ভারতের ১২ টি রাজ্য জুড়ে এক হাজারেরও বেশি কৃষক পরিবার নিয়ে একটি সমীক্ষার প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, এই করোনা ভাইরাসের কারণে জারি হওয়া লকডাউনে যারা তাদের জমির ফসল কেটেছেন, তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ কৃষক ফলন হ্রাসের কথা জানিয়েছেন এবং তাদের দশ ভাগের এক অংশ গত মাসে (এপ্রিল-মে) ফসল কাটতে পর্যন্ত পারেননি। অর্ধেকেরও বেশি কৃষক জানিয়েছেন যে, লকডাউনের জন্য আসন্ন খারিফ মরশুমে তারা আগামী ফসলের বপনের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেননি। এই সমীক্ষায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং খামারের আকারের মধ্যে একটি খুব দৃঢ় সংযোগ পাওয়া গেছে, দেখা গেছে যে বিগত মাসে বড় কৃষকদের তুলনায় ১০ গুণ বেশি ভূমিহীন ও ক্ষুদ্র কৃষকরা একবেলার খাবার খেতে পারেননি।
ভারতের জনস্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন (PHFI), হার্ভার্ড টি এইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথ এবং সেন্টার অফ সাস্টেনেবেলএগ্রিকালচার (CSA, হায়দ্রাবাদ) সম্প্রতি টেলিফোনের মাধ্যমে সমীক্ষাটি সম্পন্ন করেছে, যেটি ভারতের ২০০ জেলার ১৪২৯ টি কৃষি পরিবারকে নিয়ে করা হয়েছে। সমীক্ষাটি ৩ মে থেকে ১৫ মে-এর মধ্যে পরিচালিত হয়েছিল এবং এই একই পরিবারগুলিকে এখন থেকে আরো দুই মাস পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখা হবে।
অধ্যয়ন দলের এক প্রতিনিধি হার্ভার্ড টিএইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের সহকারী অধ্যাপক ডঃ লিন্ডে জ্যাকস বলেছেন যে প্রাথমিক গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্যগুলি "উদ্বেগজনক" তবে এই গবেষণাগুলিই পরবর্তী সময়ে আশার আলো দেখাতে পারে কারণ এই ধরণের গবেষণা গুলি থেকে প্রাপ্ত তথ্যই সাহায্য করবে সরকার তথা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলিকে সঠিক এবং সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যা প্রকৃত অর্থে কৃষক এবং খামার-শ্রমিকদের উপকার করতে পারে। তবে আবার আমাদের সামনে নতুন ফসল রোপণের মরশুম আসছে, সেই সময়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ডাঃ জ্যাকস আরো যোগ করেছেন যে "এই ধরণের অধ্যায়নমূলক গবেষণা গুলো সচরাচর কার্যকরী হতে সময় নেয় এবং সেই কারনেই এর থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলি উপযুক্ত নীতি নির্ধারক এবং সমাজ সেবা মূলক সংগঠন গুলির কাছে পৌঁছায়ও অনেক পরে। নীতি নির্ধারক এবং সমাজ সেবা মূলক সংগঠন গুলিই একমাত্র পারে এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সঠিক প্রয়োগ করতে। তবে এই কথা অনস্বীকার্য যে এই কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের নিজেদের মধ্যে থাকা এক অসাধারণ ক্ষমতার সাথে পরিচয় করিয়েছে, যে মানবজাতির কল্যানে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থেকেও ব্যক্তিগত ভাবে, জাতিগত ভাবে, দলগত ভাবে কিংবা সাংগঠনিক স্তর থেকে একই লক্ষ্যের লড়াইয়ে সমান অংশীদার হতে পারি। আশা রাখছি যে মহামারী পরবর্তী সময়েও আমাদের মধ্যে এই ক্ষমতা বিদ্যমান থাকবে।“
সমীক্ষা থেকে পাওয়া লকডাউনের প্রভাব -
- ১০% কৃষক গত মাসে তাদের ফসল কাটতে পারেননি এবং যারা ফসল কেটেছেন তাদের মধ্যে ৬০% কৃষক ফলন হ্রাসের কথা জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন যে এটি লকডাউন-সম্পর্কিত সমস্যা যেমন বাজারে চাহিদা পড়ে যাওয়ার ফলে ফসলের দাম কমে যাওয়া এবং যাতায়াতে বিধিনিষেধের ফলে তাদের জমি পৌঁছানোর অক্ষমতার কারণে হয়েছিল। বেশ কয়েকটি কৃষক তীব্র প্রতিকূল আবহাওয়া এবং জলের ঘাটতি বা সেচের অভাবের কথাও জানিয়েছেন, যা কৃষিক্ষেত্রে এক অবিরাম সমস্যা এবং মহামারীটি থাকা সত্ত্বেও পরবর্তী মরশুমগুলিতেও এই ধরণের জলবায়ু সংকটের সাথে কৃষকদের মোকাবিলা করতে হবে।
- সমীক্ষাকৃত প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন কৃষক লকডাউনের কারণে তাদের ফসল বিক্রি করার পরিবর্তে সংরক্ষণ করেছেন বলে জানিয়েছেন এবং ১২% কৃষক এখনও তাদের ফসল বিক্রি করার চেষ্টা করছেন। ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক কৃষকরা বড় কৃষকদের তুলনায় তাদের ফসল বিক্রি করতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসমর্থ থেকেছে।
- ৫৬% কৃষক রিপোর্ট করেছেন যে এই লকডাউনটি আসন্ন বপন মরশুমের জন্য তাদের নিজেদের প্রস্তুত করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করেছে। বিশেষত, এর মধ্যে ৫০% বলেছেন যে তারা প্রয়োজনীয় কৃষি সরঞ্জাম বিশেষত বীজ এবং সার কিভাবে সরবরাহ করেন তা নিয়ে এবং ৩৮% কৃষক জমিতে শ্রমিকের সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।
সৈকত মান্না
Share your comments