
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি দপ্তরের গবেষণা শাখার অধীন ডালশষ্য ও তৈলবীজ গবেষণাকেন্দ্রটি একটি সনামধন্য প্রতিষ্ঠান। এই কেন্দ্র জন্ম দিয়েছে চাষিদের মধ্যে জনপ্রিয় ও উচ্চফলনশীল অনেকগুলি ডালশষ্যের জাত ও তৈলবীজের।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনে ডালশস্য ও তৈলবীজ গবেষণা শুরু হয় পঞ্চাশের দশক থেকে। সঠিক রাস্তায় সঠিক গবেষনায় ও সঠিক কাঠামো তৈরী করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার চাষীদের হাতে আবহাওয়া, জলবায়ু, স্থান, মৃত্তিকা ও ঋতু ভিত্তিক সঠিক বীজ ও চাষের আধুনিক নিয়মাবলী তুলে দেওয়ার জন্য এই গবেষনা কেন্দ্রটি তৈরী করেন। তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী শ্রী কমল গুহ এটির উদ্বোধন করেন ১৯৮৫ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী, যার উদ্দেশ্য ছিল যাতে এই রাজ্যের মানুষ আর্থিক সামর্থের মধ্যে ও চাহিদা মতো সুসম খাদ্যের নিরাপত্তা পান।
এই গবেষণা কেন্দ্রটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই গবেষণা কেন্দ্রে বর্তমানে বহু ন্যাশনাল রিসার্চ প্রজেক্ট চলছে, কিছু ফসলের ভলেন্টারী সেন্টার হিসেবে। ন্যাশনাল প্রজেক্ট গুলো জাতীয় কৃষি অনুসন্ধান পর্ষদের AICRP তত্ত্বাবধানে ছলছে। এখনে ন্যাশনাল প্রজেক্ট –এর মধ্যে ICARDA – এর প্রোগ্রাম চলছে তাদের নিজস্ব নিয়মাবলীর মাধ্যমে। এই কেন্দ্রের যুগ্ম অধিকর্তা শ্রী সুদীপ সরকারের আলোচনায় আমরা জানলাম কী কী কাজ এখানে হচ্ছে –
- আবহাওয়া, জলবায়ু, স্থান, মৃত্তিকা ও ঋতু ভিত্তিক বিভিন্ন জাতের ডালশস্য ও তৈলবীজ চাষ এই রাজ্যের ক্ষেত্রে নির্ধারন করা। যে জাতগুলি পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে উপযোগী সে গুলিকে নির্ধারন করে চাষিদের কাছে ভালো বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া।
- সংকরায়নের মাধ্যমে ভালো জাত আবিষ্কার করা পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে উপযোগী।
- পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রামের ব্লকের চাষিদের সঙ্গে এখানকার বৈজ্ঞানিকেরা আলোচনা করে তাদের উন্নত জাতের বীজের সুফল সম্বন্ধে প্রশিক্ষন দেওয়া।
- গবেষকরা এখানে বিভিন্ন ফসলের উন্নত জাতের নিউক্লিয়াস বীজ উৎপাদন করেন।
- বৈজ্ঞানিকেরা এখানে বিভিন্ন জাতের ব্রিডার বীজ উৎপাদন করেন এবং এই বীজগুলি নির্দিষ্ট সরকার নির্ধারিত মূল্যে DAC নির্ধারিত বিভিন্ন সংস্থাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় যাতে ব্রিডার বীজগুলি সেই সংস্থাগুলির মাধ্যমে চাষিদের কাছে পৌঁছায় সিড সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে।
- বৈজ্ঞানিকেরা এখানে কেন্দ্র সরকারের নির্ধারিত কো-অর্ডিনেটেড ট্রায়াল করেন তাদের গাইডলাইন অনুযায়ী।
- এই গবেষনা কেন্দ্রের প্রচুর নিজস্ব জাতের ডালশস্য ও তৈলবীজ আছে যেগুলি এখানকার বৈজ্ঞানিকেরা বছরের পর বছর ধরে রেখেছেন।
- FLD অর্থাৎ ফ্রন্ট লাইন ডেমন্সট্রেশন করা হয়। নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে চাষিদের প্রদর্শন করে এর সুফল সম্বন্ধে ধারনা দেওয়া হয় এই কেন্দ্রের মাধ্যমে।
এই কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময়ে ডালশস্য ও তৈলবীজের যে উন্নত ফলনশীল জাতগুলি উদ্ভাবন করেছেন সেগুলি পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে অধিক পরিচিত ও সমাদ্রিত। জাতগুলি হল : -
ডালশস্য
কলাই- কালিন্দী, সারদা, গৌতম ও সুলতা।
ছোলা – মহামায়া-১, মহামায়া-২, অনুরাধা ও বিদিশা।
মুসুর – আশা, রঞ্জন, সুব্রত।
মুগ – সোনালী, পান্না, সুকুমার ও বীরেশ্বর।
অড়হর – শ্বেতা, রবি (২০/১০৫) ও চুনী।
মটর – ধুসর, জি.এফ-৬৮।
তৈলবীজ
টোরি সরিষা – অগ্রণী ও পাঞ্চালী।
শ্বেত সরিষা – বিনয়, সুবিনয় ও ঝুমকা।
রাই সরিষা – সীতা, ভাগিরথী, সরমা ও সংযুক্তা, অসেচ।
গোবি সরিষা – কল্যাণ।
তিসি – নীলা।
তিল – রমা, তিলোত্তমা ও সাবিত্রী।
- রুনা নাথ (runa@krishijagran.com)
Share your comments