জি এম বীজ ভালো না খারাপ তা আগামীদিনের কৃষি গবেষণাই বলবে

জি এম (Genetically modified) বীজ নিয়ে সারা পৃথবীর বিজ্ঞানীমহলের এক দল সমর্থন করছেন আরেক দল সমালোচনা করছেন। এটি এমন এক ধরনের বীজ যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয় একটি অসমগোত্রীয় উদ্ভিদ বা প্রানীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য যুক্ত জিন, জৈব প্রযুক্তি( Biotechnology) ও জিন প্রকৌশল ( Genetic Engineering) পদ্ধতির মাধ্যমে।

KJ Staff
KJ Staff

জি এম (Genetically modified) বীজ নিয়ে সারা পৃথবীর বিজ্ঞানীমহলের এক দল সমর্থন করছেন আরেক দল সমালোচনা করছেন। এটি এমন এক ধরনের বীজ যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয় একটি অসমগোত্রীয় উদ্ভিদ বা প্রানীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য যুক্ত জিন, জৈব প্রযুক্তি( Biotechnology) ও জিন প্রকৌশল ( Genetic Engineering) পদ্ধতির মাধ্যমে। সাধারণত অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে ও বিশেষ ধরনের রোগ-পোকা ও আগাছার হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য জি এম বীজের ব্যবহার হয়ে থাকে। জি এম বীজের ব্যবহারের আরো কিছু কারণ গুলি হল –

  • প্রতিকূল পরিবেশে চাষ আবাদ করা যায়।
  • ফসল সহজে পচবে না ও বেশী সময় ধরে সংরক্ষণ করা যাবে।
  • আবহাওয়ার পরিবর্তনে ও ক্রমবর্ধনশীল জনসংখ্যার খাদ্য সংকট দূর করতে এই প্রযুক্তি সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে।

এই সুবিধাজনক দিক গুলি থাকলেও এর মধ্যে সিমাহীন ঝুঁকি থাকতে পারে। জি এম বীজে যে জিন অন্তর্ভুক্ত করা হয় তার নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য আছে কিনা তা তেমন ভাবে পরীক্ষা করে দেখা হয় না কারণ এই পরীক্ষা সময়সাপেক্ষ। এর ফলে উদ্ভুত বিশেষ নতুন বৈশিষ্ট্য জীব বৈচিত্র ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি সাধন করতে পারে। জি এম পদ্ধতি থেকে তৈরী বীজ থেকে উৎপন্ন রোগ পোকা প্রতিরোধী জাত থেকে বিশেষ ধরনের অপ্রতিরোধী রোগ, পোকা, জীবানু ও আগাছার সৃষ্টি হতে পারে যা বর্তমান কৃষি পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে। মানব স্বাস্থ্যে এর কি ধরনের প্রভাব পরবে তা এখনও পরীক্ষা করে দেখা হয় নি, কারণ এই ধরনের পরীক্ষা সময় সাপেক্ষ।

বিজ্ঞান ভিত্তিক সমিক্ষাতে দেখা গেছে জি এম বীজ যে সমস্ত রোগ পোকার আক্রমণ ঠেকায় তাদের পরবর্তী প্রজন্মের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে থাকে এবং সেই বর্ধিত প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে তারা জি এম ফসলকে আক্রমণ করলে তাদের দমন করতে বেশী কীটনাশকের প্রয়োজন হয়। যেমন – চীন দেশে দেখা গেছে জি এম তুলো বীজের ব্যবহারে তিন বছরের মধ্যে কীটনাশকের ব্যবহার ৭০% কমে গেছে। কিন্তু ৭ বছর পরে আবার আগের মতোই কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে কারন রোগ পোকার প্রতিরোধ ক্ষমতাও ৭ বছরে বেড়ে গেছে।

বর্তমানে আমেরিকায় সবচেয়ে বেশী জি এম বীজের চাষ হয়।  আমেরিকায় তৈরী ও প্যাকেটজাত খাবারের ৮০% -এর উৎস জি এম ফসল (ভোজ্য তেল, ধান , গম, ভুট্টা প্রভৃতি) ও জেনেটিক্যালি মডিফায়েড পশুখাদ্য (পোলট্রি, ডেয়ারী, গবাদি পশু) । কিছু বিজ্ঞানীর দল বলছেন জি এম খাদ্য ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকে মানুষের অ্যালার্জি, নানান অচেনা রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের শরীরে জি এম  খাদ্যের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করেছে অ্যামেরিকার অ্যাকাডেমি অফ এনভায়র্নমেন্টাল মেডিসিন। এই সংগঠন প্রানীর উপর দীর্ঘদিন পরীক্ষা করে দেখেছে জি এম খাদ্য শরীরের বিভিন্ন অঙ্গতন্ত্রের ক্ষতি করে। তাই তারা কয়েকটি বিষয়ের উপর জোর দিয়েছেন ।

  • দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরীক্ষা চালানো।
  • জি এম খাদ্যে লেবেল লাগানো।
  • মানবদেহে জি এম খাদ্যের প্রভাব অনুসন্ধানে বিজ্ঞান ভিত্তিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো।

 

সবুজ বিপ্লবের আগে কৃষকরা বংশপরম্পরায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জমি ও জলবায়ুর উপযোগী প্রজাতি চিহ্নিত করে চাষ করতেন ও ফসলের একটা অংশ বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করতেন পরের বছর চাষ করার জন্য। ১৯৪৪ সালে মেক্সিকোর কৃষি বিজ্ঞানী নরম্যান বোরলগ প্রজনন বিদ্যার চিরাচরিত সূত্র অনুসরণ করে সঙ্করায়ন পদ্ধতিতে উদ্ভাবন করলেন নতূন ধরনের উচ্চফলনশীল গমের বীজ। ১৯৬৩ তে মেক্সিকোতে গমের উৎপাদন বৃদ্ধি ৬ গুণ বৃদ্ধি পায়। এই সাফল্যের পর কৃষিতে সংকরায়ন বা ক্রশ ব্রিডিং পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু হল। এই ধরনের বীজকে আমরা শঙ্করায়ীত, ক্রশ ব্রিড বা হাইব্রিড বীজ বলি। এই পদ্ধতির প্রয়োগেই পৃথিবীতে সবুজ বিপ্লব আসে এবং বিজ্ঞানী নরম্যান বোরলগ ১৯৭০ সালে তাঁর আবিষ্কারের জন্য কৃষিতে নোবেল পুরষ্কার পান। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে পশুপালনে গবাদি পশু, হাঁস মুরগী, ছাগল, ভেরা , শুয়োর ইত্যাদি তৈরি করে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাফল্য আসে। এই পদ্ধতি সবুজ বিপ্লবের আগে কৃষকদের ব্যবহৃত পদ্ধতিরই উন্নত  বৈজ্ঞানিক সংস্করণ। কৃষকরাও উপযুক্ত পথপ্রদর্শণ ও প্রশিক্ষণ পেলে এই পদ্ধতিতে উচ্চফলনশীল বীজ উৎপাদন করতে পারেন।

জি এম বীজে এক ধরনের প্রানী ও উদ্ভিদের জিনে অন্য ধরনের প্রানী  বা উদ্ভিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জিন অন্তর্ভুক্ত করা হয় যা প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে হয় না। প্রকৃতিতে এমন অনেক ভাইরাস ব্যকটেরিয়া ও অন্যান্য জীব আছে যারা বিভিন্ন ধরনের রোগ পোকার প্রাণঘাতী বিষাক্ত উপাদান তৈরী করে যেমন ব্যসিলাস থুরিনজিয়েনসিস ব্যকটেরিয়া। এর দেহে এক ধরনের বিষাক্ত প্রোটিন তৈরি হয় যা ফসলের বিভিন্ন রোগপোকাকে মেরে ফেলতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়ার জিন (ডি এন এ) এর যে অংশে এই বিষাক্ত প্রোটিন  উৎপাদনকারী জিন রয়েছে তাকে সংগ্রহ করে তুলা, ভুট্টা ইত্যাদি ফসলের ডি এন এর মধ্যে প্রতিস্থাপন করা হয়। ফলে ঐ তুলা ও ভুট্টা গাছের দেহেই বিষাক্ত প্রোটিনটি উৎপন্ন হয় ও রোগপোকাদের মেরে ফেলে ও আক্রমণ প্রতিহত করে। এই ভাবে মানুষের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহে অন্য জীবের জিন সংস্থাপন করে নানা সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। যেমন কম জলে যে সমস্ত উদ্ভিদ জন্মায় তাদের বিশেষ জিন সংগ্রহ করে খাদ্য ফসলে সেই জিন অন্তর্ভুক্ত করে শুকনো মাটিতে সেই ফসল ফলানোর প্রচেষ্টা চলছে। তেমনি নোনা জমিতে চাষের উপযুক্ত বীজ তৈরি করা যেতে পারে, খাদ্যগুণ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এই সমস্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভবিষ্যতের জি এম বীজ হতে পারে ভবিষ্যতের খাদ্য সমস্যা সমাধানের পথ।

রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)

Published On: 08 July 2019, 11:24 AM English Summary: GM-seeds-good-or-bad-future-researches-will-reveal

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters