আমাদের দেশে প্রায় সব মাটিতেই বেগুন জন্মে থাকে। তবে বেগুন চাষের ক্ষেত্রে এটেল দো-আঁশ, দো-আঁশ ও পলি মাটিতে বেগুনের ফলন ভাল হয়ে থাকে। শীতকালে বেগুনের ফলন বেশি হয়ে থাকে।
চারা রোপণের সময় -
সাধারণত বেগুনের চারা মাঘ-ফাল্গুন মাসে গ্রীষ্মকালীন, বৈশাখ মাসে বর্ষাকালীন, ভাদ্র-আশ্বিন মাসে শীতকালীন ফসলের জন্য রোপণ করা হয়ে থাকে।
বেগুন চাষে অতিরিক্ত লাভের উপায় (Profitable Way Of Cultivation) -
বেগুন বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বোনা হয়। চারা রোপণের আগে মূল জমিতে ৪০ কুইন্টাল জৈব সার বা ২৫ কুইন্টাল কেঁচো সার, ১৫ কেজি নিম কোটেড ইউরিয়া, ৭৫ কেজি সি.সু.ফসফেট, ১০ কেজি মিউরেট অফ পটাশ মিশিয়ে বেড তৈরি করতে হবে। পলিমালচ্ -এর সহায়তায় চাষ করলে ফলন বেশী হয়।
পলিমালচ্ সহযোগে চাষ (Cultivation By Using Poly Mulch) –
বেগুন চাষে কৃষক যদি পলিমালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করেন, তবে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়, রোগ পোকার থেকেও ফসলকে সুরক্ষিত রাখা যায়। সাধারণত ২০ জি এস এম –এর পলিমালচ্ হলে ভালো হয়। বিভিন্ন কোম্পানির পলিমালচ্ বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। পলিমাল্চ-এর ফিল্মগুলি বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তৈরী করা হয়, যার উপরের দিকটি রুপোলী ও ভেতরের দিকটি কালো বর্ণের। বাইরের দিকের রুপোলী বর্ণ সূর্যের আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে বেগুন গাছের সালোকসংশ্লেষের মাত্রা বাড়িয়ে উদ্ভিদটির স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, এতে ফলন অনেক বেশী পাওয়া যায়। আবার কালো রঙের ভেতরের দিকটি মাটিতে প্রখর সূর্যরশ্মি প্রবেশ করতে না দেওয়ায় আগাছা একেবারেই জন্মাতে পারে না। তবে পলিমাল্চ বেডের জন্য ড্রিপ সেচ হল সর্বোৎকৃষ্ট। ড্রিপ সেচ না দিলে ঘন ঘন অল্প পরিমাণ জল সেচের জন্য প্রয়োজন।
এই পদ্ধতিতে চাষের জন্য বেডের উপর পলিমালচ্ বিছিয়ে দিতে হবে। এর পর পলিমালচে্ মাপ অনুযায়ী উদ্ভিদের এক সারি থেকে অপর সারির দূরত্ব অনুযায়ী ছিদ্র করে চারা বসাতে হবে। উঁচু বেডের মাঝের নিচু নালাগুলিতে অল্প পরিমাণে কিন্তু ঘন ঘন জলসেচ দেওয়া দরকার। এই পলিমালচ্ আগাছা নিয়ন্ত্রণের সাথে সাথে সুসংহত উপায়ে কীট দমনেও প্রভুত সাহায্য করে ফলে জৈব উপায়ে বেগুন উৎপাদন করতে সুবিধা হয়।
আরও পড়ুন - (Guava farmer success story) "আরকা কিরণ" এফ ১ জাতের পেয়ারা চাষ করে সফল কৃষক শ্রী কুমার
বেগুনের রোগ (Disease & Pest Management) -
বেগুনে ছত্রাকঘটিত রোগ, ফল ও গোড়া পচা রোগ, ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। এ সম্পর্কে চাষিদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি দপ্তর। অনেক সময় নিমাটোডের আক্রমণের কারণে বর্ষায় বেগুনের গোড়া ফুলে যায়। গাছের গোড়া ও ফল পচা রোগের কারণে চাষীরা তো প্রায় প্রতি বছর লোকসানের মুখে পড়েন। তাই এবার কৃষি দপ্তর এই রোগ সম্পর্কে চাষীদের আগাম সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। কৃষি দপ্তর জানিয়েছে, এই রোগের প্রকোপে বেগুনের গোড়া পচে গিয়ে গাছ মরে যায়। পরে পাতা হলদে হয়ে ঝরে পড়ে, ফুল-ফলও আশানুরূপ হয় না।
বেগুনে ফল, পাতা ও কাণ্ড ছিদ্রকারী এক ধরনের পোকারও উপদ্রব হয়। এই রোগ ও পোকা দমনের জন্য জলের মধ্যে কার্বেনডাজিম ও ম্যানকোজেবের মিশ্রণ গুলিয়ে বেগুন গাছে স্প্রে করতে হবে। কীটের আক্রমণে অনেক সময় উদ্ভিদটি মাটি থেকে জল ও সার শোষণ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে, ফলে গাছে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। এর প্রতিকারের জন্য এক লিটার জলে দেড় মিলিমিটার কার্বোসালফান গুলিয়ে বেগুন গাছে স্প্রে করলে দ্রুত ভালো ফল পাওয়া যায়।
২০ জি এস এম –এর পলিমাল্চ ব্যবহার করে চাকদহ, নদীয়ার কৃষক শ্রী অসীম মণ্ডল বেগুন চাষ করছেন, ড্রিপ সেচ ছাড়াই তিনি ব্যাপক ফলন পেয়েছেন। ভালো গুণমানের উৎপাদনের জন্য তিনি বেগুন বিক্রি করে ব্যাপক মুনাফা অর্জন করেছেন বলে জানিয়েছেন।
মালচিং পদ্ধতিতে চাষের সুবিধা -
-
মালচিং পদ্ধতিতে চাষে ব্যয় কম হয়।
-
মালচ্ দিয়ে চাষ করে তার নিড়েনের খরচা আশি শতাংশ কম লেগেছে।
-
রোগ-পোকার উপদ্রব আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
-
ফসলের গুনমানও পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
বেগুন পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের একটি অন্যতম মুখ্য সবজি যার চাহিদা সারাবছরই বাজারে রয়েছে। অনেক কৃষকই বেগুন চাষ করে ভালো অর্থ উপার্জন করছেন। প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে কৃষক বেগুন চাষ করতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গে একজন কৃষক বেগুন চাষে প্রতি একরে ১.৬ থেকে ১.৮ লক্ষ টাকা লাভ করতে পারেন
Share your comments