এসপিএনএফ-এর পদ্ধতিতে ক্ষতি অনেকটাই সামাল দেওয়া গিয়েছে -
শুরুটা ক্ষুদ্র হলেও প্রয়াসটা বৃহৎ এবং উপযোগী। হিমাচল প্রদেশের আপেল চাষীরা এখন ভরসা রাখছেন ন্যাচারাল ফার্মিং-এর ওপর। তাঁদের বাগান থেকে সরিয়ে ফেলতে চাইছেন রাসায়নিক ফার্টিলাইজার এবং কীটনাশক।
ইতিমধ্যেই সিমলার প্রায় ৪৭৫৪ জন আপেল চাষী ন্যাচারাল ফার্মিং-এর দিকে ঝুঁকেছেন। নিজেদের আপেল বাগানে তাঁরা প্রয়োগ করেছেন সুভাষ পালেকার ন্যাচারাল ফার্মিং (এসপিএনএফ)-এর পদ্ধতি। হিমাচল প্রদেশের প্রায় ৭০ শতাংশ চাষীদের মধ্যে এঁনারা পড়েন। শুধু তাই নয়, শেষ তিন বছরের হিসেবে এঁদের জমির পরিমাণও চমকে দেওয়ার মতো। ৩৪৫.৩৩২ হেক্টর। তাই আপেল চাষে পরিবর্তনটা যে বেশ জোরালো হতে চলেছে, তা বলা যেতেই পারে। এখনও পর্যন্ত এসপিএনএফ-এর পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন ৬৭০০ চাষী।
‘প্রাকৃতিক ক্ষেতি খুশাল কিষাণ’-এর স্টেট প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টিং ইউনিট-এর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চাষীরা ইতিমধ্যেই ন্যাচারাল ফার্মিং-এর ফলাফলে খুশি। ন্যাচারাল ফার্মিং-এর জন্য আপেলের সওদাও হচ্ছে বেশ ভালো দামে। কোনও রকম সার্টিফিকেশন ছাড়া বিভিন্ন লিঙ্ক-আপ মারফত। যার জন্য হিমাচলে চাষীদের ন্যাচারাল ফার্মিং-এর ব্যাপারে উৎসাহও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
ন্যাচারাল ফার্মিং-এ শ্রমিক সমস্যা কমেছে -
প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে লাভের পরিমাণও বেশি দেখছেন আপেল ব্যবসায়ীরা। কারণ মানুষ এখন পুষ্টিদায়ক খাদ্যকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। ন্যাচারাল ফার্মিং-এ কোনও রকম রাসায়নিক স্প্রে বা সার ব্যবহার করা হয় না। খাটনিও অনেক কম। কিন্তু মুনাফা অনেকটাই বেশি।
হিমাচল প্রদেশে আপেল চাষে শ্রমিক পাওয়া ক্রমশ দুষ্কর হয়ে উঠছিল। এদিকে বাগানে শ্রমিক না থাকলে চাষেরও ক্ষতি হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ন্যাচারাল ফার্মিং-এ আলাদা করে বেশি শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা অনেক কম। ন্যাচারাল ফার্মিং-এর ফলে শ্রমিক সমস্যা প্রায় ৬১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
সাধারণত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে হিমাচল প্রদেশের আপেলে ছেয়ে যায় বাজার। হিমাচলের আপেল বাজারে ৪০০০-৪৫০০ কোটি টাকার মুনাফা করে। প্রায় দেড় লক্ষ পরিবার আপেল চাষের সঙ্গে যুক্ত। একা সিমলাই হিমাচল প্রদেশের ৭০ শতাংশ আপেলের চাষ করে। কুল্লু এবং কিন্নাউরও এর সঙ্গে যোগদান করে। প্রায় ১.২৫ হেক্টরের ওপর আপেল বাগান রয়েছে গোটা হিমাচল প্রদেশ জুড়ে। রাজ্য ভারতে আপেল চাষের পেছনে ৩০-৪০ শতাংশ বিনিয়োগ করে, যা প্রায় ৫০ শতাংশ উৎপাদনে সাহায্য করে। হিমাচল প্রদেশে আপেলের ভালো উৎপাদনের অর্থ চার কোটি আপেল বাক্স তৈরি হওয়া। এক একটি বাক্সে থাকে ২০-২২ কিলো আপেল।
এসপিএনএফ-এর পদ্ধতিতে ক্ষতি অনেকটাই সামাল দেওয়া গিয়েছে -
হর্টিকালচার বিশেষজ্ঞ এবং হর্টিকালচারের প্রাক্তন জয়েন্ট ডিরেক্টর ডঃ এসপি ভরদ্বাজ এবং ইউনিভার্সিটি অফ হর্টিকালচার অ্যান্ড ফরেস্ট্রি, সোলানের ডঃ ওয়াইএস পারমার জানিয়েছেন, এ বছর বেশ খানিকটা লোকসানের মুখেই পড়তে হয় আপেল চাষীদের। ফুল হওয়ার সময় এ বছর হিমাচল প্রদেশে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল অনেকটাই। ফলে ফলন অনেকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও ৩৭ বছর পর আপেল স্কাব নামের এক রোগও বাগানগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে ফলন এবং আপেলের মানে অনেকটাই প্রভাব পড়ে। যদিও ‘প্রাকৃতিক ক্ষেতি কুশল কিষাণ’ যোজনার প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টিং ইউনিটের তথ্য কিন্তু অন্য কথা বলছে। এসপিএনএফ-এর পদ্ধতি যেখানে প্রয়োগ করা হয়েছিল, সেখানে স্কাবের প্রভাব কিন্তু কম।
স্কাবের প্রভাব আপেলের পাতা এবং ফলে ৯.২ শতাংশ। কিন্তু এসপিএনএফ-এর পরিচালিত বাগানে এর প্রভাব মাত্র ২.১ শতাংশ। কেমিক্যাল ফার্মিং-এর ক্ষেত্রে আপেলের পাতায় স্কাবের প্রভাব ১৪.২ শতাংশ এবং ফলে ৯.২ শতাংশ। হঠাৎ করে পাতা পড়তে থাকলে স্কাবের প্রভাব বাড়তে পারে ১৮ শতাংশ।
প্রশিক্ষণের ওপর জোর -
প্রাকৃতিক ক্ষেতি কুশল কিষাণ যোজনা-এর এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর ডঃ রাজেশ্বর চান্দেল জানিয়েছেন, হিমাচল প্রদেশের আপেল চাষীদের বিভিন্ন পর্যায়ে এসপিএনএফ-এর প্রক্রিয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই এই পদ্ধতি অনুসরণ করায় আপেল চাষেও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৫৪০০০ চাষী ন্যাচারাল ফার্মিং প্র্যাক্টিস (এসপিএনএফ) যোগদান করেছেন এবং ৭০০০০ চাষীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
ত্রয়ী মুখার্জী
Image source - Google
Related link - (Chrysanthemum flower cultivation) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চাষ করে উপার্জন করুন অধিক অর্থ
(White sandalwood) শ্বেত চন্দন চাষ করে কৃষক উপার্জন করতে পারেন ৬০ লাখ থেকে ১ কোটি পর্যন্ত