ডিজেলের বাড়তি দামে ধান চাষে কৃষকদের খরচ বাড়বে ৩২ কোটিবোরো চাষে অতিরিক্ত ৩২ কোটি টাকা খরচ গুনতে হচ্ছে কৃষকদের । গত বছর প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ছিল ৭০ টাকা । কিন্তু এবার তা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা লিটার । ফলে গভীর ও অগভীর নলকূপের জল সেচ এবং পাওয়ার টিলারে জমি চাষের খরচও বেড়ে গেছে ।
কৃষকরা বলছেন, ডিজেলসহ বাজরে সব জিনিসের দাম বেশি হলেও ফসলের দাম কম । তাই বাড়তি খরচ করে বোরো উৎপাদনের পর ধানের নায্য মূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছেন তারা । তবে উৎপাদন খরচ বাড়লেও ধানের সঠিক দাম নির্ধারণ করা গেলে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আশা কৃষি বিভাগের ।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে এবার ৬৯ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে । যা থেকে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ মেট্রিক টন । এরই মধ্যে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক জমিতে বোরো চাষ শেষ করেছেন কৃষকরা ।
জেলায় ডিজেল চালিত গভীর নলকূপ ১৪টি এবং অগভীর নলকূপ (শ্যালো মেশিন) রয়েছে ৩ হাজার ২৮৬টি । চলতি বোরো মৌসুমে ডিজেল চালিত গভীর এবং অগভীর নলকূপের অধীনে সাত হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ফসল চাষ হয় । এ পরিমাণ জমিতে সেচ দিতে ডিজেল তেল প্রয়োজন হয় ১৫ লাখ ৭৫ হাজার লিটার । লিটারে ১৫ টাকা দাম বাড়ায় জেলায় ডিজেল চালিত গভীর ও অগভীর নলকূপে বোরো চাষিদের ২ কোটি ৩৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে । আর বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপ রয়েছে ১ হাজার ৭৯৭টি এবং অগভীর নলকূপ রয়েছে ২ হাজার ২৬০টি ।
আরও পড়ুন ঃ লটকন চাষে আশার আলো দেখছেন কৃষকরা ,বাৎসরিক আয় প্রায় ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত
বিদ্যুতের দাম না বাড়লেও এবার বিদ্যুত চালিত সেচের দাম বাড়ানো হয়েছে প্রতি বিঘায় ৩০০ টাকা করে । এতে জেলায় বিদ্যুত চালিত সেচ যন্ত্রের আওতায় ৬২ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে কৃষকদের অতিরিক্ত সেচ খরচ গুনতে হচ্ছে ১৪ কোটি ৪ লাখ ৫৬ হাজার ২৫০ টাকা । বোরো চাষীরা জানান, বর্তমানে গরু-মহিষ দিয়ে জমি চাষ নেই বললেই চলে । দেশে প্রযুক্তিগত সুবিধা বেড়ে যাওয়ায় গরু-মহিষের হালের বদলে কলের লাঙ্গল বা পাওয়ার টিলার সেই স্থান দখল করেছে । জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র বলছে, জেলায় সাত হাজারের অধিক পাওয়ার টিলার আছে । এ সব পাওয়ার টিলার দিয়ে কৃষকরা জমি চাষ করেন ।
বোরো চাষীরা জানান, বোরো আবাদে জমির প্রকার ভেদে কোনো জমি ৩ চাষ আবার কোনোটি ৪ চাষ দিতে হয় । আর আলু তোলার পর ওই জমি ২ চাষ দিয়ে বোরো রোপন করা হয় । ডিজেল তেলের দাম বাড়ায় গত বছরের তুলনায় হাল চাষে এবার বিঘা প্রতি ৩০০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে কৃষকদের । বোরো জমি চাষে জেলায় ৬৯ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমি হাল চাষে কৃষকদের অতিরিক্ত ১৫ কোটি ৬২ লাখ ৬ হাজার ১০০ টাকা গুনতে হচ্ছে ।
আরও পড়্নঃ বারোমাসি পেয়ারা চাষ করে সফল দিনাজপুরের কৃষক
জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধারকি সতীঘাটা গ্রামের কৃষক তারেক হোসেন জানান, ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে খাল থেকে পানি তুলে ছয় বিঘা জমিতে এবার বোরো চাষ করছেন তিনি । যার মধ্যে তার নিজস্ব এক বিঘা আর পাঁচ বিঘা অন্য কৃষকের । গত বছর প্রতি বিঘা দুই হাজার টাকায় সেচ দিলেও তেলের দাম বেশি হওয়ায় এবার তিনি কৃষকদের তিন হাজার টাকা চুক্তিতে পানি সেচ দিচ্ছেন । ধারকি ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষক হবিবর রহমান বলেন, এবার জমিতে পানি সেচ ও চাষসহ সবকিছুর দাম বেশি । এক বিঘা জমিতে বোরো চাষ করতে খরচ পরছে ১৫ হাজারেরও বেশি ।
সতীঘাটা গ্রামের পাওয়ার টিলারের মালিক আলামিন বলেন,‘ডিজেল থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার তিনি বিঘাপ্রতি চাষ খরচ নিচ্ছেন এক হাজার ২০০ টাকা । গত বছর যার দাম ছিল ৮০০ টাকা ।’ক্ষেতলাল উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের বিদ্যুত চালিত গভীর নলকূপের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন,‘সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার প্রতিবিঘা জমিতে সেচ দিতে তারা কৃষকের কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা করে নিচ্ছেন।
’একই উপজেলার জিয়াপুর গ্রামের ডিজেল চালিত অগভীর নলকূপের মালিক বীরেন চন্দ্র জানান, গত বোরো মৌসুমের চেয়ে এবার ডিজেলের দাম বাড়ায় জমি চাষ ও পানি সেচের দাম বেড়েছে । বিঘা প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি । বিদ্যুৎ চালিত গভীর ও অগভীর নলকূপ মালিকরাও প্রতি বিঘায় পানি সেচের দাম বাড়িয়েছে একই হারে । তালশন গ্রামের এক কৃষক,‘বোরো চাষ করতে এবার তার বিঘা প্রতি অতিরিক্ত খরচ হয়েছে তিন হাজার টাকা । অনেক কষ্টে এবার ৩ বিঘা জমিতে বোরো লাগিয়েছেন তিনি । তবে তার আশঙ্কা ধানের দাম নিয়ে । তবে সরকার বেশি দামে ধান ক্রয় করলে কষ্টটা লাঘব হবে ।
Share your comments