বাংলায় একটি প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে - ‘দিনে একটা আপেল খেলে তা আপনাকে ডাক্তারের দূরে রাখবে’। একথা ঠিক টুকটুকে লাল রঙের আপেল দেখলে কার না খেতে ইচ্ছে করে আর এটি স্বাস্থ্যের জন্য ততটাই উপকারী। কিন্তু এখন বাজারে কালো রঙের আপেলও পাওয়া যায়। হ্যাঁ শুনতে আশ্চর্য লাগলেও লাল বর্ণের সাথে কালো বর্ণের আপেলও এখন বাজারে উপলব্ধ।
ব্ল্যাক ডায়মন্ড (Black Diamond) -
ব্ল্যাক ডায়মন্ড নামের এই কালো আপেলগুলি চিন থেকে আসছে। এর প্রকৃত প্রজাতিটির নাম রেড ডেলিসিয়াস। চিনে এই প্রজাতিটির নাম হুয়া নিউ। সেখানে এই ফলটি খুব চড়া দামে (৫০ ইয়েন প্রতিটি ফল) বিক্রি হচ্ছে। তাই চিনের চাষিরা এই কালো আপেল আরো বেশী করে উৎপাদন করতে উৎসাহিত হয়ে উঠেছে।
আপেল গুলির চাষ হয় চিনের তিব্বত অঞ্চলে। এই জায়গার ভৌগলিক অবস্থানের জন্য এবং দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্যের জন্য আপেলগুলির গাঢ় লাল রঙ গাঢ় বেগুনী বর্ণে পরিবর্তাত হচ্ছে। এই কালো আপেলগুলি কেবলমাত্র বেজিং, সাংহাই, গুংগজু ও সেনজেনের কতকগুলি বড় মাপের সুপারমার্কেটেই উপলব্ধ।
আপেলের এত জনপ্রিয়তার মূলে রয়েছে এর স্বাস্থ্যগুণ। ঠিক কি কি গুণ রয়েছে এতে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
আপেলের স্বাস্থ্যগুণ (Apple health benefits) -
আপেল আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে (Weight Loss) সাহায্য করে যেমন, তেমনই বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারকেও শরীর থেকে দূরে রাখে৷ পেটের সমস্যা কমায়, লিভার পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে, ভিটামিনে ভরপুর হওয়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immunity Power) বৃদ্ধি করে৷ হাড়ের শক্তি বাড়ায়, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে৷ এছাড়া ত্বককে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে, বলিরেখা পড়া রুখতে সহায়তা করে এবং ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে৷ পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে৷ খুশকি পড়ার হ্রাস করে৷
আপেলের পুষ্টিগুন (Nutritional Value of Apple), এর উপকারিতাই এর চাহিদা ধরে রেখেছে৷ আর সে কারণেই এর চাষ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে৷ তবে এই চাষের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতেই হয়৷ উদাহরণস্বরূপ হিমাচলপ্রদেশের কথা উল্লেখ করতে হয়৷
এখানে বেশিরভাগ মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কৃষিকাজ৷ আর এর মধ্যে অন্যতম হল আপেল চাষ৷ প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকার উপার্জন হয় এই আপেল থেকেই৷
সম্প্রতি, Rohru, প্লান্ট হেলথ ক্লিনিকের একটি মাইক্রোগ্রাফ Venturia inaequalis (Scab)-এর ঘটনা তুলে ধরেছে৷ কোটখাই, নারকান্দা, কিন্নৌর, অনি এবং নিরমান্দ এলাকা থেকেও এমন ঘটনার কথা উঠে এসেছে, যেখানে আপেলের বিশেষ রোগের কথা বলা হয়েছে৷
বর্ষায় (Monsoon) আপেল চাষের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় তাই তুলে ধরা হয়েছে৷ রোগের হাত থেকে আপেল গাছকে রক্ষা করতে কী স্প্রে করতে হবে তা জানানো হয়েছে৷
আপেলের রোগ নিয়ন্ত্রণ (Disease management) -
আপেলের ফেনোলজিকাল স্টেজ- ফ্রুট ডেভেলপমেন্ট (ওয়ালনাট স্টেজ)/ জুন মাস
পরিমাণ (Quantity)- ২০০ লিটার জলে
ছত্রাকনাশক- ম্যানকোজেব ৬০০ গ্রাম
প্রোপিনেব- ৬০০ গ্রাম
ডোডিন- ১৫০ গ্রাম
মেটিরাম + পাইরাক্লসট্রোবিন ৫%WG- ৩০০ গ্রাম
টেবুকোনাজোল ৮% + কাপ্তান ৩২%এসসি or- ৫০০ এমএল
আরও পড়ুন - Apple Farming: গ্রীষ্মকালে কিভাবে বাড়ির ছাদে আপেল চাষ করবেন, জেনে নিন পদ্ধতি
বিগত বছরে সরকার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘীতে আপেল চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই উদ্যোগের ফলে অবসর সময়ে বাড়তি আয়ের জন্য স্থানীয় শ্রমিকদের ভিনদেশে যেতে হবে না। ইতিমধ্যেই কিষান মাণ্ডিতে আপেল বাগান তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। তৃতীয় বছর থেকেই ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। অনুমান অনুযায়ী, এক একটি গাছে প্রথম বছরে গড়ে পঞ্চাশটি করে আপেল ধরবে। এরপর পাঁচ বছরে একটি গাছে আড়াইশো থেকে তিনশো আপেল ধরবে ফলত গাছ প্রতি দু’হাজার টাকা পাওয়া যাবে। পাঁচ বছর পর থেকে বছরে প্রায় সাড়ে নয় হাজার টাকার কাছাকাছি উপারজনে সক্ষম হবেন চাষীরা। জুন-জুলাই মাস নাগাদ এই আপেল স্থানীয় বাজারে আসবে। আপেলের বাজারদর সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন - Organic Farming: অর্গ্যানিক ফার্মিং বা জৈব কৃষিকাজে ফলছে সোনার ফসল
Share your comments