অ্যারেকা নাট উদ্ভিদে পরিচর্যা ও রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ

সুপারি প্রাচীনকাল থেকেই এদেশের মানুষ পানের সাথে অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে এ পর্যন্ত দু’টি উচ্চ ফলনশীল সুপারির জাত উদ্ভাবিত হয়েছে, যা বারি সুপারি-১ এবং বারি সুপারি-২ হিসেবে পরিচিত। তবে সুপারির উচ্চ ফলনশীল এই জাতগুলোর অপ্রতুলতার কারণে চাষিরা স্থানীয় জাতের সুপারি চাষ করে থাকেন। এগুলো আকারে ছোট এবং ফলন কম।

KJ Staff
KJ Staff
Pest management in areca nut
Areca nut plant (Image Credit -Google)

অ্যারেকা নাট (areca nut) আমাদের রাজ্যে এটি সুপারি নামে পরিচিত, যা গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে (মেলানেশিয়া এবং মাইক্রোনেশিয়া), দক্ষিণ-পূর্ব এবং দক্ষিণ এশিয়া এবং পূর্ব আফ্রিকার কিছু অংশে জন্মায়।

সুপারি প্রাচীনকাল থেকেই এদেশের মানুষ পানের সাথে অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে এ পর্যন্ত দু’টি উচ্চ ফলনশীল সুপারির জাত উদ্ভাবিত হয়েছে, যা বারি সুপারি-১ এবং বারি সুপারি-২ হিসেবে পরিচিত। তবে সুপারির উচ্চ ফলনশীল এই জাতগুলোর অপ্রতুলতার কারণে চাষিরা স্থানীয় জাতের সুপারি চাষ করে থাকেন। এগুলো আকারে ছোট এবং ফলন কম।

আজ আমরা কৃষকদের জন্য সুপারি উদ্ভিদে রোপণ পরবর্তী পরিচর্যা ও তার রোগ পোকা সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করতে চলেছি।

রোপণ পরবর্তী যত্ন (Care after plantation) -

বীজতলায় বীজ রোপণের পরপরই উপরে ছায়া দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বীজতলা খুড়কুটো বা কচুরীপানা দিয়ে ঢেকে রেখে অর্থাৎ মালচিং করে মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখা দরকার। বীজতলা সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে এবং অবশ্যই বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে গরু ছাগল চারা নষ্ট করতে না পারে।

ভালো চারা বাছাই (Seedling) - 

বীজ লাগানোর পর তিন মাসের মধ্যে যে সকল বীজ গজায় সেগুলো থেকে ভালো চারা পাওয়া যায়। বীজ রোপণের পর সে সকল চারা তাড়াতাড়ি গজায়, দ্রুত বাড়ে, গোড়া মোটা হয়, পাতা ও শিকড় বেশি হয় এসব চারা বাছাই করা উত্তম। চারার বয়স ৬ মাস হলেই বাগানের লাগানো যায়। তবে ১২-১৮ মাস বয়সের চারা, যেগুলো খাটো ও মোটা এবং কমপক্ষে ৫-৬টি পাতা থাকে এমন ধরনের চারা মাঠে লাগানোর জন্য বাছাই করা দরকার।

জমি নির্বাচন (Land preparation) - 

সাধারণত আমাদের দেশে বসতবাড়ির আশপাশে, পুকুরের পাড়ে, রাস্তার ধারে স্কুল-কলেজের আঙ্গিনায় সুপারী গাছ লাগানো হয়। তবে সুপারীর বাগান করতে হলে বাগানের জমি সঠিকভাবে নির্বাচন করতে হবে। সুনিষ্কাশিত, উর্বর, কিছুটা ছায়াযুক্ত, তীব্র বাতাস প্রতিরোধী এবং উঁচু জায়গায় বাগানের জন্যে নির্বাচন করা উচিত। জমিতে যেন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।

