বাঙালিদের কাছে ঢেঁড়শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক ফসল। স্বাস্থ্যসম্মত এই সবজি ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ। জমিতে ঢেঁড়শ চাষ করার সাথে সাথে বাড়িতেও সহজেই ঢেঁড়শের চাষ করা যায়। অনেকেই বর্তমানে ছাদ বাগানে ঢেঁড়শের চাষ করছেন। বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বড় বড় টবে, ড্রামে কিংবা একমুখ খোলা কাঠের বাক্সে সারমাটি ভরে অনায়াসেই ঢেঁড়শ চাষ করা যায়। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই সবজি খেতেও বেশ ভালো আমাশা দূরীকরণে ঢেঁড়শের ভীষণ উপকারিতা রয়েছে। এছাড়াও প্রস্টেটের অসুখ সারাতেও ঢেঁড়শের জুড়ি মেলা ভার।
টবের মাটি (Soil)
গাছের বৃদ্ধি এবং ঢেঁড়শের ভাল ফলনের জন্য মাটি অবশ্যই উর্বর, হালকা এবং ঝুরঝুরে হতে হবে। জল শুকিয়ে গেলে টবের মাটিতে যেন ফেটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টবের মাটি ঝুরঝুরা রাখতে হলে সমপরিমাণে দো-আঁশ মাটি ও জৈব সার একসাথে ভালভাবে মেশাতে হবে। এঁটেল মাটিতে জৈব সারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। সাধারণভাবে প্রতি টবের মাটিতে চা চামচের চার চামচ টিএসপি সার ও ৫ থেকে ৬ দিন আগে ভেজানো ১১৬ গ্রাম পরিমাণ সরিষার খৈল মেশানো যেতে পারে।
জাত (Species)
ঢেঁড়শের নানা জাত রয়েছে। এর মধ্যে পুশা শাওনী, কাবুলী ডোয়ার্ফ, লক্ষৌ ডোয়ার্ফ, লং গ্রীন, লং হোয়াইট, পেন্টাগ্রীণ-এসব বিদেশী জাত জনপ্রিয়।
সময় (Planting Time)
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত অর্থাৎ বছরের সব সময়ই ঢেঁড়শ গাছ লাগানো যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শীতের শেষভাগ থেকে বৈশাখ পর্যন্ত ঢেঁড়শ লাগানো যায়।
বীজ বপন (Planting)
ঢেঁড়শের চারা রোপণকালীণ সময় আঘাত সহ্য করতে পারে না বলে সরাসরি মূল টবে বুনতে হবে। ঢেঁড়শের জন্য মাঝারী ধরণের টব হলেই চলবে। প্রতি টবে ২ থেকে ৩টি বীজ বুনে দিতে হয়। চারা গজানোর পর একটি সবল চারা রেখে বাকিগুলো ফেলে দিতে হয়। খোসা শক্ত বলে ঢেঁড়শের বীজ দেরীতে গজায়। তাই বুনার আগে ২৮ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: Flower Farming in Tub: ছাদের টবে বিভিন্ন রকমের ফুল চাষের পদ্ধতি
পরিচর্যা (Caring)
ঢেঁড়শ গাছ জল সহ্য করতে পারে না। গাছের গোড়ায় দাঁড়ানো জল তাড়াতাড়ি সরিয়ে দিতে হবে। প্রত্যেকটা টবে জল যাতে না দাঁড়ায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ ১০ থেকে ১২ সেঃ মিঃ বড় হলে টবের কিনার ঘেঁসে ১ চা চামচ ইউরিয়া ও ১ চা-চামচ মিউরেট অব পটাশ মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
রোগবালাই (Pest and Disease control)
শুঁয়া পোকা কচি কাণ্ড ছিদ্র করে গাছের ক্ষতি করে। ভাইরাস (মোজাইক) রোগ ঢেঁড়শে প্রায়ই দেখা যায়। এ রোগে পাতা হলদে হয়ে কুঁচকে যায়। রোগাক্রান্ত গাছ তুলে মাটিতে পুঁতে দিতে হয়। শুঁয়া পোকার আক্রমণ থেকে ঢেঁড়শ গাছকে বাঁচাতে হলে প্রতি লিটার জলে ১ মিঃ লিঃ ডায়াজিনন-৮০, নুভাক্রণ-৪০, একালাক্স-২৫ এর যে কোনটি অথবা ১ লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার সিমবুশ-১০ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ (Harvest)
বীজ বপনের দু’মাস পরেই ফল পাওয়া যায়। কচি অবস্থায় ঢেঁড়শ তুলতে হয়। দেরি হলে ফল শক্ত হয়ে যায় ও সেটা খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়। ঘন ঘন ঢেঁড়শ তুললে গাছে বেশি পরিমাণে ঢেঁড়শ আসে।
আরও পড়ুন: Barbel Fish Farming Process: জেনে নিন পুকুরে শিঙি মাছের সহজতম চাষের কৌশল
Share your comments