দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আগেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক। উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে সমস্যা, ফসলের সঠিক মূল্য না পাওয়া এসকল সমস্যায় তারা জর্জরিত, এর উপর আবার ভারী বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিপাতের জেরে তাদের অনেকেরই ফসল এখন জলের তলায়।
পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্য প্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ – এই ছয়টি রাজ্যে বৃষ্টির ফলে শস্যের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক পরিমাণ এখনও জানা যায় নি। ভারতের খাদ্য দফতর আশা করেছিল, এ বছর রবি মরসুমে ৩৫ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হবে, গত বছর এই মরসুমে খাদ্যশস্য সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ৩৪ মিলিয়ন টন। কিন্তু বৃষ্টিপাতের জেরে বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, এই মরসুমে প্রত্যাশার চেয়ে খাদ্যশস্য সংগ্রহ কম হতে পারে।
সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার রাজ্যগুলিতে, প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে সেখানে প্রস্তুত গমের ফসল নষ্ট হতে বসেছে।
বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টিপাতের ফলে ভুট্টার ফসলের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে এবং প্রস্তুত হয়ে আসা ফসল লিচু ও আম-এরও ক্ষতি হয়েছে। রাজ্য সরকারের এক কর্মকর্তা বলেছেন, 'সীমাঞ্চল, কোসি এবং বিহারের উত্তরাংশে প্রায় ১০-১৫% গম ফসলের ক্ষতি হয়েছে’।
২৫ শে মার্চ থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের কারণে বেশিরভাগ রাজ্য শস্য সংগ্রহে বিলম্ব করেছে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং মধ্যপ্রদেশ ১৫ ই এপ্রিল থেকে সংগ্রহ শুরু করেছিল।
পাঞ্জাবের প্রধান সচিব (ফুড অ্যান্ড সিভিল সাপ্লাই) কেএপি সিনহা বলেছেন, ‘আর্দ্রতা শস্যের ক্ষতি করে, আর্দ্রতার ফলে গম এবং ভুট্টার গুণমান খারাপ হয়ে যায়, ফলে শস্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিলম্ব হয় এবং কৃষক মূল্যও কম পান। নির্ধারিত আর্দ্রতা ১২% -এর বেশি হলে শস্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিলম্ব হয়, কারণ প্রথমে শস্যটি শুকানো উচিত’। তিনি আরও জানিয়েছেন, দুটি জেলা - মোগা এবং ফিরোজপুরে শস্য ক্রয় স্থগিত করতে হয়েছে, কারণ আর্দ্রতার পরিমাণ নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে গেছে।
সকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিবেশী রাজ্য হরিয়ানাতে কর্নাল, কুরুক্ষেত্র, যমুনানগর ও কৈথাল জেলায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতির ফলে রবিবার সরকার ক্রয় বন্ধ করে দিয়েছে।
কর্নাল জেলার গম চাষী রঘুবীর সিং বলেছেন ‘বৃষ্টির কারণে ক্রেতা না থাকায় আমি আমার ফসল বিক্রি করতে পারিনি'। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বৃষ্টি থেকে শস্য রক্ষার কোনও ব্যবস্থা না থাকায় সংগ্রহ কার্য বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
মধ্য প্রদেশের সাগর জেলার বুন্দেলখণ্ডের ধনা গ্রামের কৃষক মুকেশ তিওয়ারি বলেছেন, “শরবতী (মিষ্টি) গমের জন্য ব্যবসায়ীরা ১,৯০০ থেকে ২,১০০ টাকার বেশি দাম দিতে চাইছেন না, কারণ অতি বৃষ্টির কারণে ফসল বর্ণহীন হয়ে গেছে। অথচ ২০১৯ সালে প্রতি কুইন্টাল ২,৭০০ টাকা দাম ছিল এই ফসলের”। এমনকি সরকার এখন গমের নিম্নমানের কথা উল্লেখ করে ফসল কিনতে অস্বীকার করেছে, বলে জানিয়েছেন তিনি।
সাগর জেলার জনকপুর গ্রামের আর এক কৃষক দেবকী নন্দন পান্ডে বলেন, তিনি সরকারী ক্রয়ের জন্য যাননি কারণ তিনি জানতেন যে আর্দ্রতার কারণে তার ফসল সরকার প্রত্যাখাত করবে।
এমপি-র কৃষক কল্যাণ ও কৃষি অধিদফতরের পরিচালক সঞ্জীব সিংহ বলেছেন: “আমরা গম ও অন্যান্য ফসল সংগ্রহের উপর বৃষ্টিপাতের প্রভাব সম্পর্কে সমগ্র রাজ্য থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি। রিপোর্ট আসার পরেই আমি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে সক্ষম হব”।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
Share your comments