নির্মলচর, ডিহিডুমুরিয়া, খামারদিয়াড়, নয়াখরিদা বানুপুর, চর জাজিরিয়া, চর ডুমুরিয়া, নশীপুর, হাসানপুর, আলাইপুর এইসব মৌজা অঞ্চলগুলিতে দীর্ঘদিন যাবত কলাই চাষ হয়ে আসছে। এই সময় যে কলাইটা পৌষ মাঘ মাসে জমি থেকে ওঠে। বোনা হয়। মাদ্র মাসের শেষের দিকে। চলতি কথায় এটাকে হারি কলাই, আবার কেউ কেউ মাসকলাই ও বলে থাকেন। বন্যার জল নেমে যাবার পর সাথে সাথে কলাই ছিটিয়ে দেওয়া হয়।
কৃষকরা জানালেন এবছর করাই গাছ হলেও কলাই গাছে ফুল ফল ভাল আসেনি। কিছু কিন্তু ক্ষেত্রে অল্প স্বল্প কলাই ধরেছে। বাকী কলাই ভুয়া হয়ে গেছে। চর এলাকার বলা যেতে পারে এক মাত্র ফসল করাই। আর এই কলাই ফলন না হওয়ায় কৃষকরা মাথা ভাঙছেন। নশীপুর এবং খামারদিয়াড় মৌজাকে স্পেশালি সরকারি বীজ দেওয়া হয়েছিল সেগুলিতেও কোন ফুল ফল হয়নি। গাছ হয়েছে ভাল। কৃষকরা এগ্রিকালচার দপ্তরে তাদের দুর্দশার কথা জানিয়েছেন তবে ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা এ ব্যপারে সরকারী সাহায্য দেবার ব্যাপারে আশ্বাস দিতে পারেননি।
আরও পড়ুনঃ জলের অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষকরা,অবশেষে হাসি ফুটল কৃষকদের মুখে
নির্মলচরের কৃষক হাবিব মুন্সি জানালেন তিনি ১৫ বিঘা কলাই বুনেছেন। সবটাই বাড়ির বীজে। তাতেও খুব ভাল ফল ধরেনি বলে মুপি সাহেব জানালেন। অনেক জমির কলাই বুড়ে ফেলতে হচ্ছে, গরুকে খাইয়ে দিতে হচ্ছে। বীজ এবং আবহাওয়ার কারণে হয়ে থাকতে পারে বলে হাবিব মুন্সি মনে করেন। তিনি আরো জানালেন যেগুলি হাইব্রিড বীজ বোনা হয়েছিল সেগুলি সম্পূর্ণ কুয়া, কোন ফুল ফল ধরেনি। গত বছর যেখানে বিদায় গড়ে ৬ মন ফলন পেয়ে ছিলেন। দাম পেয়েছিলেন ৮০০০, আট হাজার থেকে দশ হাজার টাকা কুইন্ট্যাল। এবছর গড়ে বিঘায় ১ দেড় মন ফলন হতে পারে বলে তিনি জানালেন। নির্মলচরের তাপস মণ্ডল ২০ বিঘা কলাই চাষ করেছেন। তিনিও একই কথা বললেন।
রানীতলা থানার সহকৃষি অধিকর্তা মানস কুমার ঘোষ জানালেন কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। যেগুলি শংসিত বীজ নয় সেগুলিতে বেশী আক্রমন দেখা যাচ্ছে। আবার যারা বাড়ির বীজ বুনেছিলেন সেগুলিরও অবস্থা ভালো নয়। এমনকি সরকারী বীজ যেগুলি বিতরন করা হয়েছে সেগুলির ক্ষেত্রেও অল্প বিস্তর সমস্যা পাওয়া গেছে। তিনি আরও জানালেন যে শুধু মুর্শিদাবাদ ই নয়, নদীয়া জেলাতেও এ ঘটনা ঘটেছে বলে খবর এসেছে। মানস ঘোষ আনালেন মূলতঃ আবহাওয়া এবং কিছুক্ষেত্রে বীজের কারনে এটা হয়েছে। এবছর শীত প্রায় আসেনি বললেই চলে। এটা একটা প্রধান কারন। ওই কলাই ফলন না হওয়ার ফলে অনেক কৃষকই সর্বস্বান্ত বলে জানালেন। তবে আমাদের কাছে তেমন কোন ব্যবস্থা নেই যে কৃষকদের সাহায্য করব। তবে আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এটা জানাব ।
আরেকজন চাষী মন্টু সেখ জানালেন নির্মলচরের একটা বড় অংশে বলাই ছাড়া অন্য কোন ফসল হয়না। কারণ বি.এস.এফ লাল গরু নিয়ে যেতে দেয়না। সেখানে একমাত্র কলাই ছিটিয়ে দিয়ে কলাই চাষ হয় অন্য কোন চাষ সেখানে হয় না। এই এলাকার চাষীরা একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে গেলেন। সরকার বাহাদুর বা বি.ডি.ও. বা এ.ডি.ও. কোন সাহায্যের আশ্বাস দিতে পারেননি। আমরা একেবারে অসহায় ভাবে বেঁচে আছি, জানালেন মন্টু দেখ। অন্যান্য এলাকায় তিল, গম, ধান, পাট, ভুট্টা এই চাষ করা গেলেও নির্মলচর এলাকায় কলাই ছাড়া আর কোন চাষ করা যায় না।
ADA Admin মানসকুমার ঘোষ জানালেন গড়ে ২-৩ মন করে বিঘাপ্রতি কলাই ফলন হতে পারে এবছর। যা চাষীদের কাছে খুবই বেদনাদায়ক।
Share your comments