
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার প্রায় অধিকাংশ গ্রামে কৃষকরা এক বিশেষ পদ্ধতিতে ধান চাষ করেছেন | এই পদ্ধতির ধান চাষকে (Rice Farming)কৃষিবিজ্ঞানের ভাষায় ‘রেটুন শস্য আবাদ’বলা হয়। বিশেষত, কেটে নেওয়া বোরো ক্ষেতের ধান গাছের গোড়া থেকে ধান উৎপাদন করে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন তারা | উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কৃষকদের কেটে নেওয়া বোরো ধানের গোড়া থেকে ধানের শীষ বের হয়েছে। সেগুলো পেকে গেছে। ধানের শীষ ছোট হলেও চিটা কম। এতে ধানের বাম্পার ফলন ভালো হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
কি বলছেন সফল কৃষকবন্ধু (Successful Farmers):
উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাগভাণ্ডার গ্রামের কৃষক আতাউর রহমান জানান, গত বোরো মৌসুমে আড়াই বিঘা জমিতে বি আর-২৮ ধান চাষ করেছিলেন তিনি। গত মে মাসের শুরুতে ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। এরপর ওই জমিতে পরে থাকা ধানগাছের মুড়ি (গোড়া) নষ্ট না করে পুনরায় ধান উৎপাদন করতে যত্ন নিয়েছেন এবং ধানগাছের গোড়া কাঁচা থাকায় দ্রুত নতুন কুশি বের হয়। তবে কোনো ধরনের সেচ ছাড়াই শুধু সামান্য পরিমাণে সার প্রয়োগ আর কয়েকবার কীটনাশক স্প্রে করে চাষকৃত এসব মুড়ি ধানের মাঝারি ফলন পেয়েছেন |
আরও পড়ুন - কৃষক কন্যা স্নেহ রানা ব্রিস্টল-এ ক্রিকেটে ইতিহাস তৈরী করেছেন
চরভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের কৃষক ইউনুছ আলী জানান, একই জমিতে ২ দিন আগে কেটে নেওয়া ধানগাছের গোড়া থেকে পুনরায় উৎপাদিত ধান কেটেছেন তিনি। এক বিঘা জমিতে ফলন পেয়েছেন প্রায় ৪ মণ। তিনি নিজেই শ্রম দিয়ে ৫ কেজি সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেছেন | এতে তার খরচ হয়েছে মাত্র ৩০০ টাকা। ফলে এই ৪ মণ ধানই বাড়তি লাভ হয়েছে তার |
কৃষি দপ্তরের মতামত:
ধানগাছের গোড়া (মুড়ি) থেকে ধানচাষের বিষয়ে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ও রোকনুজ্জামান জানান, ধানের মুড়ি থেকে আবার ধান চাষ করা যায়। বিশেষ করে ব্রি ধান-২৮ ও ২৯ ধানের গোড়া কাঁচা থাকে।
এসব ধান কাটার পর ধানগাছের মুড়ি থেকে কুশি বের হয়। আর এসব মুড়ি থেকে পুনরায় ধান উৎপাদন সম্ভব। এতে খরচ নেই বললেই চলে। চলতি বছর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের অনেক কৃষক কেটে নেওয়া বোরো ধানগাছের মুড়ি থেকে ধান চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন।
এ বিষয়ে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, এই পদ্ধতিতে ধান চাষ কৃষিবিজ্ঞানের ভাষায় ‘রেটুন শস্য আবাদ’ বলা হয়ে থাকে।
বিশেষ করে বোরো ধান কেটে নেওয়ার পর পরবর্তী আমন আবাদের জন্য প্রায় ২ মাস সময় পান কৃষকরা। ২ মাস সময়ের মধ্যে পড়ে থাকা পতিত জমিতে এই পদ্ধতিতে ধান চাষ করে কৃষকরা বাড়তি ফসল পেতে পারেন। এটি বেশি লাভজনক না হলেও যেসব কৃষক নিজে পরিশ্রম করেন, তারা একেবারে সীমিত খরচ করে একই জমিতে বাড়তি ফসল উৎপাদন করে লাভবান হতে পারবেন। এই পদ্ধতিতে ধান চাষ করে কৃষকদের লাভের এক মোটা অঙ্ক ঘরে ঢোকে |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Dragon Fruit Farming: ড্রাগন ফল চাষে ব্যাপক সাফল্য উত্তরবঙ্গের মহিলা কৃষকের
Share your comments