
মহাত্মা গান্ধীর একটি পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর ভারত গড়ার স্বপ্ন ছিল এবং তিনি তাঁর জীবদ্দশায় বারবার এই বিষয়ের উপর জোর দিয়েছিলেন। দেশব্যাপী স্বাস্থ্যবিধি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণের জন্য "স্বচ্ছ ভারত মিশন"- আমাদের জাতির জনকের এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে এক বিশাল পদক্ষেপ। পরিচ্ছন্ন ভারত ও সবুজ ভারত হল একটি মুদ্রার দুটি দিক এবং মুদ্রাটি হল গ্রামীণ ভারতের সার্বিক ও দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন। গ্রীণ ইন্ডিয়া মিশন জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (এনএপিসিসি)-এর আটটি মিশনের অধীনে একটি জাতীয় মিশন। ভারত যে আজ পুরোপুরি পরিবেশ সুস্থ রাখার চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, এই মিশনটি তার স্বীকৃতি দিয়েছে।
নিজেদের স্বল্প অসুবিধা এড়ানোর প্রয়াসে আমরা পরিবেশবান্ধব ব্যাগগুলির চেয়ে সস্তা এবং সহজেই উপলব্ধ পলিথিন ব্যাগের বিকল্পটি বেছে নিয়েছি, ভুলে যাচ্ছি যে প্রতিটি সহজ পথই একটি পরিণতি সহ আসে। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত ৫00 বিলিয়ন থেকে এক ট্রিলিয়ন প্লাস্টিকের ব্যাগগুলি বাতাসে প্রচুর পরিমাণে কার্বন নির্গমন যুক্ত করে; এবং ব্যবহৃত এই ব্যাগগুলির মধ্যে অনেকগুলি অবশেষে নদী এবং মহাসাগরে প্রবেশ করে কয়েক হাজার প্রাণীকে মেরে ফেলে, সামুদ্রিক জীবনকে হত্যা করে এবং কোনো এক সময়ে আমাদের নিজস্ব খাদ্য শৃঙ্খলেরও ক্ষয়ক্ষতি করে। খারাপ জঞ্জাল এবং মাটির পক্ষে ক্ষতিকারক হওয়া ছাড়াও পরিতক্ত প্লাস্টিকগুলি প্রায়শই: ড্রেনগুলিতে আটকে শহরে ফ্ল্যাশ বন্যার কারণ সৃষ্টি করে। একটি পলিথিন ব্যাগ মাটির সাথে মিশতে এক হাজার বছরেরও বেশি সময় নিতে পারে। এটি পলিথিনের সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করে। আমাদের প্লাস্টিক ব্যবহারের খারাপ অভ্যাসের কারণে আমরা যেন আমাদের গ্রহকে প্লাস্টিকের কঠিন জালে ক্রমাগত জড়িয়ে ফেলছি। পলিথিন সমস্যার মারাত্মক প্রকোপকে উপলব্ধি করে বিশ্বের বিভিন্ন শহর ও দেশগুলি পলিথিনের ব্যবহারের উপর কর চাপিয়ে বা সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে এর ব্যবহারকে কমানোর চেষ্টা করছে। ভারতের ‘বাধ্যতামূলক প্যাকেজিং আইন’ এবং ‘একবার মাত্র ব্যবহারের প্লাস্টিক’ নিষিদ্ধ করার নীতি প্লাস্টিকের ব্যবহার কম করার দিকে একটি ভাল উদ্যোগ হিসাবে দেখা যেতে পারে।

