করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে হু হু করে, তেমনই অনেকে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসছেন৷ কিন্তু এসবের মাঝেই স্তব্ধ হয়ে রয়েছে দেশের স্বাভাবিক ছন্দ৷ কারণ দেশজুড়ে চলছে লকডাউন৷ প্রসঙ্গত, গত ২৪ মার্চ ২১ দিনের দেশব্যাপী ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়৷ এরপর তা ফের ৩মে পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়৷
মারণ ভাইরাসের চেন ভাঙতে লকডাউনে কড়াভাবে মেনে চলার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে৷ একস্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার ওপর রয়েছে বহু বিধি নিষেধ৷ আর এমতাবস্থায় দেশের স্বাভাবিক ছন্দে যে পতন আসবে তা বলাই বাহুল্য৷ এবং সমাজের ভিত্তি যে কৃষি, তা আজ সঙ্কটের মুখে৷ যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ কিন্তু কৃষিজ পণ্যের চাহিদা কম থাকায় একদিকে যেমন কৃষকদের রোজগারে ভাটা পড়েছে, তেমনই কৃষিকাজের ক্ষেত্রে জিনিসপত্রের যোগানেও সমস্যা দেখা দিয়েছে৷
মোরাদাবাদে কৃষিক্ষেত্রে যাতে কোনওরকম বাধা না আসে তার জন্য ইন্ডিয়ান রেলওয়েজ মোরাদাবাদে পৌঁছে দিল সার৷ এক সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, ভারতীয় রেল, মালবাহী ট্রেনে ২৫,৫৮৮ টন সার মোরাদাবাদে পৌঁছে দেয় কৃষকদের জন্য৷
ওই সংবাদ সংস্থাকে এক ভারতীয় রেল আধিকারিক জানিয়েছেন, কৃষকদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় কৃষিকাজে তার জন্য সার-সহ মালবাহী ট্রেনে সব ধরণের উপকরণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে৷ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে তা কৃষকদের কাছে পৌঁছে যাবে৷ তিনি আরও জানিয়েছেন, মালবাহী ট্রেন থেকে এই সব জিনিস নামানোর সময়ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা হচ্ছে৷
সম্প্রতি, ভারতীয় রেল প্রয়োজনীয় পণ্য-দ্রব্য, ফল, সবজি, দুধ, দুগ্ধজাত দ্রব্য, কৃষিজ পণ্য সরবরাহের জন্য বিশে ব্যবস্থা নিয়েছে৷ যার মাধ্যমে দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলিকে যুক্ত করে দ্রব্যাদি পৌঁছে দেওয়া যাবে৷ এর মধ্যে যেমন রয়েছে, দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, চেন্নাই, হায়দরাবাদ এবং বেঙ্গালুরু৷ এর পাশাপাশি জোর দেওয়া হয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতেও৷
এছাড়াও বিভিন্ন পরিবহণকারী ট্রেনের মাধ্যমে ভোপাল, এলাহাবাদ, দেরাদুন, বারানসী, আহমেদাবাদ, ভাদোদরা, রাঁচি, গোরখপুর, তিরুঅনন্তপুরম, সালেম, ওয়ারাঙ্গেল, বিজয়ওয়াড়া, বিশাখাপত্তনম, রৌরকেল্লা, বিলাসপুর, ভুসাওয়াল, টাটানগর, জয়পুর, ঝাঁসি, আগ্রা, নাসিক, নাগপুর, আকোলা, জলগাঁও, সুরাত, পুনে, রায়পুর, পাটনা, আসানসোল, কানুপর, জয়পুর, বিকানের, আজমেঢ়, গোয়ালিয়র, মথুরা, নেল্লোর, জব্বলপুর প্রভৃতি শহরগুলিকে দ্রব্যাদি পৌঁছে যাবে৷ কিছু কিছু স্থানে চাহিদা কম থাকলেও সেখানেও এই মালবাহী ট্রেন পৌঁছে যাবে বলে জানা যাচ্ছে৷
ইতিমধ্যেই কিছু অ্যাপের সাহায্যে অনলাইনে কৃষকদের কাছে দ্রব্যাদি পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের ফসল বাজারে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে৷ প্রসঙ্গত, ‘কিষাণ রথ’ মোবাইল অ্যাপের এর সাহায্যে পরিবহণের ক্ষেত্রে ৫ লক্ষ ট্রাক এবং ২০,০০০ ট্রাক্টরের পরিবহণ সংক্রান্ত সুযোগ পাওয়া যাবে অনলাইনে৷ কৃষিজ দ্রব্য এবং পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন এটি৷
এই নতুন মোবাইল অ্যাপের সাহায্যে বিভিন্ন ধরণের পরিবহণ সংক্রান্ত সুবিধা পাওয়া যাবে৷ প্রাথমিক ক্ষেত্রে কৃষক বা ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য স্থানীয় এলাকা থেকে আড়ত, মজুতঘরে পৌঁছে দিতে পারবেন এই অ্যাপের মাধ্যমে৷ দ্বিতীয়ত, এই কিষাণ অ্যাপের সাহায্যেই ফের এই সব স্থান থেকে কৃষিজ পণ্য ছড়িয়ে পড়বে অন্যত্র৷ রেফ্রিজেটরের সুবিধাও রয়েছে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে৷ হিন্দি ভাষার ব্যবহার এই অ্যাপে রাখা হয়েছে যাতে সহজে তা কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা বুঝতে সুবিধা হয়৷
আর এবার ভারতীয় রেলও প্রয়োজনীয় কৃষিজ দ্রব্যাদি কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় কৃষিক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ লকডাউন পিরিয়ডে কৃষিকাজে যাতে কোনও ধরণের ব্যাঘাত না ঘটে মূলত তার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে এবং কত দ্রুত এই সব পণ্য পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে৷
Barsha Chatterjee (barshachatterjee.news@gmail.com)
Share your comments