বিশুদ্ধ, পুষ্ট, রোগ-পোকামাকড় মুক্ত সঠিক জাতের ধান-বীজ উৎপাদন অত্যন্ত জরুরি | তবেই, ধান বাম্পার ফলন পাওয়া যায় | আদর্শ বীজতলায় ধানের (Paddy farming) সুস্থ-সবল চারা উৎপাদন এবং সঠিক সময়ে, সঠিক পদ্ধতিতে রোপণ ও যথাযথ অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা করা একান্ত প্রয়োজন।
তাই এই নিবন্ধে ধানের বীজতলা তৈরী ও বীজ উৎপাদন পদ্ধতি (Paddy Seed bed) সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে |
বীজতলা তৈরী (Seed bed making process):
শুকনো অথবা ভিজে (কাদানো) বীজতলা তৈরি করার জন্য নির্বাচিত জমিকে ২-৩ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে আলগা করে আগাছা মুক্ত করতে হয় । সাধারণত যতটা জমি রোয়া করা হয় তার ১/১০ অংশ জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়। অর্থাৎ ১ বিঘা( ২০ কাঠা বা ৩৩ শতক) জমি রোয়া করার জন্য ২ কাঠা বীজতলা প্রয়োজন।
বীজতলা তৈরী করার সময়:
বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ মাসে শুকনো বীজতলা এবং জ্যৈষ্ঠ – আষাঢ় মাসে ভিজে (কাদানো) বীজতলা তৈরি করা হয় ।
বীজতলার পরিমাপ:
দৈর্ঘ্য – প্রয়োজন অনুযায়ী, প্রস্থ – ১.২ থেকে ১.৩ মিটার এবং উচ্চতা – ১০ সেমি প্রয়োজন | দুটি বীজতলার মাঝখানে নালার পরিমাপ হবে ৩০ সেমি চওড়া ও ১০ সেমি গভীর।
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
প্রতি ১০ শতক বা ৬ কাঠা বীজতলার জন্য ১ টন পচা গোবর সার বা কম্পোস্ট প্রথমে ভালভাবে মিশিয়ে লাঙ্গল ও মই দিয়ে পচানোর জন্য ১ সপ্তাহ রেখে দিতে হয়। জমি তৈরীর শেষে মুলসার হিসাবে ২ কেজি হারে নাইট্রোজেন, ফসফেট ও পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে বৃষ্টিনির্ভর শুকনো বীজতলায় মূলসার হিসাবে সম্পূর্ণ ফসফেট ও পটাশ সার দিতে হবে এবং চারা তোলার ৭ – ১০ দিন আগে বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে জমিতে রস অবস্থায় ২ কেজি নাইট্রোজেন চাপান সার হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে। কাদানো বীজতলার ক্ষেত্রে বীজ বোনার ১৫ -২০ দিন পর প্রয়োজনবোধে ২ কেজি হারে নাইট্রোজেন চাপান সার হিসাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
জলসেচ:
বৃষ্টি না হলে সেচের বাবস্থা থাকলে শুকনো বীজতলায় নালার সাহায্যে হাল্কা সেচ দিতে হয়। ভেজা (কাদানো ) বীজতলার ক্ষেত্রে ছিপছিপে জল ধরে রাখতে হয়। পরে চারা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বীজতলায় জলের পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। তবে ২-৫ সেমির বেশী জল যেন না থাকে।
পরিচর্যা:
বীজতলার চারার বয়স ৮-১০ দিন হলে আগাছা পরিস্কার করা উচিত। মাজরা পোকা উপদ্রুত এলাকায় প্রতি ১০ শতক বীজতলাতে ৫ কেজি কারবফুরান ৩ জি বা ৬০০ গ্রাম ফোরেট ১০ জি বা ১.৫ কেজি কারটাপ ৪ জি প্রয়োগ করতে হবে। বীজতলায় ঝলসা বা বাদামি চিটে বেশি আক্রমন দেখা দিলে প্রতি লিটার জলে ১/২ গ্রাম ট্রাইসাইক্লাজোল ৭৫ % ডব্লু. পি বা ১ মিলি আইসোপ্রোথিওলেন ৪০ % ই. সি. বা ২ মিলি কাসুগামাইসিন ৩ % এস.এল স্প্রে করার সুপারিশ করা হয়।
আরও পড়ুন - Guava Farming: এই পদ্ধতিতে পেয়ারা চাষে আপনিও লাভ করতে পারেন দ্বিগুন
মাঘের মাঝামাঝির মধ্যে বোরো ধান রোয়া শেষ করা দরকার। বোরো ধানের ক্ষেত্রে ৫ সপ্তাহ বয়সের ৫-৬ টি পাতাযুক্ত চারা রোয়া হয়। বাদামী শোষক পোকা আক্রমণ প্রবন এলাকায় ৮ – ১০ লাইন অন্তর ১ লাইন করে রোয়া না করে ফাকা রাখা হয়।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Saffron Farming: জেনে নিন "লাল সোনা বা জাফরান" চাষের দুর্দান্ত পদ্ধতি
Share your comments