গোমূত্র ক্যান্সার নিরাময়ে সক্ষম

গোমূত্র কাজে লাগিয়ে সাধারণ ক্যান্সার যেমন মুখের, ফুসফুসের, বৃক্কের, চামড়া ও বুকের ক্যান্সার নিরাময় করা সম্ভব

KJ Staff
KJ Staff

ভারতীয় সংস্কৃতিতে গরুকে গোমাতা বলে আখ্যায়িত করা হয়, কারণ গরু মানুষকে মায়ের সমান উপকার দিয়ে থাকে। গরুর দুধে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিদ্রব্য থাকে। গরুর গোবর জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয় ও গোমূত্রকে জৈব সার ও ঔষধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। সাম্প্রতিক, গুজরাটের একদল বিজ্ঞানী গোমূত্রের গবেষণা করে একথা জানিয়েছেন যে এই বস্তুটির মধ্যে ক্যান্সার এর মত রোগ নিরাময়ের রসদ রয়েছে। বিবিধ হিন্দু পুরাণে ও গুগুলের উইকিপিডিয়াতেও গোমূত্রের উপকারিতা উদাহরণসহ বেশ নিরেট ব্যাখ্যা রয়েছে।

একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, ভারতীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারতন্ত্রের মেরুদণ্ড হিসেবে গরুকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। বলা ভালো শুধুমাত্র ভারতীয় কৃষির ইতিহাসেই নয়, মানব সভ্যতার ঊষাকাল থেকেই চাষবাসের সাথে এই জীবের সংযুক্তি রয়েছে, গরু ছাড়া প্রাচীনকালকে তো বটেই বর্তমান ভারতীয় কৃষিকেও ভাবা যায় না, এই কারণে হিন্দুরা গরুকে গোমাতা হিসেবে পূজা করে আসছে।

প্রাচীন চাষবাসে ভারতে ছিলো না শিল্পবিপ্লব, ছিলো না কোনো রাসায়নিক সার, ছিলো না কোনো রাসায়নিক পেস্টনাশক ও কীটনাশক- সমগ্র ভারতবর্ষে তখন ছিলো একটাই প্রাকৃতিক সার, তা হল গরুর গোবর এবং একটাই প্রাকৃতিক কীটনাশক ছিলো সেটি হল গো চোনা। অতীতে গো চোনার সাথে নিমের রস মিশিয়ে কীটনাশক তৈরী করা হোতো, এবং তা কৃষিতে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হত। এছাড়া ছত্রাকনাশক ও আগাছানাশক হিসেবে ব্যবহার হোতো ননীদুগ্ধ থেকে যা গরুর দুধ থেকে পাওয়া যেত।

গুজরাটের জুনাগড় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর জৈবপ্রযুক্তির বিজ্ঞানীরা গোমূত্রকে ব্যবহার করে যে ক্যান্সার আক্রান্ত কোশ মারা যায় সেই বিষয়টির গবেষণায় প্রথম পদক্ষেপ নেন। তারা দাবী করেন যে, গোমূত্র কাজে লাগিয়ে সাধারণ ক্যান্সার যেমন মুখের, ফুসফুসের, বৃক্কের, চামড়া ও বুকের ক্যান্সার নিরাময় করা সম্ভব।

গবেষকদের মধ্যে সহায়ক শ্রদ্ধা ভাট ও রিউকামসিন্‌ তোমার ও গবেষণায় প্রযুক্ত সদস্য কবিতা যোশী তাদের সুদীর্ঘ একবছরের গবেষণার ফলাফল ব্যক্ত করেছেন। তাদের বক্তব্য তারা যে গবেষণা সুদীর্ঘ এক বৎসর ধরে চালিয়েছেন সেটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো কারণ তারা সরাসরি ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের উপর পরীক্ষা করেছিল যেগুলো কিনা বোতলে তৈরী হয়েছিলো।  শ্রদ্ধা ভাট আরও বলেন “আমরা আসলে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলাম যে ঠিক কত পরিমাণ ক্যান্সার আক্রান্ত কোশ গোমূত্র দ্বারা ধ্বংস করা যাচ্ছিলো এই বিষয়টি । পরবর্তী ক্ষেত্রে আমরা ইঁদুরের উপড় গবেষণা করতে চাই। যদি এই পরীক্ষাটি একবার সফল হয়ে যায় তাহলে আমরা বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার নিরাময়ের ঔষধ তৈরি করা শুরু করতে পারবো।”

