বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে লোহা-সিমেন্টের ছায়া-জাল-ঘরে (শেড নেট হাউস) চাষ করে উপকৃত হয়েছেন বহু কৃষকভাইরা | যেমন বেড়েছে ফসলের গুণগতমান তেমন বেড়েছে লাভের পরিমান | পান চাষে শেড নেটের ব্যবহার কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই বাংলায় | শুধু পান চাষ না, আরও অনেক কিছুই চাষ করা যায় এই পদ্ধতি অবলম্বনে| শেড নেট পদ্ধতিতে চাষাবাদ নিতান্তই কৃষকদের কাছে এক জনপ্রিয় পন্থা হয়ে উঠেছে | অনেকের কাছেই অজানা এই শেড নেট পদ্ধতি (Shade net firming) | এই নিবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করবো শেড নেট পদ্ধতির ব্যাপারে |
শেড নেট পদ্ধতি কি(What is shade net method)?
সাধারণত, শেড নেট হলো এইচডিপিই বা প্লাস্টিকের তৈরী একটি জাল যা মূলত ফসলকে রক্ষার জন্য ও সূর্যের বিকিরণ ও তাপমাত্রা কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। শেড নেট তৈরী করা হয় শেড নেটের ভিতরে সূর্যের আলো কতটুকু কমিয়ে ফেলবে তার উপর ভিত্তি করে এবং এর পরিমাণ ২০-৯০ শতাংশ হয়ে থাকে। শেড নেট বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে থাকে যা বিকিরণ, তাপমাত্রা পরিবর্তনের জন্য ব্যবহার হয়।
মূলত শেড নেট হাউজ ও গ্রীনহাউজ দুটোই একই উদ্দেশ্যে তৈরী করা হয় | যা খোলামেলা পরিবেশ থেকে আলাদা একটি পরিবেশ গড়ে তোলে অর্থাৎ যেখানে সুন্দর ও সাবলীলভাবে ফসল বেড়ে উঠবে। প্রধান উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন কীটপতঙ্গ, পাখি, শিলাবৃষ্টি ও দ্রুত বেগের বাতাস, কুয়াশা বা তুষারপাত, অতিরিক্ত তাপমাত্রা থেকে ফসলকে রক্ষা করা। তবে, শেড নেট হাউজ ও গ্রীনহাউজ এর পার্থক্য মূলত ব্যবহার, কাঠামো, পরিবেশ, উদ্দেশ্য, স্থায়িত্ব ইত্যাদি।
আরও পড়ুন - Successful farming tips: সফল কৃষিকাজের চাবিকাঠি কি? জেনে নিন কিছু টিপস
তাছাড়া মূল কাজ একই। শেড নেট হাউজ সবসময় ঠান্ডা থাকে তাই যে সকল ফসল ঠান্ডায় খুব ভালভাবে জন্মাতে পারে সেই ফসলগুলি এখানে চাষের জন্য সুবিধাজনক। অন্যদিকে গ্রীনহাউজ ইউভি পলিথিন দিয়ে ঢাকা থাকে তাই যে ফসলগুলো গরমে তুলনামূলক ভাল জন্মাতে পারে সেগুলো চাষ করা উত্তম। তাপমাত্রা, আলো ও পরিবেশ পুরো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে এখানেও সব ধরনের সবজি চাষ করা যায়।
শেড নেট পদ্ধতির সুবিধা(Benefits of Shade Net method):
প্রধানত, শেড নেট আলোর বিকিরণকে কমিয়ে ছায়া যুক্ত একটি পরিবেশ তৈরি করে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি কমিয়ে ফেলার কারনে এখানে ফসল অত্যন্ত ভালভাবে বেড়ে উঠতে পারে। সবজি চাষের জন্য শেড নেট ব্যবহার করলে সাধারণত খোলা জায়গার চেয়ে ৩৫-৫০ শতাংশ বেশি উৎপাদন হয়। সবচেয়ে বড় সুবিধা হল নির্দিষ্ট ঋতুকাল ছাড়াই বছরব্যাপী শেড নেট হাউজে ফসল চাষাবাদ করা যায়।
সব্জি ফসল চাষে শেড নেটের ব্যবহার(Vegetables farming):
টমেটো, শসা, লেটুস, মরিচ, ক্যাপসিকাম, কপি, ধনেপাতা বা পালং শাক, ফুল ইত্যাদি খোলা মাঠে চাষ করতে নানা অসুবিধায় পড়তে হয়। বর্তমানে নানা উন্নত জাত গরমে চাষ সম্ভব হলেও গুণমান ভালো পাওয়া যায়না | রোগপোকা ঠেকাতে স্প্রে করতে হয় বেশী। সেজন্য বর্তমানে ৫০% সবুজ শেডনেট ফসলের ১০-১৫ ফুট উপরে বাঁশ, সিমেন্টের পিলার বা স্টিল এর কাঠামোর উপর দিয়ে ঢাকার ব্যবস্থা করলে এই সব সব্জি চাষ খুব ভালো ভাবে করা সম্ভব | যা কৃষকদের এনে দেবে ব্যাপক লাভ |
পান চাষে শেড নেটের ব্যবহার(Betel vine farming):
চিরায়ত পদ্ধতিতে খড়-পাটকাঠির বরজ বানিয়ে পান চাষে বারবার ক্ষতির মুখে পড়ছেন চাষীরা|প্রথাগত পান চাষে খরচ প্রচুর। ‘শেড নেট’ ব্যবহারের মাধ্যমে পান চাষ করলে নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। শেড নেটে সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে ৫০ শতাংশ। কিন্তু কুয়াশা প্রবেশ করতে পারে না। বাতাস ও সূর্যালোক প্রবেশের ফলে ছত্রাকের সমস্যা কমে যায়। ফলে হেমচিতি রোগ হয় না। তেমনি গরমের ক্ষেত্রেও তাপমাত্রা কমিয়ে দেয় ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আপনি আপনার ছাদবাগানের ছোট জায়গায় চারা উৎপাদন ও অর্গানিক সব্জি চাষের জন্য অনায়াসে শেড নেট ব্যবহার করতে পারেন। ছাদে তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে তাই ফসল অনেকসময় ভাল ফলন দেয় না। এই শেড নেট হাউজের ভিতরে টবে সকল ধরনে সব্জি ও শাক চাষ করতে পারবেন। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে শেড নেট হাউজে চাষাবাদ করে সারাবছরব্যাপী উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন সম্ভব | সর্বোপরি, এই পদ্ধতি অবলম্বনে আমাদের দেশের কৃষকবন্ধুরা লাভের মুখ দেখবে অনায়াসে |
আরও পড়ুন - Rabbit rearing at home: জেনে নিন বাড়িতে খরগোশ পালনের পদ্ধতি
Share your comments