আলু শীতকালীন অর্থকরী ফসল। আলুর বৈচিত্র্যময় চাহিদা এবং অত্যন্ত লাভজনক চাষ হওয়ার কারণে কৃষকেরা এই চাষে বিশেষ আগ্রহী ও যত্নশীল। পশ্চিমবঙ্গে আলু চাষ প্রায় ৪.৬ লক্ষ হেক্টর জমিতে বিস্তৃত। হুগলি, বর্ধমান, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুর মূল আলু চাষকারী জেলা।
রাজ্যের এক কৃষক আলুর দীর্ঘ সংরক্ষণের জন্য ইতিমধ্যে বাড়ির মধ্যেই তৈরি করে ফেলছেন হিমঘর (Cold Storage)। দীর্ঘদিন ধরে আলুর সংরক্ষণ সম্ভব হলে কৃষকেরা এর ভালো দাম পেতে পারেন৷
আলু চাষি ঘনশ্যাম-এর মতে, দীর্ঘদিন আলু সংরক্ষণ করার জন্য তিনি বাড়িতেই হিমঘর তৈরি করেছেন৷ এই আলু চাষির অভিনব পদ্ধতি অন্যান্য কৃষককেও চাষে আর্থিক লাভে সহায়তা করবে। কীভাবে তৈরি করেছেন তিনি এই হিমঘর? চলুন জেনে নেওয়া যাক –
মাত্র ১২,০০০ টাকায় হিমঘর (Cold Storage) -
আলু চাষি ঘনশ্যাম বাব্য জানিয়েছেন, তিনি বাড়িতে মাটির থেকে কিছুটা উঁচুতে জালি দিয়ে আলু রাখার ব্যবস্থা করেছেন এবং ঘরটি ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা করেছেন ফ্যান রেখে৷
এই হিমঘর বা বাড়িতে তৈরি কোল্ড স্টোরেজটি (Home made Cold Storage) তৈরির জন্য ১২,০০০ টাকা মতো তার ব্যয় হয়েছে৷ তবে উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন হিমঘর অবশ্যই যথেষ্ট ব্যয়বহুল হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাড়িতে এই হিমঘর (Home made Cold Storage) তৈরির প্রচেষ্টা যেন অনেককেই নতুন পথ দেখাচ্ছে৷
হিমঘরে রাখার পূর্বে বীজশোধন (Purify the seeds before keeping them in the cold storage) -
আমাদের কৃষক বন্ধুদের অনেকেই আলু তোলার পর সেখান থেকে বাছাই করে স্টোরে রাখান এবং বীজ হিসেবে পরের বছর ব্যবহার করেন। তাদের কিন্তু কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে হবে। মাত্রা বিন্যাসের পর, কন্দগুলি পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিতে হবে, এরপর ১ শতাংশ ক্লোরিন দ্রবণে ডুবিয়ে আবার জলে ধুয়ে নিতে হবে। পরিষ্কার করা আলু ৩ শতাংশ বরিক অ্যাসিড দ্রবণে ২০ মিনিট ভিজিয়ে ছায়ায় শুকাতে হবে অথবা ৫ শতাংশ বরিক অ্যাসিড দ্রবণ আলু বীজে স্প্রে করা হয়, এতে বীজের উপরে যে সমস্ত রোগগজীবাণু থাকে, সেগুলি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
একই দ্রবণ ১৫-২০ বার ব্যবহার করা যাবে।উত্তম বায়ু চলাচলযোগ্য এমন চটের থলেতে বীজ আলু ভর্তি করা হয়। বস্তার লেবেলে 'POISONOUS' বলে উল্লেখ করতে হবে। বীজ সংরক্ষণের জন্য হিমঘরে পাঠাতে হবে। বীজ আলু রাখার বস্তাগুলিকে ২.৫ গ্রাম ম্যানকোজেব প্রতি লিটার জলের দ্রবণে ডুবিয়ে জীবাণু মুক্ত করতে হবে এবং ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে এবং সত্ত্বর হিমঘরে পাঠাতে হবে। দিনের তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর বেশী থাকলে বীজ আলুকে প্রারম্ভিক কক্ষে অথবা ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে। বীজ সংরক্ষণের জন্য হিমঘরের তাপমাত্রা ২-৪ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৯৫ শতাংশের বেশী থাকা জরুরী। বীজের বস্তাগুলিকে এমনভাবে রাখতে হবে যাতে ভালোভাবে বায়ু চলাচল করে এবং প্রয়োজনে বর্ষাকালে ঘুরিয়ে দিতে হবে।
এই আলু চাষির প্রচেষ্টা বর্তমানের কঠিন পরিস্থিতিতে অনেককেই যে আশার আলো দেখাতে পারবে তা বলাই বাহুল্য।