মুলো অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সবজি হিসাবে গোটা পৃথিবী জুড়ে বিবেচিত। খেতেও যেমন ভালো তেমনই শরীরের পক্ষে এই সবজি স্বাস্থ্যকরও বটে। মূলত প্রচুর পরিমানে ক্যারোটিন, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম ও লোহা রয়েছে। বাজারে মুলোর প্রচুর পরিমানে চাহিদা থাকায় চাষিরাও এই সবজি চাষ অত্যন্ত মনপ্রাণ দিয়ে করেন। মূলত এই সবজি শীতকালের। মুলো তরকারি ছাড়াও স্যালাড হিসাবেও খাওয়া হয়। মূল চাষে বর্তমানে চাষিরা ভীষণই ভাবে লাভবান হচ্ছেন। সহজ উপায়ে মুলো চাষ নিয়ে আজকের আমাদের আলোচনার বিষয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক মুলো চাষের সহজতম পদ্ধতি।
উপযুক্ত মাটি (Soil)
মুলো চাষ মূলত উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে করা হয়। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো আছে এমন বেলে দোআঁশ মাটি মুলো চাষের জন্য উপযুক্ত। এঁটেল মাটিতে মুলোর তেমন বাড়বাড়ন্ত দেখা যায় না। ছাই ও জৈব সার বেশী ব্যবহারে মুলোর বৃদ্ধি ভালো হয়।
বীজ বপন (Planting)
আশ্বিন থেকে কার্তিক মাস মুলোর বীজ বপন করার জন্য আদর্শ সময়। প্রতি হেক্টরে বপনের জন্য ২.৫-৩.০ কেজি মুলো বীজের প্রয়োজন পড়ে। মুলো বীজ মূলত ছিটিয়ে বপন করা হয়। সারিতে বপন করলে মুলোর ভালো করে পরিচর্যা করা যায়। সারিতে চাষ করলে, এক সারি থেকে আর এক সারির দূরত্ব হতে হবে কমপক্ষে ২৫-৩০ সেমি.।
সার প্রয়োগ (Fertilizer)
মুলোর অধিক ফলনের জন্য বিঘা প্রতি গোবর বা আবর্জনা পচা সার ১.৫ থেকে ২ টন ব্যবহার করা উচিত | ট্টিপুল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সার ২০ কেজি, ইউরিয়া সার ৪০-৪৫ কেজি ও মিউরেট অব পটাশে (এমওপি) ২৫-৩০ কেজি ব্যবহার করতে হবে। টিএসপি সব ও এমওপি সারের অর্ধেক মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বীজ বপনের পর তৃতীয় ও পঞ্চম সপ্তাহে ইউরিয়া ও বাকি অর্ধেক এমওপি সার সমান ২ কিস্তিতে ভাগ করতে হবে। এরপরেই সেচ দিতে হবে। মুলোর বীজ উৎপাদন করতে হলে জমিতে অবশ্যই বোরন সার হিসেবে বোরিক পাউডার/বোরক্স ব্যবহার করতে হবে। প্রতি বিঘায় ২ কেজি বোরিক এসিড/বোরাক্স দেওয়া ভীষণ ভাবে দরকার।
পরিচর্যা (Caring)
প্রধানত, বীজ বপনের ৭-১০ দিন পর অতিরিক্ত চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে বেশি জায়গার দরকার হয়। তাই চারা অবস্থায় চারার ঘনত্ব বেশি হলে কয়েক দফায় চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। তুলে নেওয়া চারাগুলো বাজারে বিক্রি করা যেতে পারে। মাটিতে রস কম থাকলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে। প্রতি কিস্তির সার উপরি প্রয়োগের পর পরই সেচ দিতে হবে। গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য মাঝে মাঝে নিড়ানী দিয়ে আগাছা পরিস্কার করে দেওয়া উচিত।
রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন (Pest and Disease control)
অন্যান্য সবজির মতন মুলোরও বিভিন্ন রোগবালাই লেগে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন পোকা মাকড়ের সমস্যা তো আছেই। মুলোর পাতায় অল্টারনারিয়ার দাগ একটি প্রধান সমস্যা। মুলো পাতায় বিটল বা ফ্লি বিটল পাতা ছোট ছোট ফুটো করে খেয়ে ফেলে। বীজ উৎপাদনের সময় জাব পোকার আক্রমণ মূল ক্ষেতে ভীষণ ভাবে লক্ষ্য করা যায়। গাছ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাই কীটনাশক স্প্রে করা উচিত।
আরও পড়ুন: Barbel Fish Farming Process: জেনে নিন পুকুরে শিঙি মাছের সহজতম চাষের কৌশল
ফসল সংগ্রহ (Harvest)
মুলো শক্ত হয়ে আঁশ হওয়ার আগেই ক্ষেত থেকে তুলে ফেলতে হবে। হাইব্রিড জাতসমূহ আসাতে মুলো চাষে এই সম্ভাবনা অনেক কম হয়ে গিয়েছে। তবে মুলো কচি থাকা অবস্থাতেই তুলে ফেলা উচিত। কচি অবস্থাতে মুলো তুলে ফেললে মুলোর স্বাদও অনেক বেশি পাওয়া যায়।সঠিক ভাবে যত্ন নিলে জাতভেদে হেক্টর প্রতি মুলোর ফলন ৪০-৬০ টন কোনও ব্যপারই নয়।
আরও পড়ুন: Farming Process of Cinnamon: শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল
Share your comments