পশ্চিমবঙ্গের কৃষি আবহাওয়া অঞ্চল ভিত্তিক তথ্য

ভারতবর্ষের প্রায় ৭০% মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই দেশের উন্নয়ন কৃষির উন্নতির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দেশের সপ্তম পরিকল্পনা কমিশন (১৯৮৫ - ৯০) কৃষির উন্নতির জন্য কৃষির মূল নিয়ন্ত্রক যেমন – জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি ও মৃত্তিকার উপর নির্ভর করে ভারতবর্ষকে ১৫টি প্রধান কৃষি জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছিল।

KJ Staff
KJ Staff

ভারতবর্ষের প্রায় ৭০% মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই দেশের উন্নয়ন কৃষির উন্নতির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দেশের সপ্তম পরিকল্পনা কমিশন (১৯৮৫ - ৯০) কৃষির উন্নতির জন্য কৃষির মূল নিয়ন্ত্রক যেমন – জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি ও মৃত্তিকার উপর নির্ভর করে ভারতবর্ষকে ১৫টি প্রধান কৃষি জলবায়ু অঞ্চলে (Agro-climatic region) ভাগ করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে জেলা হল সর্বকনিষ্ঠ একক (Lowest unit)। পরিকল্পনা কমিশন নির্ধারিত ভারতের এই ১৫ টি Agro-Climatic অঞ্চল হল –

  1. পশ্চিম হিমালয় অঞ্চল,
  2. পূর্ব হিমালয় অঞ্চল,
  3. নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল,
  4. মধ্য গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল,
  5. উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল,
  6. উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমির সংলগ্ন পশ্চিমের সমভূমি অঞ্চল,
  7. পূর্ব ভারতের মালভূমি ও পাহাড়,
  8. মধ্য ভারতের মালভূমি ও পাহাড়,
  9. পশ্চিম ভারতের মালভূমি ও পাহাড়,
  10. দক্ষিন ভারতের মালভূমি ও পাহাড়,
  11. পূর্ব উপকুলবর্তী সমভূমি ও পাহাড়,
  12. পশ্চিম উপকুলবর্তী সমভূমি ও পাহাড়,
  13. গুজরাটের সমভূমি ও পাহাড়,
  14. পশ্চিমের শুষ্ক অঞ্চল,
  15. দ্বীপ অঞ্চল।

এই ১৫ টি বৃহৎ অঞ্চলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে ২, ৩ ও ৭ নং অঞ্চলের অংশ বিশেষ। পশ্চিমবঙ্গকে মোট ৬ টি ছোট অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এই ৬ টি অঞ্চলের সর্বকনিষ্ঠ একক (Lowest unit) হল ব্লক বা পঞ্চায়েত সমিতি।পশ্চিমবঙ্গের ৬ টি Agro-Climatic অঞ্চল হল –

  • উত্তরে পাহাড়ি এলাকা বা পার্বত্য অঞ্চল,
  • তিস্তা – তরাই পলিমাটি অঞ্চল,
  • গাঙ্গেয় পলিমাটি অঞ্চল ,
  • বিন্ধ্য পলিমাটি অঞ্চল,
  • উপকূলবর্তী লবণাক্ত অঞ্চল,
  • তরঙ্গায়িত লাল কাঁকুরে অঞ্চল।

পশ্চিমবঙ্গের ৬ টি Agro-Climatic অঞ্চলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া  হল –

