আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের ডাল জাতীয় ফসলের চাষ হয়। এর মধ্যে খেসারি ডাল অন্যতম। সঠিক পদ্ধতিতে খেসারি ডালের চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় | লশস্যের মধ্যে খেসারি হল সবচেয়ে কষ্টসহিষ্ণু ফসল। ঠান্ডা সহ্য করার ক্ষমতা যেমন আছে, তেমনই খরা ও অতিরিক্ত জল জমাও সহ্য করতে পারে। খরাতেও টিকে যায় বলে এর নাম দুর্ভিক্ষের ফসল। অথচ, সস্তার এই ডাল খাদ্যগুণে ভরপুর। শুকনো ডালে ৩১.৯ শতাংশ প্রোটিন, ৫৩.৯ শতাংশ শর্করা ও ০.৯ শতাংশ তৈল থাকে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ও ভিটামিন থাকে। সস্তার এই ডাল শস্যের চাহিদা বেশি থাকায়, এই ডাল চাষে (Khesari Dal) কৃষকবন্ধুরা উপকৃত হয়ে থাকেন |
জাত:
খেসারির চাষে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে নতুন জাত বিআইওএল ২১২— বোয়ার মাত্রা ০.১ শতাংশের কম এবং ফলন হেক্টর প্রতি প্রায় ১.৫ টন।
মাটি (Soil):
এঁটেল মাটিতে খেসারি চাষ ভালো হয়ে থাকে। তবে সব রকমের মাটিতেই হয়। লোনা সহ্য করার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য।
বীজ বপন:
মাঠের পাকা ধান কাটার ১০-১২ দিন আগে জমিতে ছড়িয়ে দিলে বীজ লাগে বিঘা প্রতি ১৫-১৬ কেজি। একে পয়রা চাষ বলে। খেসারির মতো মুসুর, সর্ষে ইত্যাদিও বোনা যায় এই ভাবে। দান বা অন্য ফসল কেটে নেওয়ার পর পড়ে থাকা জমিতে চাষ দিয়ে ২৫-৩০ সেমি দূরত্বে বীজ বুনলে বীজ লাগে বিঘা প্রতি ১০-১১ কেজি |
আরও পড়ুন - Wheat Farming: জেনে নিন গমের আধুনিক চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা
লাঙল দেওয়া জমিতে বীজ বোনার আগে বিঘা প্রতি ৬-৭ কেজি ডিএপি দিতে পারলে খুব ভাল। পয়রা ফসলে বীজ বোনার ৩০-৪৫ দিনের মাথায় ২ শতাংশ ডিএপি দ্রবণ (এক লিটার জলে ২০ গ্রাম) স্প্রে করতে পারলে ভাল হয়। সার এক রাত ভিজিয়ে রাখলে আরও ভাল। ফুল আসার সময় ২ শতাংশ ইউরিয়া দ্রবণ (এক লিটার জলে ২০ গ্রাম ইউরিয়া) গাছে স্প্রে করলে ফলন অনেকটাই বেশি হয়।
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
খেসারির ফসলের ক্ষেত্রে সারের প্রয়োজন হয় না। একক ফসলের জন্য অনুর্বর জমিতে হেক্টরপ্রতি সার ব্যবহার করতে হবে, ৪০-৪৫ কেজি ইউরিয়া, ৮০-৮৫ কেজি টিএসপি এবং ৩০-৪০ কেজি এমওপি |
সেচ:
জমির মাটিতে থেকে যাওয়া জলে খেসারি চাষ হয়ে যায়। তবে ৬০-৭০ দিনের মাথায় একবার সেচের ব্যবস্থা করতে পারলে ফলন বাড়ে।
পরিচর্যা:
বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে নিড়ানী দ্বারা আগাছা দমন করা যেতে পারে। অতিবৃষ্টি হলে জমিতে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য জল বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
রোগবালাই ও দমন (Disease management system):
খেসারীর ডাউনি মিলডিউ রোগ
রোগাক্রান্ত খেসারী গাছের পাতা কিছুটা হলদে হয়ে যায়। পাতার নীচে লক্ষ করলে ছত্রাকের অবস্থান খালি চোখেই দেখা যায়। রোগের মাত্রা বেশি হলে পাতা কুঁচকে ও ঝলসে যায়। এ ছত্রাকের জীবাণু মাটিতে ১-২ বছর বেঁচে থাকতে পারে।
প্রতিকার:
রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করতে হবে। রিডোমিল এম জেড (০.২%) ১২ দিন পরপর ৩ বার স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।
পাতা ধসা ও গোড়া পচা রোগ:
এই রোগের থেকে রেহাই পেতে বীজশোধন জরুরি—কেজি প্রতি বীজের জন্য ০.৫ গ্রাম বেনোমিল বা ২ গ্রাম কপার হাইড্রক্সাইড। পাতায় গুঁড়ো রোগ দেখলে ব্যবহার করতে পারেন দিনোক্যাপ (প্রতি লিটার জলে ০.৫ মিলিলিটার) বা প্রোপিকোনাজোল (লিটার প্রতি জলে ০.৭৫ মিলিলিটার)। জাব পোকার আক্রমণে কার্বোসালফান (১ লিটার জলে ২ মিলিলিটার) ও শুঁটি ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে অ্যাসিফেট বা কারটাপ (১ লিটার জলে যথাক্রমে ০.৭৫ বা ১ গ্রাম মাত্রায়)।
ফসল সংগ্রহ:
ফাল্গুন (মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ) মাসে ফসল সংগ্রহ করা যায়।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন -Student Credit Card: বুধবার থেকে পড়ুয়াদের ক্রেডিট কার্ড দেবে রাজ্য
Share your comments