লেটুস পাতা বাঙালিদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় এক সবজি। বারোমাসি এই উদ্ভিদ প্রাচীন মিশরীয়রা সর্বপ্রথম আবিষ্কার করে। লেটুস থেকে তেলও তৈরী করা হয়। তেলসমৃদ্ধ বীজের কারণে এই পাতা গ্রিক এবং রোমানদের কাছে সেইসময় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। পরবর্তীকালে এই পাতার নাম রাখা হয় লেটুস। প্রথম দিকে ইউরোপ ও আমেরিকায় লেটুস খাদ্য হিসাবে ব্যবহার হলেও, পরবর্তীকালে লেটুস খাদ্য হিসাবে গোটা বিশ্ব জুড়েই শুরু হয়।
লেটুসের উপকারিতা ও ব্যবহার (Health Benefit of Lettuce)
১) লেটুসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ থাকায়, এই সবজি স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ভালো। এই লেটুস পাতায় প্রচুর পরিমানে এন্টিঅক্সিডেন্টও থাকে।
২) লেটুসপাতা কিডনি রোগীদের জন্য ভীষণ স্বাস্থ্যকর। এই পাতার সোডিয়াম ভিটামিন ‘বি’ ওয়ান, ‘বি’ টু, ‘বি’ থ্রি শরীরের যে কোনও অঙ্গে জল জমে যাওয়া আটকায়।
৩) লেটুস আঁশযুক্ত হওয়ায় এই সবজি স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব ভালো। লেটুস হজমও হয় খুব তাড়াতাড়ি। হার্টের জন্য লেটুস ভীষণ ভালো, কারণ এতে কোলেস্টোরল রয়েছে।
৪) লেটুসে প্রচুর পরিমান জল থাকায়, এটি স্থুল ব্যক্তিদের খাওয়া ভীষণ প্রয়োজন। কারণ এতে জল থাকার ফলে এটি শরীরের চর্বি দূর করতে সাহায্য করে।
৫) ক্ষতস্থানের পক্ষেও লেটুস পাতা ভীষণই কাজে লাগে। লেটুস থেঁতো করে কাটা জায়গায় লাগালে, ক্ষত সেরে যায় এবং যন্ত্রণার উপশম ঘটে।
৬) গর্ভবতী মহিলাদের জন্য লেটুস পাতা খুবই উপকারী। গর্ভাবস্থার সময়ে লেটুস পাতা খেলে গর্ভবতী মা এবং পেতে থাকা সন্তানের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
৭) ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৬, বি-১২ সমৃদ্ধ লেটুস পাতা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
৮) লেটুস পাতা রক্তের জন্য ভীষণ উপকারি। রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ অতিমাত্রায় কমে গেলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে। লেটুস পাতা থেকে যথেষ্ট পরিমাণ পটাসিয়াম পাওয়া যায়।
টবে লেটুস চাষের পদ্ধতি (Lettuce farming method in home)
বাড়ির ছাদে বা বারান্দার বড় টবে সারমাটি ভরে সহজেই লেটুস চাষ করা যায়।
লেটুস চাষে টবের মাটি (Soil)
টবের মাটি ঝুরঝুরা রাখতে হলে সমপরিমাণে দো-আঁশ মাটি ও জৈব সার উত্তম ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এর ফলে গাছের বৃদ্ধি এবং মানেরও উন্নতি ঘটবে। লেটুস চাষ করতে গেলে প্রত্যেক টবের মাটিতে চা চামচের চার চামচ টিএসপি সার ও ৫/৬ দিন আগে ভেজানো ১১৬ গ্রাম পরিমাণ সরিষার খৈল মিশাতে হবে।
লেটুস চাষের উপযুক্ত সময় (Appropiate time of Lettuce Farming)
ভাদ্র এবং অঘ্রায়ণ মাস এই লেটুস বীজ থেকে ছাড়া তৈরী করে টবে লাগানোর সঠিক সময়। বড় টবে বীজ বুনলে ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই চারা গজিয়ে যাবে। চারাতে কয়েকটা পাতা গজিয়ে গেলেই তা টবে পুঁতে দিতে হবে।
লেটুস চাষে চারা রোপণ (Planting)
সন্ধ্যার দিকে লেটুসের চারা লাগানো উচিত। চারা লাগানো হয়ে গেলে ৩ থেকে ৪ দিন ঢাকা দিয়ে লেটুস চারাকে অতিরিক্ত রোদ অথবা বৃষ্টির থেকে বাঁচাতে হবে। সকাল এবং বিকেল দুই বেলাই চারাতে জল দিতে হবে।
আরও পড়ুন:Avocado Farming Procedure: অ্যাভোকাডো চাষ করে হয়ে উঠুন সম্পদশালী কৃষক
পোকামাকড় ও রোগ-বালাই (Pest and Disease control)
লেটুস গাছের গোড়া পচা রোগ দেখা দিতে পারে। এই অবস্থায় গাছ তুলে ফেলা উচিত। জাব পোকা লেটুসের যম হিসাবে বিবেচিত হয়। জাব পোকার আক্রমণ দেখা দিলে জৈব উপায়ে তৈরী কীটনাশক স্প্রে করে দেওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে কীটনাশক ছড়ানোর পর লেটুস পাতা কয়েকদিন খাওয়া যাবে না।
লেটুস চাষে পরিচর্যা (Caring)
লেটুস গাছ লাগালে তার পরিচর্যা করতে হবে। টবে চারা লাগানোর পর বহুবার এমন হয়েছে ছোট পাখিরা ঠুকরে ঠুকরে সেই পাতা খেয়ে ফেলেছে। এই ক্ষেত্রে পাতলা পলিথিনের গায়ে ছোট ছোট ছিদ্র করে সেটি দিয়ে গাছটি ঢেকে দেওয়া দরকার। এছাড়াও যেইসব পাতা শুকিয়ে গেছে, সেগুলি তুলে ফেলা উচিত। চারা লাগানোর ৩০-৩৫ দিনের মধ্যেই লেটুস পাতা তোলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: National Education Policy: এবার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেও বাংলা-সহ ৫টি ভাষায় পঠনপাঠন শুরু
Share your comments