পশ্চিমবঙ্গের অনেক জায়গাতেই ফুলের চাষ হয়। ‘ক্ষীরাই’ অঞ্চল তো এখানে ফুলের উপত্যকা হিসাবে পরিচিত । রাজ্যের সমগ্র ফুলের চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশই এখানে চাষ হয়। রাজ্যে পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ছাড়াও, বাগনান, উলুবেড়িয়া, হুগলী, দক্ষিণ ২৪ পরগণা এবং রূপনারায়ণ নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলিতে সর্বোত্তম মানের পদ্ম উত্পাদন হয়। নদীর পলি পদ্ম চাষে সহায়তা করে। সাধারণত পদ্ম সম্পর্কে সবার ধারণা হ'ল, কাদা মাটিতে এই ফুল ফোটে। প্রকৃতপক্ষে, এর ফুলগুলি সাধারণ জমিতে বা জলাবদ্ধ জলে বৃদ্ধি পেতে পারে। এমনকি আপনি এটি সহজেই আপনার বাড়িতেও প্রয়োগ করতে পারেন। জলে বেড়ে ওঠা এই ফুলের কান্ড দীর্ঘাকার এবং সোজা।
পদ্ম ফুলের চাষ কৃষকদের জন্য আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। ব্যবসায়ের দৃষ্টিকোণ থেকে এটির জন্য বেশ চাহিদা রয়েছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, বিভিন্ন রাজ্যের কৃষক পদ্ম চাষে প্রগতিশীলতা দেখিয়েছেন।
উত্তর প্রদেশের মুরাদাবাদের কাঁথা এলাকায় মোদা তেহিয়া নামে একটি গ্রাম রয়েছে। এখানকার কৃষকরা পদ্ম চাষের জন্য পরিচিত। বাণিজ্যিকভাবে এই ফুলের চাষ করে এখানকার কৃষকদের অবস্থার উন্নতি ঘটেছে, তারা সম্পদশালী হয়ে উঠেছেন। দিল্লী, বেরিলি, আলীগড়, আগ্রা সহ বিভিন্ন অঞ্চলে এখানকার পদ্ম প্রেরণ করা হয়।
আমাদের রাজ্যে যে সকল অঞ্চলে পদ্ম চাষ হয়, সেখানে কিছু কৃষক রয়েছেন, যারা নিজেদের জলাভূমিতে পদ্মের চাষ করেন আর যাদের নিজেদের হ্রদ নেই চাষের জন্য, তারা অন্যের থেকে জলাভূমি চুক্তিবদ্ধভাবে নিয়ে সেখানে চাষ করেন। এখান থেকে পদ্ম ফুল রাজস্থান, পাঞ্জাব এবং হিমাচল প্রদেশ সহ অন্যান্য রাজ্যেও রফতানি করা হয়।
সর্বাধিক চাহিদার সময় -
এই কৃষকরা আমাদের জানিয়েছেন যে, পদ্মের চাহিদা সারাবছর থাকলেও উত্সবের সময় এর চাহিদা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পায়। বিশেষত নবরাত্রিতে এবং দুর্গা পূজার সময়ে এত বেশি লাভ হয়, যা সাধারণত অন্যান্য ফসলের থেকে পাওয়া মুনাফাকেও অতিক্রম করে। শুধু পদ্ম ফুলই নয়, এর পাতা আহার্য বস্তু রূপে বিক্রি হয়, সেখানেও তারা ভালো পরিমাণ টাকা পান বলে জানিয়েছেন। এ কারণেই এখানকার স্থানীয় কৃষকরা ধান ও গমের চেয়ে পদ্মকে প্রাধান্য দেন।
চাষ পদ্ধতি -
জুলাই-আগস্ট মাসে পদ্ম চাষ করা হয়।
বীজ থেকে বৃদ্ধি -
পদ্ম ফুল সাধারণত বিভিন্ন আকার এবং লাল, গোলাপী, হলুদ, সাদা ইত্যাদি বর্ণে উপলব্ধ। গাছগুলি বীজ বা কন্দ থেকে জন্মাতে পারে।
বীজ থেকে বৃদ্ধির জন্যে বীজগুলিকে উষ্ণ জলে রাখতে হবে, মনে রাখবেন, এই জলে যেন ক্লোরিন না থাকে এবং পদ্মের বীজ থেকে কন্দ না বের হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন অবশ্যই জল পরিবর্তন করতে হবে। কন্দ যেন জলে ভাসমান অবস্থায় থাকে এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায়। কন্দ বেরনোর পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা রোপণের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।
এর পাতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করলে উদ্ভিদ গভীর জলে রোপণের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। ছোট ধরণের পদ্মের জন্য মাটির উপরের অংশ থেকে কেবল ১ থেকে ৬ ইঞ্চি জল প্রয়োজন, তবে বড় জাতের গাছগুলিতে ১ মিটার পর্যন্ত জল প্রয়োজন হতে পারে।
এই সফল কৃষকরা জানিয়েছেন, তারা ২০ একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে পদ্মের চাষ করছেন এবং প্রচুর মুনাফা অর্জন করেছেন। তবে তারা চাষে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করেছিলেন। সেগুলি হল -
যদি বীজ থেকে আপনি পদ্মের চাষ করতে চান, তবে বর্ধনের প্রথম বছরটিতে নিষিক্ত করবেন না।
পদ্ম কন্দে ছ’টি পাতা ফোটার পরে সার দেওয়া শুরু করুন।
প্রতি তিন থেকে চার সপ্তাহ পরে সার প্রয়োগ করুন।
জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে সার দেওয়া বন্ধ করুন। এই সময়ে সার প্রয়োগ বন্ধ না করলে উদ্ভিদ সুপ্ততার জন্য প্রস্তুত হতে সক্ষম হবে না।
তরল কীটনাশকে যেহেতু পাতা পোড়ার সম্ভাবনা বেশি, তাই তরল কীটনাশক প্রয়োগ করবেন না।
খুব বেশি সার প্রয়োগ করলে পদ্মের পাতা জ্বলে যেতে পারে।
সার প্রয়োগের সময় এবং পরবর্তী সময়েও অবশ্যই উদ্ভিদটির যত্ন নেওয়া উচিত, নাহলে উদ্ভিদের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
মিলডিউ এবং রটিং রোধ করতে সহায়তা করার জন্য এগুলিকে লাইভ স্প্যাগনাম মশে সংরক্ষণ করুন।
এই সফল কৃষকদের দেখে অন্যান্য কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে পদ্ম চাষে এগিয়ে আসছেন। যে সকল কৃষকদের এ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নেই, তারা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে চাষ করতে পারেন। এই চাষে কৃষকদের উপার্জন বৃদ্ধির সুযোগ যথেষ্টই রয়েছে।
স্বপ্নম সেন
Share your comments