কৃষিজাগরন ডেস্কঃ আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে বসতবাড়ির আনাচে-কানাচে ছায়াযুক্ত স্যাঁতসেঁতে জায়গায় কিংবা স্তূপীকৃত গোবর রাখার স্থানে ছাতার আকৃতির সাদা রংয়ের এক ধরনের ছত্রাক জন্মাতে দেখা যায়। একে আমরা ব্যাঙের ছাতা বলে অভিহিত করে থাকি। আগাছার মতো যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা এসব ছত্রাক খাবার উপযোগী নয়। অনুরূপ দেখতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের মাধ্যমে যে ব্যাঙের ছাতা উৎপাদিত হয়, তা অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং বিশ্বে সবজি হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই ব্যাঙের ছাতাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘মাশরুম’। এই প্রতিবেদনে আমরা মাশরুমের রোগ জীবানু ও তার প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব।
সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা না নিলে মাশরুমে বিভিন্ন রকমের রোগ জীবানু হতে পারে।
১. রোগ: সবুজ ছত্রাক (ট্রাইকোর্ডামা ভিরিডি) বন মাশরুমের ক্ষেত্রে সবুজ রঙের ছত্রাকের অন্তখণ দেয়া যায়।
প্রতিকারঃ ৪% ফরমালিন দ্রবনের মধ্যে তুলো ভিজিয়ে সবুজ অংশে লাগিয়ে দিতে হবে । সবুজ ছত্রাকের আক্রমণ ৬০% এর উপরে হলে আক্রান্ত সিলিন্ডারকে ঘরে থেকে দূরে কোন যায়গায় পুঁতে ফেলতে হবে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
আরও পড়ুনঃ কেন মাশরুম চাষ লাভজক ? জানুন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন কারন
কীট পতঙ্গঃ
২. মাছিঃ স্কাইড মাছি, ফ্লোরিড মাছি, সেসিড মাছি মাশরুম এবং স্পণ এর গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে মাশরুম অথবা খড়ের সিলিন্ডারে ডিম পাড়ে এবং যা থেকে লার্ভা উৎপন্ন হয় । লার্ভা মাশরুমের রস শুষে খায় এবং মাশরুমের গায়ে গর্ত করে বাসা তৈরী করে । ফলে মাশরুমের গুণমান এবং সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় ও বাজারজাত করণের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
প্রতিকার: প্রাপ্ত বয়স্ক মাছির অবাধ প্রবেশ বন্ধ করার জন্য দরজা, জানালায় ৩০ মেশের নাইলন নেট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ঘরের মধ্যে মাছি ধরার ফাঁদ ব্যবহার করা হতে পারে।
৩. পরজীবি (মাইটস)ঃ এরা মাশরুমের কোন ক্ষতি করে না। কিন্তু মাশরুম উৎপাদন ঘরে বেশী সংখ্যায় এদের উপস্থিতি কৃষকের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রতিকারঃ মাশরুমের ঘর এবং চারপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
৪. শামুকঃ এরা মাশরুমের কিছু অংশের রস শুষে খেয়ে ফেলে এবং পরিবর্তীকালে ঐ অংশে রোগ জীবানুর সংক্রমণ ঘটে।
প্রতিকার: মাশরুমের ঘর থেকে এদেরকে বাইরে ফেলে দিতে হবে এবং ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে।
৫. ইদুরঃ ইদুরের আক্রমণ সাধারণত নিম্ন মানের মাশরুমের (মাটির তৈরী) ঘরে দেখতে পাওয়া যায় । এরা মাশরুমের স্পন খায় এবং সিলিন্ডারের মধ্যে গর্ত তৈরী করে।
প্রতিকারঃ ইঁদুর মারার বিষ প্রয়োগ করতে হবে।
মাশরুম সংরক্ষণঃ
মাশরুম তাজা অবস্থায় খাওয়া উত্তম। টাটকা মাশরুম রান্না করে খেলে স্বাদ ও পুষ্টিগুণ সঠিকভাবে পাওয়া যায়। পলিথিন ব্যাগে সাধারণভাবে মাশরুম ১০-১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকে এবং ফ্রিজে টাটকা মাশরুম বেশ কয়েকদিন রাখা সম্ভব। তবে সাধারণ অবস্থায় পোয়াল ছাতু ১ দিন, বোতাম ছাতু ২-৩ দিন, ঝিনুক ছাতু ১-২ দিন রাখা যায় এবং রোদে শুকিয়ে মাশরুম অনেকদিন রাখা যায়।
আরও পড়ুনঃ জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষি
বর্তমানে সারা পৃথিবীতে মাশরুম খাদ্য হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে। কারণ, রোগমুক্ত স্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত মাশরুম রাখতে হবে আমাদের খাবার তালিকায়। মাশরুমে অনন্য শাকসবজি ও ফলের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি আমিষ থাকায় উন্নত বিশ্বের লোকেরা একে সবজি মাংস হিসেবে অভিহিত করে। তাছাড়া মাশরুম দিয়ে মাশরুম ফ্রাই, আমিষ সমৃদ্ধ স্যুপ, মাশরুম চিকেন স্যুপ, মাশরুম চিংড়ি, মাশরুম স্যান্ডউইচ, মাশরুম সস, মাশরুম পোলাও ও মাশরুম ওমলেট তৈরি করা যায়। গ্রামীন মহিলাদের স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে ছোট ব্যবসায়িক উদ্যোগ হিসাবে মাশরুম চাষের সম্ভাবনা অপরিসীম । মাশরুম তৈরীর বিভিন্ন কৌশলকে কাজে লাগিয়ে কম বয়সী শিক্ষিত বেকার ছেলে মেয়েরা মাশরুম থেকে বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী যেমন আচার, শুকনো মাশরুম, মাশরুমের বিস্কুট ইত্যাদি তৈরী করে বাজারে বিক্রী করে ব্যবসার পরিমান বড় করে তুলতে পারে।
Share your comments