অত্যন্ত সুমিষ্ট ফল জামরুল খেতে কার না ভালো লাগে। ভিটামিন-বি২ সমৃদ্ধ এই ফলে যথেষ্ট পরিমাণে জল থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও এই ফল অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও জামরুলে আমিষ, খনিজ লবণ, ভিটামিন সি, লৌহ ও ক্যারোটিন প্রচুর পরিমানে রয়েছে। জামরুলের চাষ আমাদের রাজ্যে প্রচুর পরিমানে হয়। এছাড়াও বহু সৌখিন মানুষ বাড়িতেও জামরুলের চাষ করে থাকেন। টবে বা ছাদেও জামরুল চাষ করা যায়। আয়রন, ক্যালসিয়াম, সালফার,পটাশিয়াম সমৃদ্ধ এই ফলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-সি রয়েছে। কোষ্ঠ্যকাঠিন্যর মতন রোগ জামরুল খেলে কমে। ত্বকও জামরুল খেলে ভালো থাকে। বাত কমাতে এবং চোখের নিচের কালি দূর করতেও জামরুলের জুড়ি মেলা ভার। ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য জামরুল অত্যন্ত উপকারী একটি ফল হিসাবে বিবেচিত হয়।
জলবায়ু (Climate)
জামরুল চাষ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ভালো হয়। চরম আবহাওয়া অর্থাৎ খুব গরম অথবা খুব ঠান্ডা জামরুল চাষের জন্য ক্ষতিকর।
বংশ বিস্তার
জামরুলের বংশবিস্তার গুটি কলম ও শাখা কলমের মাধ্যমেও করা যায়। সাধারণত ফল সংগ্রহের পর গাছে নতুন পাতা গজাতে শুরু করলে কলম করা উচিত। শাখা কলমের জন্য এক বছর বয়সী গাছ নির্বাচন করে মে-জুন মাসে কলম করতে হবে। শাখা কলমের জন্য বর্ষা মৌসুমে ৪ থেকে ৫টি পর্ব সহকারে ডাল কেটে বেডে বা পলিব্যাগে রাখতে হবে। রোপণকৃত ডাল থেকে নতুন কুঁড়ি বের হলে তা পরবর্তী বছরে মূল জমিতে বা তৈরীকৃত মাদায় রোপণ করতে হবে।
জমি নির্বাচন ও তৈরী (Land Preparation)
দোঁ-আশ মৃত্তিকা জামরুল চাষের জন্য সবচাইতে উপকারী। এছাড়াও যে কোনও মাটিতেই জামরুল চাষ করা যেতে পারে। বৃষ্টি হলে জল জমবে না এমন উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি খুঁজে নিয়ে জামরুল চাষ করা উচিত। প্রথমেই চাষ দিয়ে অথবা কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে সমতল ও আগাছামুক্ত করে নেওয়া উচিত।
রোপণ পদ্ধতি (Planting)
মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য শ্রাবণ মাস হলো জামরুলের চারা/ কলম রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে জল সেচের সুবিধা থাকলে বৈশাখ থেকে মধ্য কার্তিক মাস পর্যন্ত জামরুলের চারা রোপণ করা যায়।
গর্ত তৈরী
কলম রোপণের ১৫ থেকে ২০ দিন পূর্বে ৬ মিটার দূরত্বে ১ মিটার গভীর গর্ত করতে হবে। গর্তের ওপরের মাটির সাথে ১৫ থেকে ২০ কেজি জৈব সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি ও ১০০ গ্রাম জিপসাম সার ভালভাবে মিশিয়ে গর্তটি ভরাট করে তাতে পানি দিতে হবে।
কলম রোপণ ও পরিচর্যা (Planting)
গর্তে সার প্রয়োগের ১০ থেকে ১৫ দিন পর নির্বাচিত কলমটি গর্তের মাঝখানে খাড়াভাবে রোপণ করে প্রয়োজন মতো জল, খুঁটি ও বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
গাছে সার প্রয়োগ (Fertilizer)
বৃদ্ধির সাথে সাথে গাছে প্রয়োজনীয় পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে। গোবর ইউরিয়া , টিএসপি ,এমওপি উপযুক্ত পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে। প্রতিবার সার দেওয়ার পর প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে।
আরও পড়ুন: Banana Health Benefits – প্রতিদিন ব্রেকফাস্টে রাখুন কলা, ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণ
আগাছা দমন (Weed management)
গাছের গোড়া সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। সাধারণত বর্ষার শুরুতে ও বর্ষার পর সম্পূর্ণ বাগানে হালকা চাষ দিয়ে আগাছা পরিস্কার করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
সেচ ও নিষ্কাশন(Irrigation)
জামরুলে জলের ভাগ বেশি থাকার কারণে খরা মৌসুমে অবশ্যই জল সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় জলের অভাবে ফলের আকার ছোট হবে এবং ফল ঝরে পড়তে পারে। সাধারণত খরা মৌসুমে গাছে প্রয়োজন মতো ২ থেকে ৩ বার সেচ দিলে গুণগত মান সম্পন্ন ফল পাওয়া যায়। বর্ষা মৌসুমে প্রয়োজনীয় নালা কেটে গাছের গোড়া থেকে অতিরিক্ত জল নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
রোগ বালাই ও পোকা দমন (Disease and Pest control)
জামরুল গাছে পোকা-মাকড় ও রোগবালাই তেমন দেখা যায় না। কচি পাতা খেকো পোকার আক্রমণ মাঝেমধ্যে দেখা যায়। এদের দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি সুমিথিয়ন মিশিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।
ফল সংগ্রহ (Harvest)
ফল পূর্ণতা প্রাপ্তির পর সংগ্রহ করতে হবে। বারি জামরুল-১ এর ফল মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য জ্যৈষ্ঠ মাসে সংগ্রহ করা হয়। পরিপক্ক ফল গাঢ় তামাটে থেকে মেরুন বর্ণ ধারণ করে এবং পরিপুষ্ঠ ও টস টসে হয়। পরিপক্ক ফল হাত অথবা জালিযুক্ত বাঁশের কোটার সাহায্যে সংগ্রহ করা হয়।
আরও পড়ুন: Hasnuhana Farming Procedure at Home : বাড়ির টবে হাসনুহানা চাষ করার সহজ উপায়
Share your comments