আমরা যেই চালের ভাত খাই তা সাধারণত সাদা। মিনিকেট, গোবিন্দভোগ, বাসমতি বিভিন্ন ধরনের চালের ভাত আমরা খেয়ে থাকি। শুনলে অবাক হবেন অনেকেই সাদা চালের পাশাপাশি কালো চালেরও উপস্থিতি বাজারে রয়েছে। দেশ জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বর্তমানে এই ব্ল্যাক রাইসের চাষ খুবই উন্নত প্রণালীতে করা হচ্ছে। ব্ল্যাক রাইস অর্থাৎ কালো চাল, বেগুনি চাল হিসাবে বাজারে জনপ্রিয়। ভারতের মনিপুরে এই কালো চাল প্রচুর পরিমানে চাষ হয়। মনিপুরে এই কালো চালের স্থানীয় নাম 'চক-হাও'।
কালো চাল দেখতে গাঢ় কালো রঙের হয়। রান্নার জন্য সেদ্ধ করা হলে এই চালের রং গাঢ় বেগুনি বর্ণ ধারণ করে। সাদা চালের থেকে বেশি পুষ্টিকর এই কালো চাল বিশ্ব জুড়ে ক্যানসার রোগ প্রতিরোধে এক বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে। শর্করার পরিমাণ কালো চালে সাদা চালের থেকে অনেকাংশে কম। এই জাতীয় চালে আয়রন ও ভিটামিন বি-এর মাত্রা অনেকটাই বেশি। কালো চালের পুষ্টিগুণ যথাক্রমে, ফ্যাট ১.৫ গ্রাম (৩%), কার্বোহাইড্রেট ১১%, আঁশ ৫%, ভিটামিন এ ২%, আয়রণ ৬%। অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত ও রোগ নিরোধক বলে এই কালো চালের চাহিদা পশ্চিমবঙ্গে ক্রমাগত বাড়ছে।
কালো চালের স্বাস্থ্যসম্মত দিক: (Healthy aspects of black rice:)
ব্ল্যাক রাইস অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর যা ক্যান্সার নিরোধক। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্ল্যাভিনয়েড কালো চালে অতিরিক্ত পরিমাণে থাকে বলে এই চালের রং কৃষ্ণবর্ণ। ক্যানসার ছাড়াও কালো চাল হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্নায়ূরোগের মতন অসুখ নিয়ন্ত্রণ করে। বৈজ্ঞানিকদের গবেষণায় প্রমাণিত কালো চাল নিয়মিত খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায় সাথে হার্ট এটাকের আশংকা কমে।
চাষের সঠিক সময়: (Exact time of cultivation)
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর পরিমাণে কালো চালের চাষ হচ্ছে। বাংলা থেকে অন্যান্য রাজ্যও রফতানি হচ্ছে এই রোগ নিরোধক আশ্চর্য চালের। এই রাজ্যের উৎপাদিত কালো চালের চাহিদা পাশ্চাত্যের দেশগুলোতেও ভালোরকমের রয়েছে। আমন ধানের মরশুমেই ব্ল্যাক রাইস চাষ করা আদর্শ সময়। বোরো মরশুমে এই চাষ হয় না। শ্রাবণের মাঝামাঝি এই ধান লাগানো হয়। চালের তুষ, চাল মিলের ছাই, চিটে গুড়, কেচো সার প্রভৃতি জিনিস ব্যবহার করে জৈবসার বানিয়ে তা চাষের জমিতে ব্যবহার করলে এই বিশেষ প্রজাতির ধানের চাষ ভালো হয়। মাজরা পোকা ও দানের পাতা মোড়া রোগ-বালাই থেকে এই ফসলকে বাঁচানোর জন্য মহুয়া খোল ও নিম খোল ব্যবহার করা উচিত বলে মনে করেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
ব্ল্যাক রাইস চাষের পদ্ধতি: (Black Rice Cultivation Method)
মূলত গোবরসার, সরষের খোল ডিকম্পোস্ট করে জৈবসার তৈরী করে নেওয়ার পর সে সার খেতে প্রয়োগ করতে হয়। এই বিশেষ প্রজাতির চালের দাম অনেকটাই বেশি। এই কারণে বহু চাষিভাই এই চাষে আগ্রহ পান না। পুরোপুরি জৈব উপায়ে এই চাষের জন্য সঠিক জায়গা থেকে ব্ল্যাক রাইসের বীজ জোগাড় করতে হবে। বীজ বপনের আগে কম করে তা ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। বীজ জলে ভেজানো হয়ে গেলে তা রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর শোধনের মতন অতীত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মাটিতে বীজগুলি বপন করতে হবে। ১৫-২০ দিন পরে ব্ল্যাক রাইসের চারা বের হয়।
Profitable Potato Farming - খুব কম খরচে আলু চাষ এবং রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
চাষের জমি তৈরি করে নিয়ে ১০/৮ ইঞ্চি দূরে দূরে হালকা ভাবে চারা রোপণ করা উচিত। নাইট্রোজেনের পরিমাণ যেই জমিতে বেশি সক্সেই জমিতে এই ধানের চাষ করা উচিত। পরিচর্যার মাধ্যমে চাষের জমি পরিষ্কার নিয়মিত করতে হবে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা এই চাষের জন্য আদর্শ। দুঃখের বিষয় এটাই বাজারে এই চাষের চাষিরা ফসলের ভালো দাম না পাওয়ায় অনেকেই এই চাষ করা ছেড়ে দিচ্ছেন।
Paddy Disease – ধান চাষে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কীট ও রোগ ব্যবস্থাপনা
Share your comments