বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে চাষের জমির পরিমাণ কমছে। একদিকে যেমন জনসংখ্যা বাড়ছে তেমনি প্রয়োজন হচ্ছে অতিরিক্ত খাদ্য। এদিকে কীটনাশক প্রয়োগ করে যে ফসল ফলানো হচ্ছে তাতে রয়েছে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা। তাই, এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে হাইড্রোপনিক্স চাষাবাদ (Hydroponics cultivation) ভবিষ্যতের দিশারী হয়ে উঠেছে |
হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতি কি(What is Hydroponics agriculture)?
হাইড্রোপনিক (Hydroponic) একটি অত্যাধুনিক কৃষি পদ্ধতি। অতি লাভজনক ফসলের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাটির পরিবর্তে (soilless farming) জলে গাছের প্রয়োজনীয় খাবার (Nutrient) সরবরাহ করে ফসল উৎপাদন করা হয়। যেখানে স্বাভাবিক চাষের জমি কম সেখানে বাড়ির ছাদ, উঠোন, পলি টানেল এবং নেট হাউজে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি ও ফল উৎপাদন হয়।
এই পদ্ধতিতে চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল সারা বছরই চাষ করা যায় এবং উৎপাদিত ফসলে কোনও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। সর্বোপরি, মাটি ছাড়াই (Soil-less farming) ফসল উৎপাদন করে খাদ্যের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
আরও পড়ুন - Monsoon Gardening: এই বর্ষায় ছাদ-বাগানের যত্ন কিভাবে নেবেন?
অনুর্বর এবং উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকায় যেমন এই পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করা যাবে তেমনি শহরের বদ্ধ জায়গায় ভালো মানের ফসল উৎপাদন করে লাভবান হওয়া সম্ভব। এটি পরিবেশবান্ধব এবং এই পদ্ধতির চাষে কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম বলে ফসলে কোনো পেস্টিসাইড বা কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। ফলত, এই পদ্ধতিতে চাষ করে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত সবজি-ফল উৎপাদন সম্ভব।
চাষের পদ্ধতি(Farming method):
হাইড্রোপনিক পদ্ধতি হচ্ছে মাটিবিহীন ফসল ও সবজি চাষের পদ্ধতি। এ পদ্ধতির মূলনীতি হল গাছের অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান জলের মধ্যে সরবরাহ করে প্লাস্টিকের ট্রে, বালতি বা বোতলে ফসল উৎপাদন করা। প্রায় সব শাক- সবজি ও ফলমূল হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। যেমন, সবজির মধ্যে আছে লেটুস, গিমা, কলমি, ধনেপাতা, বাঁধাকপি, টম্যাটো, বেগুন, ক্যাপসিকাম, ব্রোকোলি, ফুলকপি, শসা, মেলন, স্কোয়াস ইত্যাদি। ফলের মধ্যে রয়েছে স্ট্রবেরীর চাষ। তাছাড়া ফুল চাষও সম্ভব যেমন গাঁদা, গোলাপ, অর্কিড, চন্দ্রমল্লিকা ইত্যাদি |
সাধারণত ২ উপায়ে দুই উপায়ে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়।
১) সঞ্চালন পদ্ধতি (Circulating System) এবং
২) সঞ্চালন বিহীন পদ্ধতি (Non Circulating System)
সঞ্চালন পদ্ধতি(Circulating System):
এই পদ্ধতিতে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানসমূহ যথাযথ মাত্রায় মিশিয়ে একটি ট্যাঙ্কের মধ্যে নেওয়া হয়। এরপর পাম্পের সাহায্যে ট্রেতে পুষ্টি দ্রবণ (Nutrient Solution) সঞ্চালন করে ফসল উৎপাদন করা হয়। প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা পাম্পের সাহায্যে এই সঞ্চালন প্রক্রিয়া চালু রাখতে হয়।
সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতি(Non-Circulating System ):
এই পদ্ধতিতে একটি ট্রেতে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান পরিমিত মাত্রায় সরবরাহ করে সরাসরি ফসল উৎপাদন করা হয়। এক্ষেত্রে খাদ্য উপাদান মিশ্রিত দ্রবণ ও তার উপর কর্কশীটের মাঝ বরাবর ৫-৭ সেমি জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে এবং কর্কশীটের উপরে ৪-৫ টি ছোট ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে যাতে সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে। এতে গাছ কর্কশীটের ফাঁকা জায়গা থেকে তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সংগ্রহ করতে পারে। ফসলের প্রকারভেদে সাধারণত ২-৩ বার এই খাদ্য উপাদান ট্রেতে যোগ করতে হয়। এই পদ্ধতিতে কোনও বৈদ্যুতিক মোটর, পাম্প বা পাইপ ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। প্লাস্টিক বালতি, বোতল ইত্যাদি ব্যবহার করে বাড়ির ছাদ, বারান্দা এবং খোলা জায়গায় সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করা যায়। এতে খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
এই পদ্ধতিতে চাষ করলে বিপুল লাভের সম্ভাবনা দেখা যায় | জৈব উপায়ে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করে কৃষকদের আর্থিক উন্নতিও ঘটে বিপুলভাবে |
Share your comments