খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রের জন্য জাতিসংঘ (FAO) অধিদফতরের মাধ্যমে প্রথম ‘ওয়ার্ল্ড মিল্ক ডে’ ২০০১ সালের ১ লা জুন পালিত হয়েছিল। শৈশবকাল থেকে দুধই আমাদের খাদ্যের এক প্রধান অঙ্গ হয়ে উঠেছে এবং সেই প্রাচীনকাল থেকেই ছোট থেকে বড় সকলে পুষ্টির জন্য আমরা দুধ পান করে থাকি। এই বছর আমাদের দেশে ওয়ার্ল্ড মিল্ক ডে-এর থিম "রেইস এ গ্লাস"। এই দিবসটি উদযাপনের প্রধান কারণ হ'ল দুধের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা এবং মানবদেহে দুধের ইতিবাচক প্রভাবগুলি সম্পর্কে আলোকপাত করা।
প্রথম থেকেই এই দিনটি পালনের একটি বিশেষ লক্ষ্য রয়েছে, তা হল অন্য পানীয়গুলির চেয়ে দুধের গুরুত্বের বিষয়টি সকলের কাছে প্রচার করা। দুধ এমন একটি পানীয়, যা আমাদের স্বাস্থ্যকে তাত্ক্ষণিকভাবে প্রভাবিত করে না ঠিকই, তবে প্রতিদিন এটি পান করলে পার্থক্য স্পষ্টই দেখতে পাই। বিশ্ব দুধ দিবসটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে উদযাপিত হয়।
দিনটি পালনের উদ্দেশ্য - এই দিনটিতে, বিভিন্ন সংস্থা দুধের অত্যন্ত পুষ্টিকর মান সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় দুধের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করে থাকেন। বিশ্বের কয়েকটি অংশে, বিশ্ব দুধ দিবসে ছোট বাচ্চাদের বিনামূল্যে দুধের প্যাকেট দেওয়া হয়ে থাকে। কিছু দেশ এই সংক্রান্ত এমন ইভেন্টের আয়োজন করে যেখানে বিভিন্ন মানুষ অংশগ্রহণ করেন এবং দুধের দীর্ঘমেয়াদী উপকার সম্পর্কে জানতে পারেন। বিগত বছর ভারতে ‘ওয়ার্ল্ড মিল্ক ডে’ –এর থিমটি ছিল, "দুধ পান করুন: আজ এবং প্রতিদিন"। ভারতীয়রা যাতে তাদের প্রতিদিনের ডায়েটে দুধকে একীভূত করে এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার দিকে এগিয়ে যায়, তা নিশ্চিত করার জন্য এটি করা হয়েছিল।
দুধের উপকারিতা:
হার্ট ভাল রাখে (Prevent Heart Disease): দুধ হার্টকে স্বাস্থ্যকর রাখতেও সহায়তা করে। দুধে পটাশিয়াম থাকে, যা রক্তচাপের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং রক্তনালীগুলিকে সুরক্ষা প্রদান করে। এটি হার্টজনিত রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। তবে মানুষের সীমিত পরিমাণে দুধ পান করা উচিত। কারণ এতে হাই কোলেস্টেরল এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা তাপজনিত অসুস্থতার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
ওজন হ্রাসে সহায়ক (Weight Loss): ডায়েটে দুধ রাখলে ওজন হ্রাসে তা সহায়তা করে। এটি স্থূল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কম করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত দুধ পান করলে ওবেসিটির সম্ভাবনা কম থাকে। দুধে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা দীর্ঘ সময়ের জন্য অতিরিক্ত ক্ষুধা অর্থাৎ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাদ্য গ্রহণ এড়াতে সহায়তা করে। এর সাথে সাথে দুধে ক্যালসিয়ামও রয়েছে, যা দেহে বিপাক ক্রিয়া বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি শক্তির যোগান দেয়।
ওয়ার্কআউটের পরে দুধ পান করুন (Drink Milk After Workout): দীর্ঘসময় কাজ করার পর অথবা ওয়ার্কআউটের পরে আমাদের শরীরে শক্তির ঘাটতি হয়। প্রতিদিন যদি বড় এক গ্লাস দুধ পান করা হয়, তবে শরীরে একসাথে অনেক পুষ্টির পাশাপাশি শক্তিও পাওয়া যায়। দুধ আমাদের শরীরে শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি করে। অন্যান্য সকল পানীয়ের চেয়ে এটি শ্রেষ্ঠ। প্রত্যহ রাত্রে দুধ পান করলে ঘুম ভালো হয়।
অস্থি মজবুত করে তোলে (Strengthen Bone): দুধে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এই সমস্ত উপাদান অস্থিকে মজবুত করে তোলে। গবেষণা অনুসারে দেখা গেছে, দুধ পান করলে বোন ফ্র্যাকচারের সম্ভাবনাও হ্রাস পায়। এটি আপনার দাঁতকেও শক্তিশালী করে তোলে।
চুল এবং ত্বকের জন্য ভাল (Hair & Skin Care): শরীরের পাশাপাশি রূপচর্চাতেও ব্যবহার করা হয় দুধ। আপনি যদি দুধ পান করতে পছন্দ না করেন, তবে এটি আপনি আপনার মুখের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য এবং চুলের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতেও ব্যবহার করতে পারেন। ফেসপ্যাকে অনেকেই বিভিন্ন উপায়ে দুধ ব্যবহার করে থাকেন। এটি মুখের ত্বককে কোমল করে তোলে। হেয়ার প্যাকে দুধের ব্যবহারে চুল মসৃণ এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
পরিশেষে বলা যায়, ২০ বছর আগে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) প্রথম ‘ওয়ার্ল্ড মিল্ক ডে’ উদযাপন করে। এই দিবসটি স্মরণে রাখার উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ব খাদ্য হিসাবে এবং দুগ্ধ খাতে দুধের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া। সেই সময় থেকে, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় পণ্যের উপকারিতা সারা বিশ্বে প্রচারিত হয়ে চলেছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়, বহু মানুষ দুধের ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, এর থেকেই তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। তাই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এর যথেষ্টই গুরুত্ব রয়েছে। আর পুষ্টির যোগান হিসেবে তো দুধ শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের জন্যই সুষম পানীয়। প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় রাখুন দুধ, শরীরের আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সৌন্দর্য দুই-ই থাকবে অটুট।