গুজরাটের কেসার আম বিশ্বে বিখ্যাত। গ্রীষ্মকালে এটি বহু প্রতীক্ষিত ফল। তবে দুঃখের বিষয় এ বছর কেশর আম ঘূর্ণিঝড় তাউকাতের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশিরভাগ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে এবং বাকী তালাল মার্কেট ইয়ার্ডে প্রতি কেজি ৪ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে | সে যাই হোক, কিন্তু এই আমের জনপ্রিয়তা এতটাই যে একে "আমের রানী" (Queen of mangoes) বলা হয় |
কেশর আমের উৎস (Origin of Kesar Mango):
গুজরাটের উপকুলের নিকটবর্তী ব্যাস্ততম শহর জুনাগড়ে কেশর আমের উৎপত্তি হয়েছিল। এই আম প্রথম ১৯৩১ সালে সালে ভান্থালীতে চাষ করা হয়েছিল | এরপরে, জুনাগড় লাল ডোরি ফার্মে অবস্থিত গিরনার পর্বতের পাদদেশে এই জাতের প্রায় ৭৫ টি গ্রাফ জন্মেছিল।
কিভাবে কেশর আমের নামকরণ হয়?
১৯৩৪ সালে, জুনাগড়ের তৃতীয় নবাব মুহাম্মদ মহাবত খান আমের ফলের সুন্দর কমলা অংশের দিকে তাকিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, "এটিই কেসর।" হিন্দি এবং গুজরাটিতে কেশরকে বলা হয় "জাফরান"। সেই থেকে এই সুস্বাদু আমের নামকরণ হয় "কেশর" |
কেশর আম চাষের সময় (Farming time):
বর্ষা শেষ হওয়ার পর অক্টোবর মাসের দিকে কেশর আম চাষ (Kesar mango farming) শুরু হয়। ফল এপ্রিল-মে মাসে ফসল কাটার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। সবুজ পরিপক্ক পর্যায়ে ফলের ফলন হয়।
কোথায় কেশর আমের চাষ হয় (Kesar mango cultivation area)?
পশ্চিম ভারতের গুজরাটের জুনাগড়ের নিকটে গিরনার পাদদেশে গির কেশর আম নামে পরিচিত এই কেসর আমের সুনির্দিষ্টভাবে চাষ হয়।
গুজরাটের সৌরাশত অঞ্চলের আমরেলি ও জুনাগড় জেলাগুলিতে এটি প্রায় ২০০০০ হেক্টর জমিতে কেশর আম জন্মায়। এই আম যেসব জেলায় চাষ করা হয় সেগুলি হলো, জুনাগড়, তালালা, বন্টালি, মেনদারদা, কোডিনার, মালিয়া, বিশাবাদার, এবং জুনাবাদগড় জেলার উনা অঞ্চল এবং আম্রেলি জেলার খাম্বা উপজেলা। এই অঞ্চলগুলি থেকে আমের আনুমানিক বার্ষিক উৎপাদন হয় ২ লাখ টন।
কেবল গিরের পাদদেশে জন্ম নেওয়া আম চাষের নামটি হলো গির কেশর আম। তালালা গির, যাকে আমের মার্কেট ইয়ার্ডও বলা হয়, এটি গির কেশর আমের জন্য সবচেয়ে বড় বাজার। এই ইয়ার্ডটি জাতীয় উদ্যান থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
কেশর আম GI স্বীকৃত (GI tag):
গির কেশর আমকে জিআই (GI) ট্যাগ দেওয়ার বিষয়টি প্রথমে গুজরাট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন লিমিটেড (GAIC) দ্বারা প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরে, ২০১০ সালে, জুনাগড় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর জন্য একটি আবেদন দায়ের করা হয়েছিল| ২০১১ সালে, গির কেশর আমগুলি চেন্নাইয়ের রেজিস্ট্রির মাধ্যমে জিআই (GI) ট্যাগ পেয়েছিল।
এখন, "গির কেশর" নামটি গুজরাটের গির অঞ্চলের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কেশর আম এইভাবে, গুজরাট রাজ্য থেকে প্রথম কৃষি উৎপাদন এবং সমগ্র ভারতে দ্বিতীয় আমের জাত হিসাবে জিআই ট্যাগ পেয়েছে। জিআই ট্যাগ প্রাপ্ত প্রথম জাতটি হ'ল উত্তর প্রদেশের দশেরি আম।
কেন কেশর আমকে "আমের রানী" বলা হয়?
কেসার আম কীভাবে আমের রানী বলা হয়েছিল তা ঠিক জানা যায়নি। একইভাবে, আলফোনসো আম, যা গুজরাটের আর একটি শীর্ষ জাত, তাকে আমের রাজা বলা হয় | উভয় জাতই কেবল গুজরাটিই নয়, ভারতীয় এবং বিদেশিরাও সমানভাবে জনপ্রিয় করে তুলেছেন | এই দুটি অত্যন্ত প্রিয় জাত ছাড়াও গুজরাটে অন্যান্য আমের জাতের যেমন দাসেহরি, লঙ্গারা, নীলম, তোতাপুরী, দেশি, রাজাপুরি এবং অন্যান্য আম উৎপাদন হয় |
আরও পড়ুন - Orchid Farming: আধুনিক পদ্ধতিতে উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে অর্কিডের চাষ
কচ্ছ উপকূলেও কেশর আমের চাষ হয় | বর্তমানে, গির কেশর আমের থেকে এই কচ্ছ কেশর আমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি | এবছর গড় কেশর আম ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কচ্ছের কেশর আমের বাজারজাত চাহিদা বাড়ায় এই অঞ্চলের কৃষকরা প্রচুর মুনাফা অর্জন করে | জুনের প্রথম ১০ দিনের মধ্যে গির ফসল কাটার ১ মাস পরে কচ্ছ কেশরের ফসল কাটা শুরু হয়। কচ্ছ কেশরের স্বাদ গির কেশরের চেয়ে আলাদা | তবে, কচ্ছ কেশর আম প্রেমীদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Organic Farming: গবাদি পশুর জৈবিক কার্যাবলী মাটিকে উর্বর করে তোলে
Share your comments