
ফসলে খাদ্যমৌলগুলির পরিমাণ কম হলে অভাবজনিত কারণে ফসল যেমন নষ্ট হতে পারে তেমনই খাদ্যমৌল যদি মাত্রাতিরিক্তভাবে শিকড়ে পৌছায় তবে খাদ্যমৌলের বিষক্রিয়ায় ফসল মারা যেতেও পারে, যেমন নাইট্রোজেনঘটিত সার মাত্রাতিরিক্ত হলে দানাজাতীয় ফসলে গাছের বৃদ্ধি বেশি হয় ও ফলন কমে যায়। তাই প্রয়োজনভিত্তিক খাদ্যমৌল ও সার প্রয়োগ বাঞ্ছনীয়।
বিভিন্ন খাদ্য মৌলের (Mineral) অভাবজনিত লক্ষণগুলি দেওয়া হল –
N (নাইট্রোজেন) -এর অভাবজনিত লক্ষণ –
-
উদ্ভিদের পাতার রং হলদে হয়ে যায়।
-
গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।
-
উদ্ভিদের পাতার বৃদ্ধি কম হওয়ায় ফলন কমে যায়।
-
ক্লোরোফিল কম তৈরী হওয়ার জন্য সালোকসংশ্লেষও কমে যায়।
P (ফসফরাস) -এর অভাবজনিত লক্ষণ –
-
ফসলে ফুল ফল আসতে দেরী হয়, ফসল দেরীতে পাকে ফলে ফলন কম হয়।
-
উদ্ভিদের বৃদ্ধি কম হয়।
-
ডাল ও তন্ডুল জাতীয় ফসলে পাশকাঠির সংখ্যা কম হয়।‘
-
আলু গাছের পাতায় মরচের মত ছোপ দেখা যায়।
K (পটাশিয়াম) -এর অভাবজনিত লক্ষণ –
-
পাতার ডগা ঝলসে যায় ও খরের মত হয়ে যায়।
-
ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
-
ডাল ও তন্ডুল জাতীয় ফসলে নাইট্রোজেনের পরিমাণ ঠিক থাকলেও পটাশিয়ামের অভাবে গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে। এই সময় পটাশিয়াম ঘটিত সার চাপান হিসেবে বা পাতায় স্প্রে করলে ফলন বাড়ে।
Ca (ক্যালসিয়াম) -এর অভাবজনিত লক্ষণ –
-
ফসলের বৃদ্ধি কম হয়, কান্ড দূর্বল হয়ে যায়।
-
ফুল ও ফল অসময়ে শুকিয়ে যায়।
-
অনেক সময় গাছের পাতা কুঁকড়ে কাপের মত আকার নেয়।
-
ভুট্টার ক্ষেত্রে কচি পাতা মুড়ে থাকে , খুলতে পারে না।
Mg (ম্যাগনেশিয়াম) -এর অভাবজনিত লক্ষণ –
-
পাতার শিরা হলদে হয়ে যায়, পাতায় ক্লোরোসিস হয়, অনেক ফসলের পাতা হালকা লাল, কমলা বা বেগুনি হয়ে যায়।
-
পাট জাতীয় ফসলে তন্তু উৎপাদন কম হয়।
-
ভুট্টাতে পাতার শিরা প্রথমে সাদা হয়ে যায় ও পরবর্তীকালে পুরো পাতাই সাদা হয়ে যায়।
S (সালফার) -এর অভাবজনিত লক্ষণ –
-
পাতার রং হালকা হলদে হয়ে যায়, পাতায় ক্লোরোসিস হয়।
-
পাতা ভঙ্গুর হয়ে যায়।
-
আলু ও ফুলকপির কচি পাতা কুঁচকে যায়।
-
বাঁধাকপির কচি পাতা বেগুনি থেকে লাল রঙ ধারন করে।
Fe (আয়রন) -এর অভাবজনিত লক্ষণ –
-
কচি পাতায় ক্লোরোসিস হয়, পরবর্তী সময় সমস্ত পাতা সাদা হয়ে যায়।
-
টমাটো আকারে ছোট হয় ও পাকলে রঙ লালের পরিবর্তে কমলা হয়।
-
গমে স্মার্ট রোগ দেখা দেয়।
Mn (ম্যাঙ্গানিজ) -এর অভাবজনিত লক্ষণ –
-
কচি পাতায় ক্লোরোসিস হয় ও পরবর্তীতে পাতার রঙ হলদে হয়ে যায়।
-
ধানে ব্রাউন স্পট ও ব্লাস্ট রোগ হয়
-
মটরের দানার মাঝে বাদামি দাগ পড়ে।
-
আলু গাছের বৃদ্ধি কম হয় ও পাতা ডগা পচতে শুরু করে।
Cu (কপার) -এর অভাবজনিত লক্ষণ –
-
মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকলেও মনে হবে গাছ শুকিয়ে আসছে।
-
ভুট্টার কচি পাতা হলুদ হয়ে পরে ঝড়ে যায়।
-
পাতা কুঞ্চিত হয়ে নিচের দিকে ঝুঁকে যায়।
-
পেঁয়াজ পাতার ডগার দিকে কালো দাগ পড়ে, পেয়াঁজ ফাঁপা ও হলদে হয়ে যায়।
-
লেবু গাছের ডগার পাতা ঝড়ে যায়, গাছে ফুল ফল ধরে না।
-
বাধাকপির পাতা ছোট হয়ে যায় ফলে কপি বাঁধতে পারে না।
-
দানা জাতীয় ফসলে পাতার ডগা শুকিয়ে ফেটে যায়, দানার পরিমাণ কম হয়।
Zn (জিঙ্ক) -এর অভাবজনিত লক্ষণ –
-
পেয়ারাগাছের পাতা ছোট হয়ে যায়।
-
লেবু গাছের ডগা শুকিয়ে যায় ও পাতা ভঙ্গুর হয়ে যায়।
-
ভুট্টা গাছের কচি পাতা সাদা হয়ে যায়।
-
আলু ছোট হয়, খোসা খসখসে হয় ও উপরে ফাটল দেখা দেয়।
-
গাছে ফুল ও ফল ঠিকমত হয় না।
-
ধানের খয়রা রোগ হয়।
B (বোরন)-এর অভাবজনিত লক্ষণ –
-
কুঁড়ি শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায় ও ঝড়ে পড়ে, গাছটি ঝোপের আকৃতি নেয়।
-
আমের আগায় কালো দাগ পড়ে ও আম ফেটে নষ্ট হয়।
-
ফুলকপির ফুলে মরচে দাগ পড়ে ও পরবর্তীকালে কান্ডের ভিতর ফাঁপা হয় ও পচন ধরে। ফুলকপির স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।
-
বীট ও গাজরের মধ্যবর্তী অংশ ফাঁপা হয়ে যায়।
-
আলুগাছের পাতার জলীয় অংশ কমে যায়, আলু ফেটে যায়।
-
নারকেল, সুপারি গাছে খুব ছোট অবস্থায় ডাব, সুপারি ঝড়ে পড়ে।
Mo (মলিবডিনাম) -এর অভাবজনিত লক্ষণ –
-
শুঁটি জাতীয় ফসলে গুটি তৈরী হয় না ফলে নাইট্রোজেন আবদ্ধ হয় না।
-
ফুলকপির পাতা লম্বা ও সরু হয়ে যায়, কান্ড কাটলে দুধের মত সাদা রস বের হয়।
-
পাতায় ক্লোরোসিস হয় ও পাতা ভঙ্গুর হয়ে যায়।
Share your comments