সুগন্ধী ধানের রোগ –পোকা নিয়ন্ত্রণ করুন সহজ পদ্ধতিতে

সুগন্ধী ধান চাষে ছত্রাক জাতীয় রোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে বীজশোধন জরুরি, কারণ রাসায়নিক বিষ বেশী ব্যবহার করলে সুগন্ধী ধানের গন্ধ ও গুণমান খারাপ হয়ে যায়। তাছাড়া সুস্থ্য-সবল গাছে পোকার আক্রমণ কম হয় তাই কৃষি বিষের ব্যবহার কমাতে মাটি পরীক্ষা ও সুসম সার প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক পদক্ষেপ কৃষকবন্ধুদের জন্য।

KJ Staff
KJ Staff
Paddy Disease
Aromatic Disease (Image Credit - Google)

সুগন্ধী ধানের প্রধান কীটশত্রু হল মাজরা পোকা, পাতামোড়া পোকা, ভেঁপু পোকা ও বাদামী শোষক পোকা। সুগন্ধী ধান চাষে ছত্রাক জাতীয় রোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে বীজশোধন জরুরি, কারণ রাসায়নিক বিষ বেশী ব্যবহার করলে সুগন্ধী ধানের গন্ধ ও গুণমান খারাপ হয়ে যায়। তাছাড়া সুস্থ্য-সবল গাছে পোকার আক্রমণ কম হয় তাই কৃষি বিষের ব্যবহার কমাতে মাটি পরীক্ষা ও সুষম সার প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক পদক্ষেপ কৃষকবন্ধুদের জন্য।

সুগন্ধী ধানের কিছু রোগ ও পোকার বর্ণনা ও প্রতিকার ব্যবস্থা দেওয়া হল কৃষকবন্ধুদের সুবিধার্থে -

(১) মাজরা পোকা –

মাজরা পোকা সাধারণত পাশকাঠি পড়ার ও থোর ওঠার মুখে আক্রমণ করে। তবে পরে আক্রমণ হলে ক্ষতি বেশী হয়। মথ বা ডিম জমিতে দেখা গেলে জৈব বা যান্ত্রিক উপায়ে যেমন ফেরোমোন বা আলোক ফাঁদ ও ডিমের গাদা নষ্ট করে দমন করা ভালো, কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে রাসায়নিক বিষ বেশী ব্যবহার করলে সুগন্ধী ধানের গন্ধ ও গুণমান খারাপ হয়ে যায়।

তবে রাসায়নিক উপায়ে মাজরা পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ক্লোরানটিনিপোল ১.৫ মিলি প্রতি ৫ লিটার জলে গুলে বা কারটাপ হাইড্রোক্লোরাইড ১ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন। অথবা  ফিপ্রোনিল বা ট্রায়াজোফস ১ মিলি/লি. জলে আঠা সহযোগে স্প্রে করতে হবে।

(২) ভেঁপু পোকা –

বীজ দেরিতে বুনলে বীজতলায় ও মূলজমিতে ভেঁপু পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এই পোকার আক্রমণে ধান গাছের পাতা পেঁয়াজকলির মত হয়ে যায়। ধান রোয়ার ২০ দিনের মধ্যে যদি শতকরা ৫ টি পেঁয়াজকলির মত পাতা দেখা যায় তাহলে দানা ওষুধ যেমন ফোরেট ১০ জি ৪ কেজি বা কার্বোফুরান ৩ জি ১২ কেজি প্রয়োগ করতে হবে।

(৩) বাদামি শোষক পোকা –

বাদামি শোষক পোকা নিম্ফ ও পূর্ণাঙ্গ দশায় ক্ষতি করে। মূলত গাছের গোড়ায় এই পোকাগুলি দেখতে পাওয়া যায়। এদের আক্রমণে ধান গাছের রং হালকা সবুজ ও পরে শুকিয়ে খরের মত হয়ে যায়। ভাদ্রের মাঝামাঝি আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় বলে এই সময় বার বার জমি পরিদর্শন করতে হবে। রোয়ার সময় দূরত্ব বেশী রাখলে  বিভিন্ন পরজীবী বন্ধু পোকা যেমন – মাকড়সা, মিরিড বাগ, ওয়াটার বাগ এদের খেয়ে ফেলে বাদামি শোষক পোকা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