রোগ বালাই ব্যবস্থাপনা (Disease management) - 

সুপারি গাছ ও ফল বিভিন্ন প্রকার রোগ পোকা দ্বারা আক্রান্ত হয়। ভালো ফলন পেতে হলে এ রোগবালাই ব্যবস্থাপনা একান্ত অপরিহার্য। প্রধান প্রধান রোগবালাই এর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।

(ক) ফল পচা রোগ - 

রোগের আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত সুপারির বোঁটায় পানি ভেজা ছোপ ছোপ দাগ পড়ে এবং আস্তে আস্তে অনেকগুলো দাগ একত্রে মিশে বড় আকার ধারণ করে। আক্রান্ত স্থান ক্রমান্বয়ে বাদামী ও ছাই রঙের হয়ে এক সময়ে পুরো সুপারিটাই  রোগাক্রান্ত হয়ে পচে ঝরে পড়ে।

প্রতিকার ব্যবস্থা -

এ রোগ দমনের জন্যে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের শুরুতেই সুপারির ছড়ায় ও পাতায় ১% ‘বোর্দো মিক্সার’ অথবা ১.৫% হারে ম্যাকুপ্রাক্স নামক ছত্রানাশক রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ১৫-৩০ দিন পর পর ৩/৪ বার গাছে স্প্রে করতে হবে। আক্রান্ত গাছের সুপারি ছড়াসহ পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং গোড়ায় পানি জমে থাকলে তা নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।

আরও পড়ুন - জানুন উন্নত পদ্ধতিতে মাসকলাই এর চাষ কৌশল

(খ) কুঁড়ি পচা রোগঃ

এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এ ক্ষেত্রে ছত্রাক জীবাণু মোচার গোড়ায় কাণ্ডের সংযোগ স্থলের নরম টিস্যু আক্রমণ করে। আক্রান্ত স্থানের টিস্যু প্রথমে হলুদ ও পরবর্তীতে বাদামী রঙ ধারণ করে এবং শেষ পর্যায়ে পচে কালো হয়ে কুঁড়িগুলো ঝরে পড়ে।

প্রতিকারঃ

রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্রই আক্রান্ত স্থান চেছে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু পরিষ্কার করে ‘বোর্দো পেস্ট’ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত স্থান ব্যান্ডেজ করে দিতে হবে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গাছের পাতা ও মোছায় ১% বোর্দো মিক্সার অথবা ১.৫% কুপ্রাভিট ১৫-২০ দিন অন্তর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে। মৃত গাছ, ফলপচা রোগে আক্রান্ত মোচা ও ফল সরিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে এবং বাগানের সমস্ত গাছে ১% বোর্দো মিক্সার অথবা কুপ্রাভিট স্প্রে করে সকল গাছ ভিজিয়ে দিতে হবে।

(গ) মোচা শুকিয়ে যাওয়া ও কুড়ি ঝরাঃ

এ রোগটি প্রধানত গ্রীষ্মকালে হয়ে থাকে। রোগের আক্রমণে আক্রান্ত মোছার গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত হলুদ হয়ে যায়, পরবর্তীতে গাঢ় বাদামী রঙ ধারণ করে এবং পুরো মোচাটি শুকিয়ে যায়। ফলে আক্রান্ত মোচার কুঁড়িগুলো ঝরে পড়ে।

প্রতিকারঃ

আক্রান্ত গাছের মোচা কেটে পুড়ে ফেলতে হবে। রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই ‘ডায়থেন এম-৪৫ অথবা নোইন নামক ছত্রানাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ চা চামচ হিসেবে গাছে মোনা বের হলেই ১৫ দিন পরপর ৪-৫ বার স্প্রে করতে হবে।

আরও পড়ুন - স্বল্প খরচে ধান চাষ এবং শত্রুপোকা নিয়ন্ত্রণ

Published On: 28 April 2021, 11:20 AM English Summary: Care and disease pest management in Areca nut plants

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters