
হাওড়া জেলার আমতা-২ ব্লকের জাকির হুসেন হলেন তার এলাকার প্রগতিশীল কৃষক। তিনি জানিয়েছেন, তার পরিবারের আয়ের একমাত্র মাধ্যম কৃষিকাজ। তার ২২ বিঘা জমি (২.৯৩ হেক্টর) রয়েছে, যেখানে তিনি প্রথমদিকে ধান, আলু এবং অন্যান্য শাকসবজির চাষ করতেন। স্থানীয় এডিও অফিসের সহায়তায় তিনি রাজ্যের কৃষি বিভাগ এবং অন্যান্য সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত অনেক প্রশিক্ষণ কর্মসূচী, কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন। ফসলের সারের চাহিদা মেটাতে তিনি নিজ ঘরে প্রস্তুত জৈব সার/ভার্মি-কম্পোস্ট ইত্যাদি ব্যবহার করেন।
এই সফল কৃষক আমাদেরকে জানিয়েছেন, যখন তিনি অ্যালোভেরা চাষের লাভজনক দিক সম্পর্কে নিশ্চিত হন, তখন তিনি তা চাষের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার নরেন্দ্রপুর রাম কৃষ্ণ মিশন এবং পশ্চিমবঙ্গের শ্রীনিকেতন (জেলা বীরভূম) বিশ্বভারতী থেকে অ্যালোভেরার সাকার সংগ্রহ করেছিলেন। এক বছর চাষাবাদ করার পরে তিনি ভাল পরিমাণ মুনাফা অর্জন করেছেন। যাদরপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্র (সিআরডি) তাকে কৃষি প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রযুক্তিগত পরামর্শ দিয়েছে এবং পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক তিনি পণ্য ক্রয় করেছেন, তাই বিপণনে তার কার্যত কোন সমস্যা নেই।

ভবিষ্যতে তার নিজস্ব একটি কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাঠকদের উপকারের জন্য তাঁর গৃহীত চাষ পদ্ধতিটি এখানে উল্লেখ করা হল -
কৌশল –
- জমি প্রস্তুতি।
- শেষবার লাঙলের সময় প্রায় ৮ টন ভার্মি কম্পোস্ট / হেক্টর প্রয়োগ।
- কোনও সার বা রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়নি।
- ১/২ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট সাকার স্থাপনের পরে প্রয়োগ করা হয়েছিল।
- হাত দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করা হয়েছিল।
- যথাযথ নিকাশীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
- সেচ (বৃষ্টির সময় বাদে) প্রয়োজন বুঝে সরবরাহ করা হয়েছিল।
উদ্ভিদের সংখ্যা / হেক্টর ছিল ২৬২৫।
রোপণের ৮ মাস পরে ফসল কাটা শুরু হয়েছিল।
প্রথম বছরে তিনবার কাটিং করা হয়।
ফলন / হেক্টর পাতাগুলি ছিল ৩৯.৪ টন।
দ্বিতীয় বর্ষ থেকে পাঁচবার কাটিং করা হয়।
তিন বছরে কাটিং করা হয়।

তিন বছরে প্রতি হেক্টরে তার ফলন হয় আনুমানিক ১৭০.৬২ টন।
সময় |
টাকা (প্রতি হেক্টর) |
প্রথম বর্ষ |
২,২৫,০০০.০০ |
দ্বিতীয় বর্ষ |
৭৫.০০০ |
তৃতীয় বর্ষ |
৭৫,০০০ |
তিন বছরে সর্বমোট খরচ |
৩,৭৫,০০০.০০ |
আনুমানিক আয় |
২৫,৫৯,০০০.০০ |
এছাড়াও এই উদ্ভিদের সাকার বিক্রি করে প্রতি বছর প্রায় ৬৫,৬২৫ টাকা পেয়েছেন তিনি। ঔষধি গাছের বিপণন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, তিনি কোন রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন নি, তবে জৈব সার ব্যবহার করা হয়েছে। জৈব সারে তার জমিতে অ্যালোভেরার চাষ করে তিনি আজ লাখপতি।
স্বপ্নম সেন
Share your comments