কৃষিজাগরন ডেস্কঃ বঙ্গে যেমন ডিসেম্বরের শেষেও দেখা নেই শীতের।ঠিক তেমনি গাছ আছে কিন্তু দেখা নেই গাছির। বঙ্গে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খেজুরগাছ ‘কাটার’ও ধুম পড়ে যায় ।কিন্তু তবে খেজুরগাছ কেটে রস সংগ্রহে গাছির অভাব দেখা দিয়েছে। সংকট রয়েছে নতুন গাছি তৈরিতেও।
আর মাত্র ১০-১৫ দিন পরই রস সংগ্রহের কাজ শুরু হবে। খেজুরগাছ থেকে রস পাওয়ার জন্য গাছ তৈরি করাকে গাছিরা আঞ্চলিকভাবে ‘গাছ তোলা’ বলে থাকেন। কিন্তু গাছির অভাবে অনেক গাছ এখনও কাটাই হয়নি।গাছের মালিকরা আশঙ্কা চলতি মৌসুমে গাছি সংকটে সব গাছ কাটা যাবে না। ফলে খেজুর রসের জোগান অর্ধেকে নেমে আসতে পারে।
গাছির অভাবের কারন হিসাবে বিশেষজ্ঞদের মতামত,অনেকেই সময়ের সঙ্গে পেশা বদল করেছেন। কেউ বা বেঁচে নেই। ফলে পুরনো এই পেশা আর নতুন কাউকে ধরতে দেখা যাচ্ছে না।এছাড়া এই ব্যবসায় লাভের সম্ভবনা অনেক কম । তাই গ্রাম বাংলায় ধীরে ধীরে গাছির অভাব দেখা দিচ্ছে।ফলস্বরুপ রসের জোগানে অভাব দেখা দিচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ চাষের জমিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে জোড়া সিংহী!ভিডিও দেখে আতকে উঠলেন নেটজনতা
এক গাছ মালিক বলেন, শীতের সময় খেজুরের রস খেতে সকলের মন চায়। আজকের প্রজন্ম তো এই রস চেনেই না। তাই বাবা-মার থেকে শুনে তারা গ্রামে আসে। কিন্তু সবাইকে রস দেয়া সম্ভব নয়। কারণ এলাকার বেশির ভাগ গাছ কাটা যাচ্ছে না গাছির অভাবে।’
গত বছরের চেয়ে এবার গাছের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দ্বারা এক গবেষনায় এই তথ্য উঠে এসেছে। এই গবেষণায়, বিজ্ঞানীরা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) রেড লিস্টের ডেটা সহ নতুন মেশিন লার্নিং কৌশলের সাহায্য নিয়েছেন। এই গবেষণার ফলাফল নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে ।গবেষকরা এই গবেষণায় জানার চেষ্টা করেছেন কত প্রজাতির খেজুর গাছ বিলুপ্তির পথে রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী প্রায় ১,৮৮৯ টি খেজুর প্রজাতি গাছের উপর গবেষনা করে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন প্রায় ৫৬ শতাংশ গাছ বিলুপ্তির পথে রয়েছে। এই গাছের মধ্যে এমন ১,৩৮১ টি প্রজাতির গাছ রয়েছে যাদের সম্পর্কে কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুনঃ বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ! কি বলছে গবেষণা
এ প্রসঙ্গে, নদীয়া জেলার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রধান ডাঃ সামসুল হক আনসারী কৃষিজাগরনকে বলেন, “ এই রির্পোট সম্পর্কে আমি বিস্তারিত কিছু জানি না তবে,বাংলাতে খেজুর গাছ নিয়ে একটা বড় দিক রয়েছে চাষিদের।খেজুর থেকে গুড় তৈরি হয়।বিশেষ করে দেশি খেজুর যেগুলো বাংলাতে বেশি হয়।সেখান থেকে কমার্শিয়ালি গুড় তৈরি করে কৃষকরা। সেক্ষেত্রে যদি খেজুর গাছের পপুলেশান কমে যায়া বা বিলুপ্তি ঘটে তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই এটা কৃষকদের রুজিরোগারের সাথে সরাসরি জরিত,সেক্ষেত্রে একটা এফেক্ট তো পরবেই” ।
যদি খেজুর গাছের এই প্রজাতিগুলি বিলুপ্ত হয়ে যায় তবে শুধু পরিবেশের উপর নয়, খেজুরগাছের উপর নির্ভরশীল মানুষের উপরেও এর প্রভাব পরবে। গবেষকদের মতে, খেজুর গাছের সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন।
Share your comments