
গোটা বাংলার মানুষের কাছে শিম একটি জনপ্রিয় সবজি। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই সবজির রয়েছে। লতাজাতীয় এই গুল্ম পেকে শুকিয়ে যাবার আগে এর বীজ তুলে নিয়ে রান্না অথবা কাঁচা খাওয়া যেতে পারে।
শিমের বিবিধ স্বাস্থ্যকর গুণাবিধি রয়েছে। খনিজ সমৃদ্ধতার কারণে শিম চুল পড়া রোধ করে সাথে সাথে বিভিন্ন পেটের রোগ, যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার পাশাপাশি কোলন ক্যান্সারকেও প্রশমিত করে। গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের পুষ্টির যোগান দেয়। ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ানোর পাশাপাশি এই সবজি হাড় ভালো রাখে। শরীরের শর্করা নিয়ন্ত্রণেও শিমের জুড়ি মেলা ভার সঙ্গে কোলেস্টোরলের মাত্রাও এই সবজি খেলে কমে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুঁকিও শিম খেলে কমে যায়। রক্ত আমাশা কমাতেও শিমের ফুল কার্যকরী ভূমিকা নেয়। শিমের বীজে ভিটামিন বি সিক্স থাকায় স্মৃতিশক্তিও এটি মজবুত রাখে। মাইগ্রেনের ও এলার্জির সমস্যার প্রতিকারে শিমের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
বাড়ির ছাদেও শিমের চাষ করা যায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক, কেমন করে ছাদে করবেন শিমের চাষ
পিটের দুরত্ব
ছাদে বড় কন্টেইনারে জমি বানিয়ে শিম গাছ লাগালে কম করে একটা পিট থেকে আরেকটা পিটের দূরত্ব ৩.০ মিটার হতেই হবে।
বীজ বপনের নিয়ম (Planting)
প্রতি পিটে ৪ থেকে ৫ টি করে বীজ বপন করা উচিত। ১০-১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে বীজ পোঁতা উচিত। প্রতিটি পিটে ২-৩ টি করে সুস্থ চারা রেখে বাদবাকি চারা তুলে নেওয়া ভালো।
পরিচর্যা (Caring)
বেড়ে ওঠা শিম গাছের গোড়ায় যাতে জল না জমতে পারে, তারজন্য গাছকে নজরে রাখতে হবে। মাটি নিড়ানি দিয়ে মাটি সময় সুযোগ বুঝে আলগা করেতে হবে। ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা গাছ হলে পিটে গাছের গোড়ার পাশে বাঁশের ডগা মাটিতে পুঁতে বাউনি করে দেওয়া উচিত।
প্রয়োজনীয় সার (Fertilizer)
গোবর ১০ কেজি
খৈল ২০০ গ্রাম
ছাই ২ কেজি
টিএসপি ১০০ গ্রাম
এমওপি ৫০ গ্রাম
এইসব সার মাদা তৈরী করার সময় প্রয়োগ করা উচিত। ১৪-২১ দিন পর পর দুটি কিস্তিতে ৫০ গ্রাম করে ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম করে মিউরেট অব পটাশ বা এমওপি সার চারা গজিয়ে গেলে দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন:Pokkali Rice Farming: বিশ্বের প্রাচীনতম ও দীর্ঘতম ধান হলো পোক্কালি
পোকামাকড় ও রোগ ব্যবস্থাপনা (Insects and Disease control)
শিম গাছের যম হিসাবে পরিচিত ফল ছিদ্রকারী পোকা ও জাব পোকা। চারা অবস্থায় পাতা ছিদ্রকারী পোকা শিম গাছের বেড়ে ওঠাকে আটকে দেয়। এছাড়াও লাল ক্ষুদ্র মাকড় এবং থ্রিপস পোকাও শিম গাছের বিপদ ডেকে আনে। শিম গাছের ফল পাকলে গান্ধী পোকার আক্রমণও এই সময় লক্ষ্য করা যায়।
মোজাইক ভাইরাস ও অ্যানথ্রাকনোজ রোগে শিম গাছ ভীষণ ভাবে আক্রান্ত হয়। মোজাইক রোগ জাবপোকার থেকে আসে। এই রোগ থেকে গাছকে বাঁচনোর জন্য টিডো ২-৩ মিলিলিটার, প্রতি ২ লিটার জলে মিশিয়ে শিম গাছে ১০ দিন পর পর ২থেকে ৩ বার করে স্প্রে করে দিতে হবে। অ্যানথ্রাকনোজ হলে মেক্সজিল ৭২ WP জাতীয় ওষুধ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ (Harvest)
আশ্বিন-কার্তিক মাসে শিম গাছে ফুল ফোটার ২০-২৫ দিন পর বাগান থেকে শিম তুলে নেওয়া যায়। এদের ফলন দেওয়ার ক্ষমতা ৪ মাসেরও বেশি সময়।
আরও পড়ুন: Mushroom Farming at Home: বিকল্প আয়ের পথ ঘরে বসে মাশরুম চাষ
Share your comments