এই কোভিড -১৯ মহামারীর মধ্যেই, ভারতকে অন্য আরও এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই গ্রীষ্মে আফ্রিকার হর্ন অঞ্চল থেকে অগ্রসিত এক বিশাল পঙ্গপালের দল দক্ষিণ এশিয়ার কৃষিজমিগুলিতে আক্রমণ করবে।
এমত অবস্থায় ভারতকে “দ্বি-সম্মুখ যুদ্ধের”প্রস্তুতি নিতে হবে - একটি, যা কোভিড -১৯ সংক্রমণের বিরুদ্ধে চলছিলই এবং অন্যদিকে কৃষিজমিগুলিকে পঙ্গপালের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচিয়ে খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এই অন্য যুদ্ধ করতে হবে।
সরকারী সুত্র অনুসারে আফ্রিকার হর্ন থেকে শুরু করে যাত্রাপথে মরুভূমির পঙ্গপালের সাথে যুক্ত হয়ে প্রজননের মাধ্যমে এরা ক্রমাগত সংখ্যা বৃদ্ধি করবে। এই পঙ্গপালের একটি প্রবাহ ইয়েমেন, বাহারিন, কুয়েত, কাতার, ইরান, সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ভারতের উপর দিয়ে যেতে পারে এবং ভারতের পাঞ্জাবের, হারিয়ানা সহ ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের কৃষিজমিগুলিকে প্রভাবিত করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে ভারত মহাসাগরের উপর দিয়ে যাওয়ার আর একটি প্রবাহ সরাসরি উপদ্বীপয় ভারতের কৃষিজমিগুলিকে আক্রমণ করতে পারে এবং তারপরে বাংলাদেশের দিকে যেতে পারে। ভারত এই মুহূর্তে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছে কারণ এটি জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় একটি মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, একটি সাধারণ পঙ্গপাল ঝাঁকের ধ্বংসাত্মক শক্তি এক বর্গকিলোমিটার থেকে কয়েকশো বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে, যা এক কথায় খুবই ভয়াবহ। যদি ধরে নেওয়া যায় যে প্রতিটি ব্যক্তি প্রতিদিন ২.৩ কেজি খাবার গ্রহণ করে,তবে এক বর্গ কিলোমিটারের প্রবাহ, যা প্রায় ৪০০ লক্ষ পঙ্গপালের কাছাকাছি, একদিনে ৩৫,০০০ জনের মতো খাবার খেতে পারে।
২১শে এপ্রিলে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) দ্বারা প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আরও আগেই এই মারাত্মক চিত্র তুলে ধরেছিল। এটি সেই সময়ই অবগত করেছিল যে পূর্ব আফ্রিকা, ইয়েমেন এবং দক্ষিণ ইরানে বসন্তের সময়কালে প্রজননকারী মরুভূমির পঙ্গপাল আফ্রো-এশীয় অঞ্চলের খাদ্যশস্যের উপরে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলবে।
ইরান-ওমান উপসাগরের একটি বন্দর শহর, জাস্ক এবং পাশাপাশি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশ অঞ্চলে দুটি পৃথক পঙ্গপালের ঝাঁক একত্রীত হয়ে দ্বিমুখী প্রবাহ তৈরি করার এক সমূহ সম্ভাবনা আছে । পাকিস্তানের বেলুচিস্তান, সিন্ধু উপত্যকার পাশাপাশি পাঞ্জাবেও (পাকিস্তান অধ্যুষিত) প্রজনন ক্ষেত্র সনাক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি সামান্য কিছু প্রজনন ক্ষেত্র ভারতীয় সীমান্তের নিকটে দেখা গেছে। ভারত সরকার আশা করছে যে, পাকিস্তান সরকার তাদের দেশের সঙ্কট নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় পদক্ষেপ নেবে, যা ভারত এবং অন্যান্য সীমান্তবর্তী দেশে এই কৃষি সংকটের প্রভাবকে হ্রাস করতে পারে।
কৃষিক্ষেত্রে পঙ্গপাল সমস্যা জর্জরিত বেশিরভাগ দেশগুলি মূলত অর্গানোফসফেট রাসায়নিকের উপর নির্ভর করে এই পতঙ্গের বিরুদ্ধে লড়াই চালায়। যা মূলত যানবাহিত স্প্রেয়ারদের দ্বারা স্বল্প পরিমাণে উচ্চ ঘনত্বে প্রয়োগ করা হয়।
আফ্রো-এশীয় অঞ্চলে খাদ্য সুরক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এই পঙ্গপাল আক্রমণ যা এই কোভিড -১৯ মহামারী দ্বারা অর্থনৈতিক ধ্বংস এবং আয়ের অবক্ষয়কে আরও প্রভাবিত করবে বলেই বিশেষজ্ঞ মহল থেকে অবগত করা হচ্ছে। ১৯ শে মে, মঙ্গলবার জাতিসংঘের সুরক্ষা কাউন্সিলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড ব্যাসলি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে মহামারীটি এখন "ক্ষুধা রোগের মহামারী" হিসাবে সংক্রামিত হতে পারে।
তিনি আরও বলেছেন যে,”লকডাউন এবং তার প্রভাবে আগত অর্থনৈতিক মন্দা শ্রমজীবী-দরিদ্রদের মধ্যে আয়ের বড় ক্ষতি করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে… পর্যটন শিল্প সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে পড়েছে, যা ইথিয়পিয়া সহ অন্যান্য দেশগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, যেখানে এটি মোট আর্থিক রফতানির ৪৭% পর্যন্ত অবদান রাখে। দক্ষিণ সুদানের মতো স্বল্প আয়ের দেশে তেলের দাম ভেঙে পড়ার ফলে তাৎপর্য-পূর্ণভাবে প্রভাব ফেলবে, যেখানে মোট আর্থিক রফতানিতে ৯৮.৮% তেলের অবদান রয়েছে। এবং এই সমস্ত কারণে অবশ্যই দাতা দেশগুলির উপার্জন হ্রাস পাবে, তখন বিশ্বব্যাপী জীবন রক্ষায় যে সমস্ত বিদেশী শক্তি গুলি সহায়তা প্রদান করে তাদের ওপরে এর কতটা প্রভাব ফেলবে?"
মিঃ ব্যাসলি অনুমান করেছিল যে কোভিড-১৯ এর প্রভাবে আরও ১৩০০ লক্ষ মানুষকে অনাহারের প্রান্তে ঠেলে দেবে, চূড়ান্ত ক্ষুধার্তদের সংখ্যা বিশ্বব্যাপী মোট ২৬৫০ লক্ষে পৌঁছে দেবে।
সৈকত মান্না
Share your comments