চিকিৎসা শাস্ত্র থেকে পোশাক, রূপসজ্জা থেকে বিশ্রামের জন্য তোষক, বালিশ অথবা শীতের কম্বল--তুলার ব্যবহার সর্বত্র। তুলা গাছ থেকে পাওয়া একটি অর্থকরী ফসল হলো তুলা। যার অর্থকরী ও বাণিজ্যিক মূল্য গোটা বিশ্ব জুড়ে রয়েছে। এছাড়াও তুলাবীজ থেকে নিষ্কাশিত পরিশোধিত তেল ভোজ্যতেল ও অপরিশোধিত তেল সাবান তৈরির কাঁচামাল হিসাবে বহুদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তুলা বীজ থেকে যে খৈল Cotton উৎপন্ন হয় তা গবাদি পশু ও মাছের খাবার হিসাবে জনপ্রিয়।
তুলা চাষের জমি: (Soil)
দো-আঁশ আর বেলে দো-আঁশ হলো তুলা চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি। জৈব পদার্থ বেশি পরিমাণে রয়েছে এমন মাটিতেও তুলা চাষ ভালো হয়। মনে রাখতে হবে যে জমিতে বৃষ্টির জল দাঁড়ায় না সেই জমিতে তুলা চাষ করা উচিত। স্যাঁতসেঁতে, ভেজা, ছায়া রয়েছে এমন জমিতে তুলা চাষ করা উচিত নয়।
রোপনের জন্য বীজ উপযুক্ত করার পদ্ধতি:
জমিতে বীজ পোঁতার আগে তুলাবীজ ৩-৪ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপরে বীজগুলি শুকনো গোবর অথবা ছাই দিয়ে ঘষে নিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে আঁশগুলো যেন বীজের গায়ে লেগে থাকে এবং বীজ একটা হতে অন্যটা আলাদা হয়ে যায়। এছাড়া লঘু সালফিউরিক এসিড দিয়ে বীজ আঁশ মুক্ত করেও পোঁতা যায়। এতে বীজে থাকা রোগজীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়।
বীজ রোপণের উপযুক্ত সময়: (Planting time)`
বীজ রোপণের কাজ শ্রাবণ মাস থেকে ভাদ্রের প্রথম সপ্তাহের ভেতর শেষ করা উচিত। খরা মরসুমে জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে বীজ বপন করলে ভালো। মধ্য শ্রাবণের দিকে বীজ বপন করা ভালো।
তুলার বীজ রোপণের পদ্ধতি: (Planting procedure)
সারি করে তুলার বীজ রোপণ করতে হবে। লাঙল দিয়ে সারি টেনে নিয়ে প্রতি সারিতে ভালো করে সার প্রয়োগ করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। এবার দূরত্ব বজায় রেখে ১.২৫ সে.মি থেকে ২.৫ সে.মি গভীরে ৩/৪টি বীজ বুনে মাটি দিয়ে তা চাপা দিয়ে দিতে হবে।
বৃষ্টি অতিরিক্ত হলে চাষ করা কখনো কখনো কঠিন হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতে ডিবলিং পদ্ধতিতে সারি ধরে বীজ বপন করতে হবে। জমিতে জল থাকলে পলিব্যাগে চারা উৎপন্ন করে ২০-৩০ দিন বয়সের চারা রোপণ করা উচিত।
সার প্রয়োগ (Fertilizer)
উর্বর জমিতে তুলা চাষ করা উচিত। তবে মাটির উর্বর না হলে জমিতে প্রতি হেক্টর অনুযায়ী ৫-৬ টন গোবর সার প্রয়োগ করা উচিত। জৈব সার ঠিকঠাক প্রয়োগ হলে রাসায়নিক সার কম প্রয়োগ করলেই হবে। জৈব সার জমি তৈরির প্রথম দিকে প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও ইউরিয়া, পটাশ, টিএসপি, জিপসামের মতো রাসায়নিক সারও তুলা উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা উচিত।
সেচ ব্যবস্থা: (Irrigation)
রবি মৌসুমে মাটির আর্দ্রতা কম থাকলে মাটির রস পর্যবেক্ষণ করে বুঝে নিয়ে ২ থেকে ৩ বার সেচ দিতে হবে। বর্ষায় তুলা চাষ করলে অনেকসময় জমিতে জল দাঁড়ানোর অসুবিধা হতে পারে, তারজন্য জমির জল নিষ্কাশনের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরও পড়ুন: Easiest way of Bonsai makingসহজ উপায়ে বনসাই বানানোর পদ্ধতি
পোকামাকড় ও রোগ দমন: (Insects and disease management)
বোল ওয়ার্ম তুলা চাষের যম হিসাবে বিবেচিত। ৩-৪ সপ্তাহ গাছের বয়েস হলে এই পোকা গাছর কান্ড ছিদ্র করে ঢুকে কচি অংশ খেয়ে নেয়। এর ফলে ডগা নিস্তেজ হয়ে শুকিয়ে যায়। এই পোকা তুলে গাছের ফুল ও ফলেও আক্রমণ করে গাছের ক্ষতি করে।
তুলা গাছে পোকা দেখা দিলে হেক্টর প্রতি ৩০০ মিলি. রিপকর্ড/সুমিসাইডিন/সিমবুশ/ডেসিস২০-২৫ জলের সাথে মিশিয়ে (প্রতি স্প্রে মেশিনে ১২-১৫ মিলি. ওষুধ পুরো গাছে ভালো ভাবে ছেটাতে হবে। পোকার আক্রমনের তীব্রতা অনুযায়ী ১৫-২০ দিন পর পর ৩-৪ বার ওষুধ স্প্রে করা উচিত।
পাতা ঝলসানো, এনথ্রাকনোজ, নেতিয়ে পড়া, চারা ধসা প্রভৃতি রোগ তুলে গাছে দেখা দেয়। বীজ বাহিত রোগের জন্য বীজ শোধন করে বীজ বপন করতে হবে। রোগাক্রান্ত চারা তুলে পুড়িয়ে ফেলা উত্তম। রোগাক্রমণের সম্ভবনা আছে এমন ক্ষেতে ৫% কপার অক্সিক্লোরাইড বা ২.৫% ডাইথেন-গ-৪৫ প্রয়োগ করা যেতে পারে।
তুলা সংগ্রহের উপযুক্ত সময়: (Harvesting)
তুলা গাছের বোল ঠিক মতন ফেটে বের হলে শুকনো দিনে বীজতুলা ওঠাতে হবে।
আরও পড়ুন: WBBSE 10TH Result 2021 update: ফল প্রকাশিত হলো মাধ্যমিকের, ৬৯৭ পেয়ে প্রথম ৭৯ জন
Share your comments