১৫ টি গুছির পর পর ৩টি গুছিতে ১০ টির বেশী বাদামি শোষক পোকা থাকলে রাসায়নিক কৃষিবিষ যেমন অ্যাসিফেট ০.৭৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে প্রয়োগ করতে হবে।

(৪) ধানের শীষকাটা লেদা পোকা (মাইথিনা সেপারেটা) –

এই লেদা পোকা ১-১.৫ ইঞ্চি আকারে কালচে রঙের হয়। ধান পাকার পর রাতে শীষের নিচ থেকে কেটে মাটিতে এদের বাসস্থানে নিয়ে যায়।

বিকালের দিকে ওষুধ প্রয়োগ কার্যকরী। অ্যাসিফেট + ফেনভেলারেট ১.৫ মিলি বা প্রোফেনোফস + সাইফারমেথ্রিন ১ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে। আর মাঠে স্থানে স্থানে মাটির খুড়িতে গুড়ের দ্রবনে গন্ধহীন কীটনাশক দিয়ে বিষটোপ দিলে আরো কার্যকরী ফল পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন - কার্প জাতীয় মাছের কম্পোজিট ফার্মিং এ সরপুঁটি মাছের চাষে বাড়তি লাভ

(৫) ধানের বাদামী দাগ রোগ বা বাদামী চিটে (কোচিলোবোলাস মিরাবিয়ানাস )-

এই রোগ ধানের চারায়, পাতায় আবার পরিণত দানাতেও হয়। ছত্রাক জনিত এই রোগে  বাদামী ছোট তিলের আকৃতির দাগ পড়ে। বড় দাগ গুলির মধ্যভাগ একটু ছাই বা কমলা রঙেরও হয়। চারাতে আক্রমণে চারা নষ্ট হয় ও পরবর্তীতে ধান চিটে হয়। রোগাক্রান্ত ধানের ভাত তিতো হয়।

প্রতিকার - 

ট্রাইসাইক্লাজোল বা আইসোপ্রোথিওলেন ১মিলি প্রতি লিটার জলে আঠা দিয়ে স্প্রে করতে হবে।

(৬) ঝলসা রোগ -

ঝলসা রোগ পাতা, কান্ডে, শীষে ও দানায় দেখা যায়। এটি ছত্রাক ঘটিত রোগ। এর জীবাণু বীজ ও বায়ু বাহিত। বাদামি রঙের দাগ প্রথমে পাতায় দেখা যায়, পরে দাগ মাকু আকৃতির হয় ও দাগের মাঝখানটা ছাই রং ও কিনারায় বাদামি বা লাল রং হয়। পরে পাতা শুকিয়ে যায়। শীষে ঝলসা হলে শীষের গোড়ায় কালো দাগ দেখা যায়।

ঝলসা রোগের প্রতিকার - 

  • বীজতলায় ঝলসা রোগের জৈব উপায়ে নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ও সিউডোমোনাস দ্রবণ স্প্রে করা দরকার। ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ও সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ব্যবহার করলে গাছের বৃদ্ধি তাড়াতাড়ি হবে, ফুল তাড়াতাড়ি আসবে ও ছত্রাক ঘটিত রোগ কম হবে।

  • রাসায়নিক উপায়ে দমনের জন্য কাসুগামাইসিন ২ মিলি / লিটার বা জিনেব + হেক্সাকোনাজোল ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে আঠা সহযোগে স্প্রে করুন।

  • ঝলসা, বাদামী চিটে ও খোলাপচা রোগে ট্রাইসাইক্লাজোল ১/২ গ্রাম/লি. জলে আঠা সহযোগে স্প্রে করতে হবে।

আরও পড়ুন - মাছের ক্ষত রোগ কীভাবে পরিচর্যা করবেন

Published On: 08 May 2021, 02:34 AM English Summary: Aromatic rice disease - control insects in an easy way

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters