চাষাবাদের এক নতুন কার্যক্রম গ্রিনহাউজ। গ্রিনহাউস ঠিকঠাক বানাতে পারলে এই চাষ পদ্ধতিতে লাভের পরিমাণ অনেক। বর্তমানে গ্রিনহাউজের ব্যবহার প্রচুর হচ্ছে। গ্রিনহাউজ ব্যবহারের প্রথমদিকে খরচ ছিল অনেক। আধুনিক প্রযুক্তিতে এখন অল্প খরচেই গ্রিনহাউজ বানানো যায়। গ্রিনহাউজ চাষাবাদে অনেক তরুণ তরুণী বিনিয়োগ করে লাভের মুখ দেখছেন।
গ্রিনহাউজের শুরুটা শীতপ্রধান দেশের থেকে হয়েছিল। সেখানকার জলবায়ু গ্রীষ্মকালীন এলাকার শাকসবজি জন্মানোর উপযোগী নয়। তাই সেসব দেশে গ্রীন হাউজ এর কৃত্রিম-উষ্ণ পরিবেশে শাকসবজি ও বিভিন্ন ফলের চাষ করা হয়। শেডের ভেতর সবুজ শাকসবজি, ফলমূল চাষের কারণে এর নাম গ্রিনহাউস।
গ্রিনহাউজ বানানোর পদ্ধতি: (Making of Greenhouse)
গ্রিনহাউজ বানাতে গেলে লোহার কাঠামোর চারিদিকে ও ছাদে স্বচ্ছ আবরণ দিতে হবে। গ্রিনহাউজ একবার বানিয়ে ফেলতে পারলে কম করে ১০ বছর অনায়াসে চাষ করা যাবে। সূর্যের আলো গ্রিনহাউজে সঠিক পরিমাণে প্রবেশ করে। অতিরিক্ত সূর্যালোক থেকে আসা উত্তাপ ফসল নষ্ট করতে পারে না। গ্রিনহাউস পদ্ধতিতে চাষ করলে লাভের পরিমাণ ভালোই হয়। গ্রিনহাউজের মাধ্যমে আলো, তাপ, কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং জলীয়-বাষ্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারা যায়। গ্রিনহাউজে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ যাতে না বাড়ে যার জন্য এর ছাদে একাধিক জানলা লাগানো হয়। এরফলে অতিরিক্ত তাপ ও জলীয় বাষ্প বেরিয়ে যায় এবং উদ্ভিদের শ্বসন-প্রস্বেদনে কোনও অসুবিধা থাকে না।
গ্রিনহাউজে উৎপাদিত সব্জি (Vegetables cultivating)
গ্রিনহাউজে উৎপাদিত ফসল সাধারণ ফসলের থেকে অনেকবেশি কীটনাশক ও রাসায়নিক মুক্ত, এর ফলে গ্রিনহাউজের ফসল বেশি স্বাস্থ্যকর একথা বলাই যায়। বলা যেতেই পারে গ্রিনহাউজের ফসল, মাঠের ফসলের সমানুপাতিক হতে পারে।
গ্রিনহাউজ বানাতে জি.আই পাইপ, এম.এস অ্যাংগেল, ফাইবার গ্লাস, পলিয়েস্টার, কাঁচ, অ্যাক্রিলিক ইত্যাদির প্রয়োজন। দামী জিনিসের মাধ্যমে গ্রিনহাউজ বানালে খরচ বেড়ে যাবে। আর্থিক সামঞ্জস্য বজায় রেখে কম দামের ভেতর কাঠ দিয়ে তৈরী কাঠামো বানিয়ে গ্রিনহাউজ পরীক্ষামূলক ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
পোকামাকড়, জীবাণু ও রোগের নিয়ন্ত্রণ (Weed management)
গ্রিনহাউজ কৃষিকার্যের অন্যতম সুবিধা হল পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যায়। ফলে গ্রিনহাউজ ফসলে রোগ অথবা কীটপতঙ্গের দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনা কম। খুব কম পরিশ্রমেই গ্রিনহাউজকে তাই যেটুকুনি সামান্য পোকামাকড় হয় তার থেকে রক্ষা করা যায়।
কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে গ্রিনহাউজ প্রযুক্তি অত্যন্ত দরকার। আমাদের দেশ যেমন বিচিত্র আবহাওয়া এবং জলবায়ু সমৃদ্ধ, তাতে গ্রিনহাউজ পদ্ধতিতে কৃষিকাজ অত্যন্ত উপযোগী। অতিরিক্ত ফলন পাওয়ার জন্য গ্রিনহাউজ পদ্ধতি বর্তমান প্রযুক্তিশিক্ষিত চাষিদের অন্যতম অবলম্বন।
আরও পড়ুন:
Terrace Poultry Farming: জেনে নিন ছাদে মুরগি পালন করার সহজ পদ্ধতি
গ্রিনহাউজের জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ (Primary steps for Greenhouse)
১) জমি সংরক্ষণ-
গ্রিনহাউজ পদ্ধতিতে অল্প জমি লাগলেও, জমি যদি একদমই না থাকে তাহলে এই কাজ করা খুবই কঠিন। তাই গ্রিনহাউজ ব্যবসা শুরু করার আগে জমি সংরক্ষণ জরুরি। সে যে করেই, নিজের জমি বা ভাড়া করা জমি, এই ব্যবসা করার জন্য মোটামুটি অনুপাতে জমি সংরক্ষণ আগে থেকেই করে নিতে হবে।
২)জলের ব্যবহার
জল যে কোনও ধরনের কৃষিকার্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গ্রিনহাউজ শুরু করার আগে জলের ব্যবস্থা তাই করে নিতে হবে। আশেপাশে যদি জলের ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে যত তাড়াতাড়ি হয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩) প্রয়োজনীয় অর্থ -
জমি ও জল ছাড়াও গ্রিনহাউজ বানাতে দরকার প্রয়োজনীয় টাকার। যদি ঠিকঠাক অর্থ সংগ্রহ না হয়, তাহলে গ্রিনহাউজ বানানো কষ্টকর। প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকলে গ্রিনহাউজের ফসল উৎপাদনের বিনিয়োগেও অসুবিধা হতে পারে।
Share your comments