দেশ স্বাধীনের পরও সরকারের কড়া নিয়ন্ত্রণে ঔষধির উদ্দেশ্যে চলতে লাগল আফিমের চাষ। কারণ আফিম থেকে দুটি ক্ষতিকারক নেশাদ্রব্যের উৎপত্তি হেরোইন এবং স্মেক। আর তাই এই চাষের জন্য শর্তসাপেক্ষে লাইসেন্স পেতে হয়।
গাম আফিম উৎপাদনের জন্য ভারতই একমাত্র দেশ যা জাতিসংঘের একক কনভেনশন অন নারকোটিক ড্রাগস (1961) দ্বারা অনুমোদিত। আফিমের গাম বা আঠাতে থাকে মরফিন, কোডেইন, থেবাইন। এসব স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে আমাদের ব্যথা, যন্ত্রণা উপশম বা দমন করে। এমনকি ক্যানসার রোগীদের ব্যথার উপশম এই মরফিন। কোডেইন দিয়ে বানানো হয় বিভিন্ন কাফ সিরাপ।
আরও পড়ুনঃ আফিম পর্ব ১: বাঙালির প্রিয় খাবারের তালিকায় পোস্ত এল কিভাবে?
যেহেতু ভারতে আফিমের আঠার ব্যবহার হয় তাই আফিম চাষিদের মূল কাজ হল ল্যাটেক্স সংগ্রহ করা। একটি গাছের ফুল থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ মরফিন উৎপাদন হয়। ল্যান্সিং হল উপযুক্ত পর্যায়ে একটি যন্ত্র দ্বারা অনুদৈর্ঘ্য বা পরিধি কাটা। এই কাজের জন্য দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
আরও পড়ুনঃ খরিফ ফসলে জিঙ্ক ও আয়রনের ঘাটতি
এবার প্রশ্ন হল যে এই আফিম চাষ ও তার ব্যবহার কীভাবে ভারত সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। NDPS ACT 1985 এর অধীনে ভারতে আফিম চাষ হয়। এই ধারা অনুযায়ী ভারত সরকার আফিম পলিসি বানিয়েছে। যোগ্যতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হল বার্ষিক নির্ধারিত হেক্টর প্রতি ন্যূনতম যোগ্যতার ফলন (MQY)-র দরপত্র। যে সকল চাষীরা উল্লিখিত MQY টেন্ডার করে এবং সাধারণ শর্তে নির্ধারিত লাইসেন্সের অন্যান্য শর্ত পূরণ করে তারা লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য হয়। লাইসেন্স দেওয়ার এই পুরো ব্যপারটি দেখেন CBN অফিসাররা। লাইসেন্স দেওয়ার আগে তাঁরা উল্লেখিত জমির পরিমাপ করে। যাতে কৃষকরা পরিমাপের অতিরিক্ত জমিতে চাষ করতে না পারে। পাশাপাশি কৃষকরা তাদের সমস্ত ফলন সরকারের কাছে টেন্ডার করে। লাইসেন্স পাওয়ার সময় সরকারের সঙ্গে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় সেই অনুযায়ী কৃষকদের টাকা দেওয়া হয়। এইভাবে সংগৃহীত আফিম পাঠানো হয় নিমুচ ও গাজীপুরে অবস্থিত সরকারি আফিম ও অ্যালকালয়েড কারখানায়।
তবে আফিম চাষ সহজ নয়। এর জন্য আফিম চাষের সঙ্গে যুক্ত কৃষক এবং এজেন্সির অফিসারদের বহু সমস্যার মুখে পড়তে হয়। যেহেতু প্রশাসনের তরফে আফিম চাষ সবসময় নজরে রাখা যায় না তাই এর অপব্যবহার বাড়ছে তরতরিয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর সমাধান ভারতে ওপেন কালটিভেশন বন্ধ করে ক্যাপটিভ মেথড ফারমিং ব্যবস্থা অনুসরন করা। তাছাড়া আফিম চাষের খেতে কৃষকদের দিনরাত পাহারা দিতে হয়। এমনকি অনেক সময় সমস্ত আইন মেনে চাষ করলেও সরকার লাইসেন্স বাতিল করে দেয়। যে পরিমাণ হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে কৃষকরা এর চাষ করে তাঁর সঠিক মূল্য পাওয়া যায় না। যেখানে খোলা বাজারে এই আফিম বিক্রি হয় প্রতি কেজি ১ লাখ টাকায় সেখানে সরকার প্রায় ২০০০ টাকা মুনাফা দেয়।
আরও পড়ুনঃ দু’তিন দিনেই আবহাওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন! হবে তুমুল বৃষ্টি
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বা পোকার আক্রমণে আফিম ফসলের ক্ষতি হলে CBN অফিসারদের জানাতে হয় এবং তাঁরা সমস্ত ফসল পুড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। উৎপাদিত আঠা সরকারের অধীনে যাওয়ার আগে এর উপর চলে বিভিন্ন পরীক্ষা।আফিমের সামঞ্জস্য, গুণমান, অমেধ্য এবং ভেজালের উপস্থিতি যাচাই করার পরেই এর মুনাফা পান কৃষকরা। কোনও আইন লঙ্ঘন করলে দিতে হয় মোটা জরিমানা।
আরও পড়ুনঃ মহাকাশে এবার ফুলের আগমন! অবিশ্বাস্য ছবি শেয়ার করল নাসা
ভারতে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং উত্তর প্রদেশ এই তিন রাজ্যে সবচেয়ে বেশি আফিমের চাষ হয়। কিছুদিন আগেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পোস্ত চাষের জন্য কেন্দ্রের কাছে চিঠি পাঠান। তবে সেই নিয়ে আপাতত কোন তথ্য জানায়নি কেন্দ্র। ঠিক এইভাবেই বছরের বছর এই দেশের মাটিতে উৎপাদিত হচ্ছে আফিম।
Share your comments