প্রধানত, এটি একটি শীতকালীন সব্জি | বিদেশি সব্জি হলেও, এদেশে জুকিনির চাহিদা বেড়েছে ভালোই | এটি অনেকটা মিষ্টি কুমড়োর মতো এক ধরণের সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সব্জি | এটি সবুজ ও হলুদ দুই ধরনের রঙের হয়ে থাকে। উত্তরবঙ্গে ব্যাপকভাবে চাষ হলেও, দক্ষিণবঙ্গে মূলত কম চাষ হয় | ভারতে চাষাবাদ হচ্ছে এরকম কয়েকটি জাতের -zucchini (Cucurbita pepo) একটি জনপ্রিয় জাত।
এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ আছে। এর পাতা ও কাণ্ড সব্জি হিসেবে খাওয়া হয়। এটি গরমে স্কোয়াশ এবং তরকারি ও ভাজি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। বিভিন্ন বেসরকারী কোম্পানী স্কোয়াসের বীজ বাজারজাত করছে, এতে আখেরে চাষীভাইদের লাভ হচ্ছে | তবে, জেনে নিন কিভাবে চাষ করবেন এই জুকিনি;
মাটি (Soil):
জুকিনি চাষের জন্য বেলে-দোআঁশ মাটি বেশ উপযুক্ত। যেসব জায়গায় মিষ্টি কুমড়ো জন্মায় সেখানে অনায়াসে এই চাষ করা যায় |
চাষের জমি তৈরিঃ
প্রথমত, ভালো ফলন পেতে হলে জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে। মাটি ও জমির প্রকারভেদে ৫-৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করে নিতে হবে। শীতকালীন চাষের সময় জমিতে জলের পরিমাণ কম থাকলে প্রয়োজনে জমি চাষের আগে সেচ দিয়ে নিতে হবে।
আরও পড়ুন - White Gourd Farming: জেনে নিন বাড়ির ছাদে চালকুমড়ার সহজ চাষ পদ্ধতি
বীজ বপনের সময় :
শীতকালীন চাষাবাদের জন্য ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে বীজ বপন করা হয়। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য ভাদ্র মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে আশ্বিন মাসে (আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ) জমিতে সরাসরি বীজ বপন করা হয়।
বীজের পরিমান:
এক বিঘা বা ৩৩ শতক জমিতে ছোট সাইজের বীজ হলে ৩০০ গ্রাম / ২৪০০-২৫০০ টি বীজ লাগবে। বড় সাইজের বীজ হলে ৫০০ গ্রামের মতো লাগতে পারে । শতক প্রতি ১০ গ্রাম বীজ লাগতে পারে।
ফুল ও ফল আসার সময়ঃ
বীজ রোপণের অল্প দিনের মধ্যেই গাছ বেড়ে ওঠে এবং রোপণের ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই গাছে ফুল আসে। পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে হবে। বীজ লাগানো থেকে ফল তুলতে সময় লাগে দুই আড়াই মাস। ফুল ও ফল দেখতে অনেকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো। ৫৫-৬০ দিনের ভিতর এটি বাজারজাত করা যায়।
রোপণ(Planting):
জুকিনির বীজ সরাসরি জমিতে রোপণ করা যায়। তবে ছোট আকারের পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদন করে বা প্লাস্টিক ট্রেতে করে তা জমিতে রোপণ করলে ভালো ফলন হয়। প্রায় ৩ ফুট দূরে দূরে একটি মাদায় ২-৩ টি বীজ বপন করতে হয়। বীজ বোপন বা চারা রোপণ করার সময় গাছ থেকে গাছে দুরুত্ব ১.৫ ফুট এবং একটি গাছের লাইন থেকে অন্য গাছের লাইনের দুরুত্ব হলো ৩ ফুট । বীজ প্রায় ১ ইঞ্চি গভীরে বপন করতে হবে। চারা গজানোর পর মাটি তুলে ৬-১২ ইঞ্চি উঁচু করে দিতে হবে এবং ১-২ ফুট প্রশ্বস্ত করতে হবে। বীজ বপনের ৪-৬ সপ্তাহ পরে ফল ধরা আরম্ভ হবে। জুকিনি চারা রোপণের ১০-১২ দিন আগে গর্তের মাটির সাথে জৈব সার মিশিয়ে রাখতে হবে। জৈব সার বলতে পুরানো পচা গোবর সার হতে পারে বা কেঁচো জৈব বা ভার্মি জৈব সার হতে পারে । বীজ বপন করার ১০-১৫ দিনের ভিতর চারা বের হয়ে গাছ দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাবে।
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
জমি তৈরির সময় গোবর ২০ কেজি, টিএসপি ৩৫০ গ্রাম, এমওপি ২০০ গ্রাম, জিপসাম ৪০০ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড ৫০ গ্রাম, বোরাক্স ৪০ গ্রাম, দস্তা ৫০ গ্রাম শতাংশ প্রতি প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের ৭-১০ দিন পূর্বে মাদা প্রতি গোবর ১০ কেজি, টিএসপি ৬০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড ৮ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে |চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর মাদা প্রতি ৩০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২৫ গ্রাম এমওপি; চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর মাদা প্রতি ২৫ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে কেঁচোর চলাচল বেশি হলে দানাদার বিষ ব্যবহার করতে হবে জৈমি তৈরির আগে।
সেচ:
সার দেওয়ার পর হালকা সেচ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে। জুকিনি গাছ সপ্তাহে ২ ইঞ্চি জল শোষণ করে থাকে। তাই প্রয়োজনে সেচ প্রদান করতে হবে। শীতকালীন চাষের জন্য এক মাস পর পর জমিতে সেচ দিতে হবে। তবে, লক্ষ্য রাখতে হবে, চাষের সময় জমিতে জল বেশি সময় যেন জমে না থাকে |
রোগবালাই ও দমন(Disease Management System):
মাছিপোকা:
এই পোকা কচিফল ও ফুলের মধ্যে প্রথমে ডিম পাড়ে। পরে, ফল ও ফুলের ভিতর খায় যার ফলে ফল ও ফুল পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়। এই পোকার আক্রমণের ফলে প্রায় ৫০-৭০ ভাগ ফল নষ্ট হয়ে যায়।
প্রতিকার:
আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে তা নষ্ট করে ফেলতে হবে। জমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার করতে হবে।
জাবপোকা:
জাবপোকার আক্রমণে মিষ্টি কুমড়ার বাড়ন্ত ডগা ও পাতা হলুদ হয়ে যায়। গাছ তার সতেজতা হারিয়ে ফেলে এবং ফলন গুরুতর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক জাবপোকা দলবদ্ধভাবে গাছের পাতার রস চুষে খায়। ফলে পাতা বিকৃত হয়ে যায়, বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও প্রায়শ নিচের দিকে কোঁকড়ানো দেখা যায়।
প্রতিকার:
প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাবপোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়। নিম বীজের দ্রবণ বা সাবানগোলা জল স্প্রে করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়।
আমাদের পশ্চিমবঙ্গে জলপাইগুড়ি সহ বিভিন্ন জেলায় জুকিনি চাষ (Zucchini Cultivation) করা হয়। এটি বাজারে প্রায় ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রয় হয়। সুতরাং, এক একর জমিতে চাষ করে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।
আরও পড়ুন - Breeding process of Koi Fish: জেনে নিন কৈ মাছের কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি
Share your comments