এ বছর বোরো ধান উৎপাদনে (Boro Paddy) রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ(Bangladesh) | এবার বোরো উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৫০৮ টন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। এছাড়া বিগত বছরগুলোর তুলনায় ফলনের পরিমাণও বেড়েছে। গত বছর দেশে বোরো ধানের জাতীয় গড় ফলন ছিল প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ৯৭ টন। এ বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২৯ টনে। অর্থাৎ হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বেড়েছে দশমিক ৩২ টন, যা গত বছরের তুলনায় ৮ দশমিক শূন্য শতাংশ বেশি।
কৃষি তথ্য(Agriculture information):
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এ বছর বোরোর উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ১১ লাখ টনেরও বেশি হয়েছে। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ টন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। এবার বোরোতে ২ কোটি ৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সব মিলিয়ে এ উৎপাদন দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, সব স্তরে যেকোনো মূল্যে বোরোতে উৎপাদন বাড়াতে কাজ হয়েছে। বীজ ও সার পেয়েছেন কৃষকরা। যৌথ উদ্যোগের ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে হাইব্রিডের আবাদ বেড়েছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এবার বোরোতে বেশি উৎপাদন হয়েছে।
কিভাবে এই সফলতা আসে?
এ বছর ধান কাটার শ্রমিক সঙ্কট অনেকটা কমিয়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার। তিন হাজার ২০ কোটি টাকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় অঞ্চলভেদে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে ধান কাটাসহ অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকদের দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন -Pearl Farming: মুক্ত চাষে সফল কৃষক মোয়াজ্জেম
সাধারণত, গত বছর ধান কাটতে কম্বাইন হারভেস্টার মাঠে নামানো হয়েছে ১ হাজার ২৪০টি। এ বছর ১ হাজার ৬৬৬টিসহ মোট ২ হাজার ৯০৬টি কম্বাইন হারভেস্টার মাঠে ধান কেটেছে। রিপারও চলছে মোট ৮৩৯টি, যা গত বছরের প্রায় দ্বিগুণ।
আবাদের পরিসংখ্যান(Boro farming):
সারাদেশে এ বছর ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ (Profitable paddy cultivation) হয়েছে। গত বছর বোরো ধান আবাদ হয় ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৪৭ হেক্টরে। অর্থাৎ এ বছর ১ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর বেশি আবাদ হয়েছে।
এদিকে এ বছর বেড়েছে উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষাবাদ। যেখানে গত বছর হাইব্রিড ধান চাষের জমির পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৮৬ হাজার হেক্টর, তা এ বছর বেড়ে হয়েছে ১২ লাখ ১৩ হাজার হেক্টর। অর্থাৎ ৩ লাখ ২৭ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে হাইব্রিড ধান আবাদ হয়েছে। হাইব্রিডের গড় ফলন এবার বেশি।
এছাড়া হাওরভুক্ত ৭টি জেলায় এ বছর বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ হেক্টর জমিতে, যা দেশের মোট আবাদের প্রায় ২০ শতাংশ। শুধু হাওরে বোরো আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে, যা মোট আবাদের প্রায় ৯.২৫ শতাংশ।
ফলন:
এই দেশে বহু বছর ধরে বোরো উৎপাদনের সিংহভাগই আসছে ‘ব্রি ধান ২৮’ এবং ‘ব্রি ধান ২৯’ থেকে। দুই যুগের বেশি পুরোনো এসব জাতের উৎপাদনশীলতা দিন দিন কমেই চলেছে। অন্যদিকে বাড়ছে নতুন নতুন রোগ-বালাইয়ের প্রকোপও। ফলে পুরোনো এসব জাতের বিকল্প হিসেবে নতুন নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষের চেষ্টা চলছে প্রতিনিয়ত। এ বছর সবচেয়ে আশা জাগানো নতুন জাত হিসেবে উঠে এসেছে ব্রি ধান ৮১। এছাড়া ব্রি ধান ৮৮, ‘ব্রি ধান ৮৯’, ‘ব্রি ধান ৯২’ ও ‘ব্রি ধান ৯৬’ পুরোনো জাতগুলোর তুলনায় পরীক্ষামূলক প্রদর্শনীতে দারুণ ফলন দিয়েছে।
কৃষিতে এহেন সাফল্য কৃষকদের প্রেরণা জুগিয়েছে | সাথে সফল কৃষকদের দেখে বোরো ধান চাষে আগ্রহ দেখিয়েছেন অনেকেই |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন -Sweet Lady Papaya Farming: সুইট লেডি পেঁপে চাষে এই কৃষক লাখ টাকা উপার্জন করেছেন
Share your comments