বালুরঘাটের তিন যুবক প্রদীপ স্বর্ণকার, লিটন বর্মন এবং বৈদ্য বর্মন স্বনির্ভরতার দিশা দেখাচ্ছে বেকার যুবকদের। তাদের ধান চাষে (Paddy farming) অভাবনীয় সাফল্য উৎসাহ যোগাচ্ছে চাষীদের এবং যুবকদের | মালচিং পদ্ধতিতে ধানের চারা তৈরি করে সাড়া ফেলে দিয়েছে বালুরঘাটের এই তিন যুবক। অল্প ব্যয়ে অতিরিক্ত চাষ করে ব্যাপক অর্থলাভ করছেন তারা | তাদের এই সাফল্যে কৃষি দপ্তরও সমানভাবে আশাবাদী |
তারা মালচিং পদ্ধতিতেই (Mulching method) বালুরঘাটের ডুমইর, বোয়ালদার-সহ চারটি এলাকায় ধানের চারা তৈরির করছেন। নিজেদেরও কিছু জমি ছিল তাদের ৷ কিন্তু তাতে চাষ করা সম্ভব ছিল না৷ তাই বাধ্য হয়ে কৃষকদের থেকে শর্তসাপেক্ষে কিছু পরিমাণ জমি নেন তারা ৷ অল্প জল ব্যবহার করে মালচিং পদ্ধতিতে ধানের চারা তৈরি করে চলছে চাষ।
কিভাবে মালচিং পদ্ধতিতে ধান চাষ হয় (Procedure of Mulching method):
প্রথমত, চিহ্নিত জমির উপর পাতলা প্লাস্টিক পেতে এক ইঞ্চি মাটি ফেলে সার মেশাতে হয় । এবার ঝরনা বা ঝাড়ি দিয়ে জল দেওয়া হয়৷ মাটিগুলি কাদা কাদা করা হয়। এরপর অঙ্কুরিত ধানের বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হয় ওই মাটিতে। ধানের বীজ ভেজা থাকতে থাকতেই হালকা গোবর সার মেশানো মাটি উপরে ঢেলে দিতে হবে ৷ সূর্যের আলো প্রবেশ করে এমন স্বচ্ছ বা হালকা প্লাস্টিক দিয়ে পুরো জমি মুড়ে ফেলতে হবে ৷ খেয়াল রাখতে হবে, যাতে ওই মাটিতে হাওয়া ঢুকতে না পারে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে মাটির ভিতরে যেন জল না শুকিয়ে যায়। প্রয়োজনে মাঝে মাঝে জলও দিতে হবে ৷ ২২ দিনের মাথায় জমি থেকে প্লাস্টিক তুলে নিতে হবে ৷ তিনদিন পর দেখা যাবে ধানের চারা৷ প্রায় ৪ ইঞ্চি লম্বা ওই চারা যন্ত্রের সাহায্যে কৃষকদের জমিতে বুনতে হবে । এই চারাতে একদিকে ব্যাপকভাবে ফলন বাড়বে আবার তেমনই চাষের খরচ কমবে অনেকটাই |
মালচিং পদ্ধতির উপকারীতা (Benefits of Mulching method):
ফসলের ক্ষেতে আর্দ্রতা সংরক্ষণে মালচিং পদ্ধতি বিশেষভাবে উপকারী | কারণ এ প্রযুক্তি ব্যবহারে ফসল ক্ষেতের জল সূর্যের তাপ ও বাতাসে দ্রুত উড়ে যায়না । ফলে জমিতে জলের ঘাটতি হয় না এবং অনেক কম সেচের প্রয়োজন হয় । সেচের খরচ বাঁচলে, কৃষকদের লাভও বাড়ে |মালচিং ব্যবহার করলে জমিতে প্রায় ১০ থেকে ২৫ ভাগ আর্দ্রতা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। মালচিং পদ্ধতি প্রয়োগে গাছের পোকামাকড় অনেকটাই রোধ করা সম্ভব |
মালচিং করার জন্য যেসব মালচ উপাদান ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলো জৈব ও অজৈব পদার্থ। উপাদানগুলো হলো-ধান বা গমের খড়, কচুরিপানা, গাছের পাতা, শুকনা ঘাস, কম্পোস্ট, ভালোভাবে পচানো রান্নাঘরের আবর্জনা ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এগুলি খুবই সহজলভ্য |উল্লেখ্য যে, মালচিং পদার্থের পুরুত্ব বেশি হলে তা গাছপালার অনাকাঙ্খিত মূল গজাতে সহায়তা করবে। এমনকি সঠিক মালচিং প্রয়োগে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের আক্রমণও রোধ করা যায়। মালচিংয়ের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদার্থ অবশ্যই ৫ সেন্টিমিটার (২ইঞ্চি) এর বেশি পুরু করে দেওয়া ঠিক নয়।
আরও পড়ুন - লাভজনক সবজি গাজর চাষ থেকে কৃষকবন্ধুদের অতিরিক্ত আয়
মালচিং পদ্ধতিতে দিশা দেখানো যুবক প্রদীপ স্বর্ণকার বলেন, ‘‘কৃষি দপ্তর গত বছর থেকে মালচিং পদ্ধতিতে এইভাবে চারা গাছ তৈরি করা শুরু করে। তারাও অংশ নিয়েছিলেন কৃষি দপ্তরের কাজে | সেখানেই তারা মালচিং পদ্ধতিতে ধানের চারা তৈরি শিখেছেন।’’ কৃষি দপ্তরের কথা অনুযায়ী, মালচিং পদ্ধতিতে ২৫ শতাংশ ফলন বেশি হবে। আবার চাষের খরচ অর্ধেক হয়ে যাবে। তাই এই তিন যুবক আজ চাষীভাইদের ও বেকার যুবকদের রোজগারের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - দ্বিগুন অর্থলাভে গ্রীষ্মকালে চাষ করুন পেঁপে
Share your comments