চাষের জন্য হালকা উর্বর দোআঁশ মাটি, উঁচু, শুষ্ক ও সহজে জল নিষ্কাশিত হয় এমন জমির প্রয়োজন হয় | দক্ষিণ খোলা জমি এ ফুল চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। জমিতে লাঙ্গল দেওয়া বা কোপানোর সময় জমিতে পরিমাণমতো পাতাপচা সার, গোবর পচা সার, হাড় গুঁড়ো বা সুপার ফসফেট সার প্রয়োগ করে জমির সাথে মেশাতে হবে। জমিকে সম্পূর্ণভাবে কর্ষণ করে মাটি ঝুরঝুরে ও নরম করে ১ফুট বা ৩০ সেমি. দুরে দুরে চারা বসাতে হবে। চারা রোপনের পর জমিতে উপযুক্ত পরিমাণে ও নিয়মিতভাবে সেচ প্রয়োগ করতে হবে |
চারা রোপণ পদ্ধতি:
বীজতলার চারাগুলি ২/৩ ইঞ্চি বা ৫-৮ সেমি. এর মত লম্বা হলেই রোপণ করতে হবে। বাগানে রোপণ করলে ১.৫ফুট বা ৪৫ সেমি. দূরে দূরে রোপন করতে হবে। রোপণের কিছু দিনের মধ্যে গাছে ও নিকৃষ্ট ধরনের ফুল ফুটতে আরম্ভ করে। কিন্তু বর্ষাকালের মাঝামাঝি ও শেষের দিকে গাছ যখন ৩ ফুট বা ৯০ সেমি. এর মত লম্বা হয় তখন গাছে বড় বড় ফুল হয়।
সার প্রয়োগ:
চারা রোপণের প্রায় ১৫-২০ দিন পর থেকে গাছের গোড়ায় ৭ দিন পর পর তরল সার (খোল ও কাচা গোবর ১০ দিন মাটির পাত্রে ভিজিয়ে রেখে তার জল), পাতাপচা সার বা আবর্জনা সার, হাড় গুঁড়ো দিতে হবে। ফুল আসার সময় এ তরল সারে প্রতি লিটারে ১০০ গ্রাম সুপার ফসফেট মিশিয়ে দিলে ফুলের রং ও গড়ন ভালো হয় | গাছে কুঁড়ি আসার সময় ইউরিয়া, আমোনিয়াম সালফেট সার প্রয়োগ করতে হবে |
সেচ:
গাছের গোড়া শুকিয়ে গেলে সেচ দিতে হবে | এরপর, প্ৰয়োজন অনুযায়ী গাছে সেচ দেওয়া আবশ্যক |
আগাছা দমন:
নিয়মিতভাবে আগাছা পরিষ্কার করা বাঞ্চনীয় | গাছ বড় হলে প্রতি গাছ থেকে ৩ বা ৪ তে বড় শাখা রেখে বাকিগুলি ছেঁটে দিতে হবে | তাতে গাছে ফুল বড় হবে |
ফুল সংগ্রহ:
ফুলের আকার বড় হলে তা সংগ্রহ করে নিতে হবে | ফুল গাছে ১০ থেকে ১২ দিন থাকার পর শুকিয়ে যায় | বোঁটাসহ ফুল সংগ্রহ করতে হয় |
আরও পড়ুন -Paddy disease management: শিখে নিন ধানের কীটশত্রুকে দমন করার পদ্ধতি
Share your comments