বর্তমান প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বিশ্বজুড়ে চাষাবাদের আধুনিকীকরণে জোয়ার এসেছে। কৃষিকার্যের এই উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, কৃষি নিয়ে নিত্যনতুন উদ্ভাবন। বর্তমানের চাষাবাদ পদ্ধতি অনেকাংশে উন্নত হয়েছে। কৃষিবিজ্ঞানের এই অগ্রগতি মানুষকে কৃষিকার্য নিয়ে পড়াশোনা অথবা হাতেকলমে চাষাবাদেও আসতে আগ্রহী করে তুলছে। গোটা বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন চাষাবাদের সঙ্গে মানুষ পরিচিত। মিশ্র চাষ তেমনই এক পদ্ধতি যেই প্রক্রিয়ায় মানুষ একই জমিতে দুই বা তার অধিক চাষ করতে পারে। মিশ্র চাষ পদ্ধতি কৃষিশাস্ত্রে এক বিশেষ উপ-পদ্ধতি হিসাবেই পরিচিত। দুই বা তার বেশি ফসল একসাথে একই জমিতে চাষ করার এই পদ্ধতি দুই ভাগে বিভক্ত-
ক) মিশ্র মধ্যবর্তী ফসল চাষ: দুই বা তার বেশি ফসল সারি না করেই একসাথে মিশিয়ে চাষ করা হয়।
খ) মিশ্র সারিবদ্ধ চাষ পদ্ধতি: এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে সারি করে নিয়ম মেনে ফসল চাষ করা হয়। সুস্পষ্ট সারি করে, দুই বা তার বেশি ফসল একসাথে মিশিয়ে চাষ করার পদ্ধতি অনেকাংশে নিয়মসমৃদ্ধ এবং মানুষের কাছে অধিক জনপ্রিয়।
মিশ্র চাষ পদ্ধতি মেনে চললে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়: (Benefits of Mixed Farming)
১) বিভিন্ন মরসুমে সঠিক পরিমাণে ফসল পাওয়া যায় এবং সেই ফসলের মান অত্যন্ত ভালো হয়।
২)যেই ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে তার ঠিকঠাক ব্যবহার করা যায়
৩) বিভিন্ন রোগবালাই অথবা পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসলকে অনেকাংশে বাঁচানো যায়।
৪) মিশ্র চাষের সবথেকে বড় সুবিধা হলো, এই চাষ পদ্ধতিতে এক ফসল আরেক ফসলকে প্রাকৃতিক ভাবে সাহায্য করতে পারে।
৫) ক্ষুদ্র চাষিদের এই পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করলে অনেক বেশি লাভ হয়।
৬) মাটির ক্ষয় রোধ করতেও এই মিশ্র চাষ এক বিশেষ ভূমিকা নেয়।
বর্তমানে মিশ্র চাষের বিভিন্ন ক্ষতিকারক দিকও লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য না-বাচক দিকগুলি জেনে নেওয়া যাক—(Harmful side of Mixed Farming)
১) এই প্রকার মূলধন নিবিড় কৃষিতে একই সঙ্গে নানাবিধ ফসলের চাষ হওয়ায় চাষের খরচ অনেকাংশে বেড়ে যায়। উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে তা ব্যয়সাপেক্ষ।
২) নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে মিশ্র কৃষির প্রাচুর্য লক্ষ্য করা যায়। এই অঞ্চল ছাড়া উষ্ণ আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে এই বিশেষ কৃষি ব্যবস্থার উন্নতি সম্ভব নয়।
৩) বিভিন্ন ফসলের চাষ একই সঙ্গে হওয়ার দরুন প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন ফসলের ক্ষেত্রে আলাদা সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করা অত্যন্ত অসুবিধাজনক ও ব্যয়সাপেক্ষ।
৪) মিশ্র চাষাবাদের জন্য প্রয়োজন বিস্তৃত কৃষিক্ষেত্র যা বহু চাষির থাকে না। ফলে এই চাষের পদ্ধতি অনেকেরই মেনে চলা সম্ভব হয় না।
আমাদের মনে রাখতে হবে পাহাড়ি উপত্যকায় হওয়া জুম চাষও একধরনের মিশ্র চাষ। মিশ্র চাষের প্রথা মেনে বর্তমানে অনেক চাষির অধিক পরিমাণে আয় হচ্ছে। ফসলের মিশ্র চাষের সাথে সাথে হাঁস-মুরগিরও মিশ্র চাষ করা হয়। যাকে এককথায় বলা চলে মিশ্ৰখামার। এছাড়াও মাছের মিশ্র চাষ পদ্ধতিও বর্তমানে বহুল পরিমাণে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:Guru Purnima 2021, আগামীকাল পূর্ণিমা তিথিতে কি কি করবেন, জানুন পূর্ণিমার পূজাবিধি সম্পর্কে
মিশ্র চাষের কয়েকটি উদাহরণ: (Example of Mixed farming)
বেগুন ও টমাটোর সাথী ফসল – বরবটি/মটর/সয়াবীন/গাজর/পিঁয়াজ, রসুন। (বেগুন ও টমাটো এক সাথে নয়)।
ভুট্টা +সয়াবীন/বাদাম/কলাই/অড়হড়। তিল+পাট/মেস্তা। করলা+লংকা। ছোলা+তিসি। টমাটো+বাঁধাকপি/রসুন/গাঁদা।
অড়হর+মুগ/বাদাম/বাজরা। তিল+কলা। মিষ্টি অলু+ভুট্টা+তুলো। মাচায় পটল+নিচে লংকা।
ভুট্টা+মুগ/বরবটি/শাঁকালু/শীম। সরিষা+গম+ছোলা। জোয়ার+ভুট্টা। টক ঢ্যাড়শ+অড়হর।
সুপারি/নারকোল+পেয়ারা/লেবু। পেঁপেঁ/কলা+আনারস। কলা+আনারস। আম(চারা অবস্থায়)+ বিভিন্ন সবজি/ডাল শস্য
আম(বড় অবস্থায়)+হলুদ/আদা। কলা+লংকা/তিল/বরনটি।
বেগুনের/পান বোরোজের জমির চারপাশে ঢ্যাঁড়শ/কলাগাছ লাগালে সাদামাছির আক্রমণ কমে।
আরও পড়ুন: Information of Pashu Kisan Credit Card বিশদে জানুন পশু কিষান কার্ড সম্পর্কে
Share your comments