সবজির ক্ষেত্রে বেগুন (Eggplant) হল চাহিদার বাজারে সেরা সবজি। কিন্তু এই বেগুন চাষে ডাটা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার উৎপাতে চাষিদের নাজেহাল অবস্থা। তারা বাস্তব ক্ষেত্রে এই কীটের আক্রমণ রুখতে না পেরে প্রায় ২/৩ দিন অন্তর কীটনাশক স্প্রে করে থাকেন। ফলে নিটোল চকচকে লোভনীয় বেগুনের মধ্যে কি পরিমান বিষ থাকে তা সহজেই অনুমান করা যায়। ডাঁটা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার ক্ষেত্রে এটি ‘Monophagous’ হওয়ায় বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানী একের পর এক নতুন মলিক্যুল ব্যবহারে আনলেও চাষিদের অতিরিক্ত ব্যবহারে অল্পকিছুদিনের মধ্যেই পোকার মধ্যে ‘Pesticide Resistance’ গড়ে তুলেছে। ফলে আবার বেশী দামের নতুন কীটনাশক বারবার প্রয়োগ করতে হচ্ছে।
পরিচ্ছন্ন চাষবাসের সঙ্গে বীজ শোধন, সুস্থ চারা তৈরি আর প্রাথমিক প্রতিরোধী স্প্রে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি। সবজি চাষে নিম্নোক্ত কর্তব্যগুলি পালন করলে রোগ পোকার আক্রমণ অনেকটাই ঠেকানো যাবে তেমনই IPM মেনে পরিবেশ বান্ধব কৃষিকে অবলম্বন করা যাবে।
সময় ভেদে চাষে আবশ্যক কিছু কাজ –
-
গ্রীষ্ম শুরু হবার সময় জমিকে গভীর চাষ দিয়ে রোদ খাওয়ানো।
-
বর্ষাকালে আবশ্যিক ও অন্যান্য মরশুমে জল নিকাশী সুনিশ্চিত রেখে জমি তৈরি।
-
প্রথম চাষে জৈব সারের সঙ্গে ট্রাইকোডার্মা ও সিউডোমোনাস প্রয়োগ।
-
নিম খোল বা নিম দানা প্রথম চাষে জৈব সারের সঙ্গে ব্যবহার।
-
বীজশোধন, বীজতলা তৈরি ও পারলে লঙ্কা, টমাটোতে বীজতলার চারপাশে ৪০ মেশের মশারি ঘেরা।
-
লঙ্কা, বেগুন ও টমাটো চারা রোয়ার আগে ইমিডাক্লোরপিড (৭০% ডব্লু জি) ১ গ্রাম প্রতি লিটার জলের দ্রবণে শিকড় শোধন আর কপি চারার শিকড় ট্রাইকোডারমা ও সিউডোমোনাসের দ্বারা শোধন।
-
সবজির বৃদ্ধি দশায় দু-তিন বার নিমজাত কৃষি বিষ প্রয়োগ (পোকা না থাকলেও)।
-
বেগুন, কপি, কুমড়ো সবজিতে ল্যাদা প্রতিরোধী ফেরোমোন ফাঁদ লাগানো ও লঙ্কা, টমেটো, অন্যান্য সবজিতে শোষক পোকা নিয়ন্ত্রক হলুদ আঠালো ফাঁদ লাগানোর সঙ্গে জমিতে পাখি বসার জায়গা করে দেওয়া।
-
বেগুন, লঙ্কার প্রথম চাপানের সময় গাছ পিছু কয়েক দানা দানাদার কীটনাশক প্রয়োগ।
-
রোগ/কীট আক্রমণ বেশি হলে কোন একটি রোগ/ কীটনাশক ব্যবহার না করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ২/৩ টি ওষুধ স্প্রে করা।
সবজির রোগ পোকার সুসংহত নিয়ন্ত্রণে -
(ক) চারা ধ্বসা -
সবজির ক্ষেত্রে চারাতলায় চারা ধ্বসা একটি প্রধান রোগ যে ক্ষেত্রে থায়োফ্যানেট মিথাইল ১.৫ গ্রাম বা মেটালাক্সিল + ম্যানকোজেবের মিশ্র ছত্রাকনাশক ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে স্প্রে করতে হবে।
(খ) গোড়া পচা রোগ -
বেগুন জাতীয় সবজি তো বটেই,তার সঙ্গে এখন অনেক সবজিরই গোঁড়া পচা রোগে উপরের ছত্রাক নাশকের সঙ্গে কাসুগামাইসিন বা ভ্যালিডামাইসিন ২ মিলি প্রতি লিটার একসাথে গোঁড়া ভিজিয়ে স্প্রে করা দরকার আর নাইট্রোজেন ঘটিত সার কিছুদিন বন্ধ রাখা দরকার।
আরও পড়ুন - শেড নেটে পান চাষ পদ্ধতি ও তার রোগ ব্যবস্থাপনা
কৃষি গবেষণা এরিয়ান ইনডাসট্রি সোলার প্যানেলযুক্ত ফেরোমোন ফাঁদ বাজারে নিয়ে এসেছে যা ঐ পোকার পূর্ণাঙ্গ মথকে আকৃষ্ট করে। এই ফাঁদের গঠনে একটি পাত্রের উপর দুটি প্রকোষ্ঠে বেগুনের ডাঁটা ও ফলছিদ্রকারী পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করার ফেরোমোন ট্যাবলেট থাকে। রাতেও ফাঁদটিকে কার্যকরী করে স্ত্রী ও পুরুষ উভয় পোকাকেই আলো দিয়ে আকৃষ্ট করে। পাত্রটিতে কিছুটা কীটনাশক মেশানো জল বা কেরোসিন রাখলে পূর্ণাঙ্গ পোকাগুলি তাতে পড়ে মারা যাবে। সকালে সোলার প্যানেলের সাহায্যে ছোট ব্যাটারী চার্জ হয়ে রাতে জ্বলতে থাকে। বেশীরভাগ ক্ষতিকারক কীটের মতই বেগুন এবং অন্যান্য ফসলের এই পোকার পূর্ণাঙ্গ মথ রাতে সক্রিয়(Nocturnal) হয়। ফলে পোকাকে হাতে ও ভাতে দু’ভাবেই মেরে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি আজ বিপ্লব এনে ফেলেছে।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এরিয়ান ইনডাসট্রি তাদের ডিস্ট্রিবিউটর ও প্রতিনিধি দ্বারা ও সরকারী ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা ফার্মার্স প্রডিউসার কোম্পানীগুলি দ্বারা এই ফাঁদের সফল বিপনন করছে।
তথ্য সহায়তা : ড. শুভদীপ নাথ
Share your comments