(১) উত্তরে পাহাড়ি এলাকা বা পার্বত্য অঞ্চল –

  1. প্রশাসনিক বিস্তৃতি – শিলিগুড়ি মহমুমা বাদে সমগ্র দার্জিলিং জেলা।
  2. ব্লক – দার্জিলিং-পুলবাজার, রাংলি-রঙ্গিত, সুখিয়াপোখরি, কালিম্পং – ১, কালিম্পং – ২, গরুবাথান, মিরিক, কার্সিয়াং।
  3. জমির পরিমান – ২.৯১৪ লক্ষ্য হেক্টর।
  4. মাটি – ব্রাউন ফরেস্ট ও তরাই মৃত্তিকা।
  5. বৃষ্টিপাতএর পরিমাণ – গড় – ৩০৫০ মিলিমিটার।
  6. গড় দৈনিক তাপমাত্রা (সর্বোচ্চ – সর্বনিম্ন) – ২৩ – ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  7. সর্বাধিক তাপমাত্রা – ২৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  8. সর্বনিম্ন তাপমাত্রা – ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উচ্চতা ও পাহাড়ের ঢাল অনুসারে তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে। উঁচু এলাকায় নভেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে মাঝে মাঝে ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসএর নিচে নেমে যায় ও তুষারপাতও ঘটে।
  9. গড় দৈনিক আপেক্ষিক আর্দ্রতা - ৮০-৮৫।
  10. প্রতিকূল আবহাওয়া জনিত দুর্যোগ – শৈতপ্রবাহ, তুষারপাত, ভারীবৃষ্টি ও ভূমিধ্বস।

(২) তিস্তা-তরাই পলিমাটি অঞ্চল –

  1. প্রশাসনিক বিস্তৃতি – জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, শিলিগুড়ি ও উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর মহকুমা।
  2. জমির পরিমান – ১২.০৭৯ লক্ষ হেক্টর।
  3. মাটি – তরাই ও তিস্তা পলিমাটি।
  4. বৃষ্টিপাতএর পরিমাণ – গড় – ৩১৪০ মিলিমিটার।
  5. গড় দৈনিক তাপমাত্রা (সর্বোচ্চ – সর্বনিম্ন)- ৩১ – ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  6. সর্বাধিক তাপমাত্রা – ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  7. সর্বনিম্ন তাপমাত্রা – ২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  8. গড় দৈনিক আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৫৮-৯১।
  9. প্রতিকূল আবহাওয়া জনিত দুর্যোগ – শৈত প্রবাহ, মৌসুমি ঋতুতে ভরী বৃষ্টি ও বন্যা দীর্ঘবৃষ্টি বিরতি ও খরা।

(৩) গাঙ্গেয় পলিমাটি অঞ্চল -                         

  1. প্রশাসনিক বিস্তৃতি – মালদার পশ্চিমাংশ, উত্তর দিনাজপুরের দক্ষিণাংশ, সমদ্য নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান , হুগলী জেলার পূর্বাংশ, হাওড়ার উত্তর পূর্বাংশ, বীরভূম, বাঁকুড়া , দুই মেদিনিপুরের বিশেষ অংশ, উত্তর ও দক্ষিণ ২৮ পরগণার উত্তরাংশ।
  2. জমির পরিমান – ১৮.৩০৭ লক্ষ হেক্টর।
  3. মাটি – গাঙ্গেয় পলিমাটি।
  4. বৃষ্টিপাতএর পরিমাণ – গড় – ১৫০০ মিলিমিটার
  5. গড় দৈনিক তাপমাত্রা (সর্বোচ্চ – সর্বনিম্ন)- ৩৩ – ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস
  6. সর্বাধিক তাপমাত্রা – ৪৬.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  7. সর্বনিম্ন তাপমাত্রা – ৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  8. গড় দৈনিক আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৫৭-৯৪
  9. প্রতিকূল আবহাওয়া জনিত দুর্যোগ – কোন কোন আংশে শৈত প্রবাহ ও তাপ প্রবাহ, কালবৈশাখীর ঝড় ও শিলাবৃষ্টি, খরা ও বন্যা।

(৪) বিন্ধ্য পলিমাটি অঞ্চল -

  1. প্রশাসনিক বিস্তৃতি – মুর্শিদাবাদ ও হুগলী জেলার পশ্চিমাংশ, বীরভূম ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পূর্বাংশ, বর্ধমান ও দুই মেদিনিপুর জেলার মধ্যাংশ, হাওড়ার উত্তরাংশ, বাঁকুড়া ও মালদা জেলার পূর্বাংশ।
  2. জমির পরিমাণ – ১৭৯২.৮ লক্ষ হেক্টর।
  3. মাটি – বিন্ধ্য পলিমাটি।
  4. বৃষ্টিপাতএর পরিমাণ – গড় – ১৪৭৫ মিলিমিটার।
  5. গড় দৈনিক তাপমাত্রা (সর্বোচ্চ – সর্বনিম্ন)- ৩১ – ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  6. সর্বাধিক তাপমাত্রা – ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  7. সর্বনিম্ন তাপমাত্রা – ৪.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  8. গড় দৈনিক আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৫৪-৯৪।
  9. প্রতিকূল আবহাওয়া জনিত দুর্যোগ – কোন কোন আংশে শৈত প্রবাহ ও তাপ প্রবাহ, বজ্রবিদ্যুৎ সহ কালবৈশাখীর ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও টর্নেডো, খরা ও বন্যা, দক্ষিনাংশে এপ্রিল – মে ও সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে এবং, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব।

(৫) উপকূলবর্তী লবণাক্ত অঞ্চল –

  1. প্রশাসনিক বিস্তৃতি – উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার দক্ষিণাংশ, পূর্ব মুদিনীপুরের দক্ষিণ পূর্বাংশ ও হাওড়ার দক্ষিণআংশ।
  2. ?জমির পরিমাণ – ১২.৭৭৯ লক্ষ হেক্টর।
  3. মাটি – লবণাক্ত পলিমাটি।
  4. বৃষ্টিপাতএর পরিমাণ – গড় – ১৭৪৫ মিলিমিটার।
  5. গড় দৈনিক তাপমাত্রা (সর্বোচ্চ – সর্বনিম্ন)- ৩১.২ – ২১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  6. সর্বাধিক তাপমাত্রা – ৪৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  7. সর্বনিম্ন তাপমাত্রা – ৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  8. গড় দৈনিক আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬১-৯৩।
  9. প্রতিকূল আবহাওয়া জনিত দুর্যোগ –গ্রীষ্মকালে কোন কোন অংশে বজ্রবিদ্যুৎ সহ কালবৈশাখীর ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও টর্নেডো, খরা ও বন্যা, দক্ষিনাংশে এপ্রিল – মে ও সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে এবং, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়।

(৬) তরঙ্গায়িত লাল কাঁকুরে অঞ্চল –

  1. প্রশাসনিক বিস্তৃতি – পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান ও দুই মেদিনিপুর জেলার পশ্চিমাংশ।
  2. জমির পরিমাণ – ১২.৭৭৯ লক্ষ হেক্টর।
  3. মাটি – লালমাটি।
  4. বৃষ্টিপাতএর পরিমাণ – গড় – ১৪১৫ মিলিমিটার।
  5. গড় দৈনিক তাপমাত্রা (সর্বোচ্চ – সর্বনিম্ন)- ৩৩ – ১৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  6. সর্বাধিক তাপমাত্রা – ৪৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  7. সর্বনিম্ন তাপমাত্রা – ৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  8. গড় দৈনিক আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৫৩-৮৬।
  9. প্রতিকূল আবহাওয়া জনিত দুর্যোগ – মার্চ থেকে জুনের প্রথমার্ধে উষ্ণ তাপপ্রবাহ, কালবৈশাখীর ঝড় ও শিলাবৃষ্টি, শীতকালে শৈত প্রবাহ, মৌসুমি  ঋতুতে দীর্ঘ বৃষ্টিবিরতি ও খরা, অক্টোবর ও নভেম্বরে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের প্রান্তিক প্রভাব।

রুনা নাথ,

কৃষি জাগরণ।

Published On: 09 August 2018, 03:48 AM English Summary: Agro Climatic regions of West Bengal

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters