কৃষিজাগরন ডেস্কঃ স্টেভিয়া পৃথিবীর এক অত্যাশ্চর্য মিষ্টি গুল্ম জাতীয় ভেষজ গাছ। এ গাছ শত শত বছর ধরে প্যারাগুয়ের পাহাড়ি অঞ্চল রিওমন্ডে এলাকায় চাষাবাদ হতো। ১৮৮৭ সালে সুইজারল্যান্ডের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড. এমএস বার্টনি স্টেভিয়াকে প্রথম বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেন।
আমাদের কৃষিজাগরন ওয়েবসাইটে আমরা নিয়মিত কৃষকদের স্বার্থে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে কৃষকরা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।আজকে এই পর্বে আমরা স্টেভিয়া চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।
আফ্রিকাতে জন্মানো এক মিষ্টি গাছ স্টেভিয়া। শুধু আফ্রিকাতেই নয়, থাইল্যান্ডে, জাপান এবং ভারতবর্ষেও এই গাছ পাওয়া যায়। ব্রাজিল, কলম্বিয়া, পেরু, চীন, কোরিয়া, আমেরিকা, কানাডা, ইসরাইল, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায় এই গাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিনির বিকল্প হিসেবে এই পাতা ভীষণ উপকারী। এই গাছের পাতা সরাসরি চিবিয়ে খেতে পারেন কিংবা গুঁড়ো করে শুকনো করে চায়ের মত খেতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ বঙ্গে বাণিজ্যিক ভাবে আনারস চাষ সম্ভব ? সম্পূর্ণ পদ্ধতি জেনে নিন এখানে
ভারতের আবহাওয়ায় স্টেভিয়া চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কাছেপিঠে কোন নার্সারি থেকে এই গাছের চারা পেতে পারেন। এই গাছ চাষ করার জন্য সারাবছরই উপযুক্ত সময়।
স্টেভিয়ার চারা রোপণ করবেন কিভাবে?
স্টেভিয়ার বীজ ৭-৮ দিন গ্রীণ হাউসে রেখে গজিয়ে তারপর রোপণ করাই ভালো। টিস্যু কালচার চারা দিয়ে চাষ করা যায়। ব্র্যাক নার্সারী গাজীপুর বা আপনার নিকটের বিস্থস্ত কোন নার্সারী থেকে চারা কিনে চাষ করতে পারেন । তাছাড়া গাছের কাটিং বা শাখা কলম থেকে চাষ করা যায়। প্রতিশতকে প্রায় ৫০০ টি চারা লাগে। চারা থেকে চারার দুরত্ব ৬-৭ ইঞ্চি এবং লাইন থেকে লাইনের দুরত্ব ১৮-২০ ইঞ্চি হলে ভাল হয়।
স্টেভিয়ার বৈশিষ্ট
স্টেভিয়ার বৈজ্ঞানিক নাম Stevia rebaudiana এবং এটি Compositae পরিবারভুক্ত গাছ। গাছটি বহুবর্ষজীবী এবং ৬০ থেকে ৭৫ সেমি. পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতা আকার বর্ষাকৃতি, ফুল সাদা এবং বীজ ক্ষুদ্রকৃতি। স্টেভিয়া গাছের পাতার নির্যাস চিনির চেয়ে ২৫০ থেকে ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি।
আরও পড়ুনঃবিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান! কি এমন বৈশিষ্ট আছে? পড়ুন বিস্তারিত
স্টেভিয়ায় কোন সার ব্যবহার করবেন?
স্টেভিয়ার সারের চাহিদা তুলনামুলক কম। তারপরও মাটি পরীক্ষা করে প্রয়োজনমতো সার দিতে হবে। গোবর ও খৈল পর্যাপ্ত পরিমাণে দিতে হবে। তবে অনুমোদিত গড় মাত্রা হলো বিঘাপ্রতি ইউরিয়া-৩ কেজি, টিএসপি-৬ কেজি, এমপি- ৬ কেজি সারসহ অন্যান্য সার দিতে হবে।
স্টেভিয়ার জাত
পৃথিবীতে স্টেভিয়ার প্রায় ৯০টির মতো জাত আছে। এর বিভিন্ন জাত বিভিন্ন আবহাওয়ার জন্য উপযোগী। স্টেভিয়ার গুণাগুণ নির্ভর করে এর পাতায় বিদ্যমান স্টেভিওসাইডের ওপর।পাতায় স্টেভিওসাইড উৎপাদন একই সঙ্গে গাছের বয়স, জাত ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। স্টেভিয়ার বাণিজ্যিক জাতের পাতায় কমপক্ষে ১০ ভাগ স্টেভিওসাইড থাকতে হয়।
স্টেভিয়া চাষ পদ্ধতি
স্টেভিয়া বাণিজ্যিকভাবে সাধারণত বেডে চাষ করতে হয়। বেডের উচ্চতা হতে হবে কমপক্ষে ৬ ইঞ্চি। বেডে সারি থেকে সারি দূরত্ব হবে এক ফুট এবং সারিতে গাছ হতে গাছের দূরত্ব হবে ৬ ইঞ্চি। ৫ থেকে ৬টি চাষ দিয়ে জমিকে ভালোভাবে তৈরি করতে হবে। মই দিয়ে জমির ওপরের ঢেলা ভেঙে মিহি করে নিতে হবে।
দুভাবে স্টেভিয়ার বংশবৃদ্ধি করা যায়। প্রথমত টিস্যু কালচার পদ্ধতি এবং দ্বিতিয়ত স্টেম কাটিং পদ্ধতি। তবে টিস্যু কালচার সবচেয়ে ভালো ও লাভজনক পদ্ধতি। কারণ স্টেম কাটিং এ সফলতার হার খুবই কম এবং কাটিং এ শিকড় গজাতে অনেক বেশি সময় লাগে। বীজ থেকে চারা গজালেও অঙ্কুরোদগমনের হার থাকে খুবই কম।
আরও পড়ুনঃ স্টিভিয়া চাষের লাভজনক দিক
বিজ্ঞানীদের মতে, এই পাতা উচ্চরক্তচাপ ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। যকৃত ও প্লীহায় পুষ্টি সরবরাহ করে। ত্বকের ও দাঁতের ক্ষয়রোধসহ খাদ্য হজমে সহায়তা করে। চিনির বিকল্প হিসেবে সবাই খেতে পারেন। সম্পুর্ণ নিরাপদ। পাতা সবুজ ও শুকনো চিবিয়ে কিংবা চায়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। পাতা শুকিয়ে গুড়ো করে বোতলে সংরক্ষণ করা যায়। অনেকে পানের সঙ্গে মিষ্টি জর্দ্দার পরিবর্তে স্টেভিয়া গুড়ো করে ব্যবহার করেন।
Share your comments