ব্যারাকপুরস্থিত কেন্দ্রীয় পাট গবেষণা সংস্থা আইসিএআর-ক্রাইজাফ পাট, মেস্তা, ফ্ল্যাক্স, রেমী, সিসাল ও শণ পাটের মতো ছয়টি প্রাকৃতিক তন্তু ফসলের উপর গবেষণা ও প্রসার করার উদ্দেশ্যে নিরলস দায়িত্ববদ্ধ। এই প্রাকৃতিক তন্তুফসলগুলির বহুমুখী ব্যবহার আছে, এগুলি সম্পূর্ণরূপে জৈবপচনশীল ও কার্বন-নিরপেক্ষ এবং তুলনামূলকভাবে পলিথিনের একটি কমদামী বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায়, বলেছেন সংস্থার মাননীয় নির্দেশক ড: গৌরাঙ্গ কর। পাট গাছ পুনর্নবীকরণযোগ্য বায়োমাসের একটি বিশাল উত্স এবং বায়ুমণ্ডল থেকে কেবল ১২০ দিনের মধ্যে হেক্টর প্রতি ৩.৮০ টন কার্বন আবদ্ধ করে যা বৃক্ষের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। ইনস্টিটিউটের একজন প্রধান বিজ্ঞানী ড: এ. কে. সিংহ বলেছেন, পাট ফসল থেকে প্রতি হেক্টরে প্রায় ১৫ টন সবুজ পাতা ঝরে পড়ে যা মাটির উর্বরতার রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করে। শণ পাটকে সবুজ সার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং মাটিতে নাইট্রোজেনের প্রয়োজনীয়তা ৫0% হ্রাস করা যায় এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নাইট্রাস অক্সাইডের মাত্রা হ্রাস করার একটি সম্ভাবনাও থাকে। পাট, মেস্তা ও রেমীর বায়োমাস কাগজের মণ্ড তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, সুতরাং কাগজের মণ্ড তৈরির জন্য গাছের কাঠের ব্যবহার হ্রাস পাবে, ফলে অনেক গাছ কাটা থেকে বেঁচে যাবে। এর ফলে বন রক্ষা পাবে এবং সবুজ ভারত গঠনে সহায়তা হবে।পাট কাঠি জৈব জ্বালানী, কাঠকয়লা, মোটা কাগজ এবং টেকসই হার্ডবোর্ডের জন্য কাঠের বিকল্প হিসাবে একটি সস্তা উপকরণ হিসাবে কাজে লাগানো যায়। এর ফলেও কাঠের জন্য জঙ্গল কাটা কমে যাবে।
জৈবপচনশীল ধর্মের সাথে সাথে প্রাকৃতিক তন্তু দিয়ে তৈরী পণ্যগুলি পরিবেশের জন্য ১০০% নিরাপদ এবং আমাদের গ্রহ থেকে প্লাস্টিক প্রতিস্থাপনে অসাধারণ ভূমিকা পালন করবে বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ সুরক্ষা বিভাগের প্রধান ড: এস. শতপথী। আইসিএআর-ক্রাইজাফ দেশে উচ্চ ফলনশীল জাত এবং উপযুক্ত কৃষি-প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে, যা শুধু স্বাবলম্বী ভারত গড়ার জন্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে সহায়তা করবে তাই নয়, বরং উন্নত পাটজাত পণ্য রফতানির মাধ্যমে আরও বিদেশী মুদ্রা অর্জন করতে সাহায্যও করবে।
এইভাবে, আইসিএআর-ক্রাইজাফ জৈবপচনশীল প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার ও প্রসারের মাধ্যমে প্লাস্টিক প্রতিস্থাপন করে ‘‘পরিষ্কার ও সবুজ’’ ভারত গড়ার গান্ধীজীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বদ্ধপরিকর। আসুন আমরা সবাই প্রাকৃতিক তন্তুজাত পণ্য ব্যবহার করে আরও ভাল, স্বচ্ছ এবং সবুজ ভারতবর্ষ গড়ে তলার লক্ষ্যে একত্রে কাজ করি।
তথ্যসূত্র: আইসিএআর-ক্রাইজাফ (ICAR-CRIJAF), ব্যারাকপুর
ফটো ক্রেডিট: আইসিএআর-ক্রাইজাফ (ICAR-CRIJAF), ব্যারাকপুর
Share your comments