গবেষক ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে তোমার বলেন যে কেমোথেরাপির প্রভাবে সুস্থ কোশগুলিও ধ্বংস হয়ে যায় কিন্তু গোমূত্র শুধুমাত্র ক্যান্সার আক্রান্ত কোশগুলিকেই বিনষ্ট করে।

১৯৭৫ সালে একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিলো জার্সি গরুর মূত্রের অধিক প্রয়োগে ইঁদুরের মৃত্যু হয়েছিলো। ঐ একই পরীক্ষা ১৯৭৬ সালেও করা হয়েছিল কুকুরের উপরও করা হয়, দেখা যায় হাইপোটেনশন ও টেকনিপিয়া রোগে কুকুরটি আক্রান্ত হয় ও কিছুদিন পর সেটি মারা যায়। এরপর বেশ অনেকটা সময় গবেষণাকে বন্ধ রাখা হয়, ফের ২০০১ সালে আবার পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষার পর জানা যায় ঐ গোমূত্রে প্রচুর পরিমাণে Prion (এক জাতীয় মিস্‌ফোল্ডেড সংযুক্ত প্রোটিন অনু যা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর দেহে স্নায়বিক রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী) পাওয়া যায়, জার্সি গরুকে পরীক্ষা করে দেখা গেছে গরুটি Bovine Spongiform Encephalopathy  রোগে আক্রান্ত।

আয়ুর্বেদে গোমূত্রকে কুষ্ঠ, পেটের ব্যাকটেরিয়া ঘটিত বা কৃমি জনিত ব্যথা, ও কর্কট রোগ নিরাময়ের উপকরণ হিসাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। গোমূত্র, ত্রিফলা ও গরুর দুধ দ্বারা নির্মিত এক প্রকার মিশ্রণ রক্তাল্পতা রোগের অবর্থ্য ঔষধ হিসেবে অতীতে ব্যবহৃত হত। তাছাড়া গোলমরিচ, দই, ঘি ও গো চোনা মিশিয়ে একধরণের মিশ্রণ তৈরী করা হত যা তারা জ্বর ও ছোটোখাটো রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করতো। নিমগাছের ছাল, বাসক গাছের ছাল, কুরিলো ছাল, ও কানের গাছের পাতার সাথে গো চোনা মিশিয়ে কাটাছেঁড়া ক্ষতস্থানে প্রলেপ দিলে সেই অঙ্গস্থানকে অণুজীবের সংক্রমণ থেকে বাঁচানো যেত। এছাড়া গোমূত্র ও দারুহরিদ্রা মিশিয়ে স্নায়বিক অস্বাভাবিকত্বকে কাটানো যেত। মন্দাসৌর থেকে জানা যায় গোমূত্রের দ্বারা ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরাও উপকার পেতে পারেন।

থড়ুপুজার ধন্বন্তরী বিদ্যাশালা আয়ুর্বেদিক কেন্দ্রের প্রধান শতিশ নাম্বুদিরির মতে এটি পাকস্থলীর ঘা বা পাকস্থলীর ক্যান্সার এর উপশমে সক্ষম, তাছাড়া যকৃৎ প্রদাহ, ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগের উপশমেও সক্ষম।

২০০২ সালে ভারতীয় গবেষক যারা গোমূত্রের অ্যান্টিবায়োটিক ক্ষমতার উপড় গবেষণা করছিলেন তাদের Council of Scientific and Industrial Research Centre-এ গবেষণার ছাড়পত্র দিয়েছে

২০১০ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ এবং ন্যাশানাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট থেকে গো-বিজ্ঞান অনুসন্ধান কেন্দ্র (দেওলাপুর) কে অনুদান করা হয়েছে। এই সব সংস্থা গোমূত্র নিয়ে গবেষণায় আমেরিকার পেটেন্ট স্বত্বকে স্বাগত জানিয়েছেন।

- প্রদীপ পাল

Published On: 04 July 2018, 03:00 AM English Summary: cow-piss

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters