মাস্টার্স পাশ করা ইশাতিয়াকের স্বপ্ন ছিল চাকরি নয়, গ্রামীণ কৃষিব্যবস্থাকে উন্নত করে তোলা | পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বন্ধু কৃষিবিদ শাহদাতও | বাজারের ভেজাল সব্জি দেখে তারা সিদ্ধান্ত নেন সম্পূর্ণ বিষমুক্ত সব্জি উৎপাদনের | রাসায়নিক সার ও রাসায়নিক কীটনাশকমুক্ত ফল উৎপাদনের। বাড়ির পাশের নিজেদের পতিত প্রায় দেড় বিঘা এবং সামান্য কিছু লীজ নিয়ে স্বপ্ন বাস্তায়নে হাত লাগান দুই বন্ধু।
রমজানের চাহিদার কথা মাথায় রেখে তারা শুরু করেন শসা, বেগুন ও হলুদ তরমুজের চাষ। প্রায় এপ্রিলের মাজমাঝি ফলন আসা শুরু হয় | প্রায় ৭ শতাংশ জমিতে লাগানো শসা বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার টাকার | প্রতিদিন বেগুন বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকার। তরুণ ওই কৃষকের কথায়, তারা যে জমিতে ফার্ম গড়ে তুলেছিলেন, ফসল হতো না বলে তা পরে ছিল বছরের পর বছর | দুই বন্ধু জৈব পদ্ধতিতে চাষ শুরু করলে স্থানীয়রা তাদের পাগলও বলেছিলেন, এমনকি এতো পড়াশোনা করার পরে কৃষিকাজে আসায় অসন্তুষ্ট হয় পরিবারও | কিন্তু সেই জমিতে ফলন আসতে শুরু করে ও লাভ হওয়ায় সকলেই আজ তাদের থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন |
সব্জির চাষ (Vegetables Cultivation):
শাহাদাত হোসেন ও ইশতিয়াক মুনীমের এই ‘বায়ো গ্রিন এগ্রো ফার্ম’ টির দেখা মিলবে গাজীপুর শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ছোট দেওড়া এলাকায় | সব্জি বাগানটি দেখলে তাকে লেগে যাবে যে কারোর | শুধু শসা বা বেগুন নয়, রয়েছে ঢেঁড়শ, করলা, ঝিংগা, লাউ, মিষ্টি কুমড়ো, চিচিংগা ও ডাটা সহ সব সব্জিতে ঠাসা | তবে, তারা সবথেকে সাফল্য পেয়েছেন হলুদ তরমুজে | মাচার ফাঁকে ফাঁকে থরে থরে বেগুন, ঢেঁড়স, ডাটা, পেঁপে, পুই শাকের প্লট। মাত্র আড়াই মাসে এই দুই তরুণ পেয়েছেন অভাবনীয় সাফল্য |
আধুনিক মালচিং পদ্ধতি:
তাদের সাফল্যের পেছনে রয়েছে এই আধুনিক "মালচিং" পদ্ধতি (Malching Process) | এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়ও বটে | এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য বেড়া তৈরী করে মাটিতে এক ধরণের বিশেষ প্লাস্টিক কাগজ দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। নির্দিষ্ট দূরত্বে কাগজ ফুটো করে চারা লাগানো হয়। বিশেষ এ কাগজ মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও গুণগত মান ঠিক রাখে। সেচ কম লাগে এবং আগাছা জন্মাতে পারে না।
জৈব সারের প্রয়োগ (Organic fertilizer application):
প্রথম থেকেই তাদের লক্ষ্য ছিল রাসায়নিক নয়, জৈব সারের প্রয়োগ | কারণ, জৈব সার সক্ষমতা ধরে রাখে এক বছর। ফার্মে রাসয়নিক সার বা কীটনাশক তারা ব্যবহার করে না। সার, কীটনাশক সবই জৈব। পোকামাকড় মারতে তারা ব্যবহার করেন ফেরোমিন ফাঁদ প্রযুক্তি।
সঠিক বীজ নির্বাচন (Proper Seed Selection):
তাদের সাফল্যের পেছনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো বীজ নির্বাচন। সামার শট জাতের ঝিংগা, বারমাসী লাউ ময়না, পারপল কিং ও স্থানীয় চুমকি জাতের বেগুন, সুপ্রীম প্লাস জাতের শসা, ডায়না ও বারী-৪ জাতের বীজ বপণ করেন। এমনকি, লাউ বীজ মার্চের ১৫ তারিখে বপণ করার পর ২৮ দিনেই ফলন আসতে শুরু করে। মার্চের ১০ তারিখে হলুদ কুমড়োর বীজ রোপণ করার পর এপ্রিলের মাঝামাঝি ফল আসতে শুরু করে। মে’র প্রথম সপ্তাহে কাটা হবে ফল। ইতিমধ্যেই প্রায় প্রতিদিন হলুদ তরমুজের জন্য তাদের কাছে বুকিং আসছে |
আরও পড়ুন - মাছ চাষ করে লক্ষ টাকারও বেশী আয় করছেন পশ্চিমবঙ্গের এই যুবক, জানুন তাঁর সাফল্যের কাহিনী
তাদের সাফল্য দেখে আজ বেকার যুবক থেকে সাধারণ চাষীরা উৎসাহিত হচ্ছে | লেখাপড়া জানা মানুষ কৃষিকাজ করতে পারেনা, তারা এ ধারণা পাল্টাতে চান | ভবিষ্যতে একটি ‘কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন’ ও শিক্ষিত কৃষক সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন রয়েছে তাদের | বেকার যুবসমাজকে পড়াশোনা করেও যে কৃষিকাজে যোগ দেওয়া যায়, তা তুলে ধরার জন্য এই দুই যুবককে কৃষি জাগরণের পক্ষ থেকে কুর্নিশ |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - বার্ষিক আয় ৫ লক্ষ টাকা সব্জি চাষী ফয়েজের, জানুন তার সাফল্যের কৌশল
Share your comments