আফ্রিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ দানাদার দেশীয় ফসল, যা গোটা পৃথিবীতেই জন্মায় সেটি হলো সরগম | এই সরগম ভারত ও বাংলাদেশে 'জোয়ার' নামে পরিচিত | বিভিন্ন দানাদার শস্যের মধ্যে আবাদি জমির পরিমানের দিক থেকে জোয়ার ৫ম স্থান দখল করে আছে এবং পৃথিবীতে এর বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৬০ মিলিয়ন টন। এটি মানুষের এবং পশুপাখির খাদ্য হিসেবে পৃথিবীব্যাপী সমাদৃত। এই ফসল চাষে কৃষকদের লাভও হয় ভালো রকম | কারণ, বাজারে এই ফসলের চাহিদাও ব্যাপক |
বর্তমানে প্রায় ১০০টি দেশে জোয়ার উৎপাদন হয় এবং এর প্রায় ৬৬টি প্রজাতি রয়েছে। সাধারণত, জোয়ার ঘাস পরিবারের একটি দানাদার ফসল। এর শিকড় মটির নিচের দিকে এবং পাশাপাশি যথাক্রমে ২ মিটার ও ১ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। প্রতি গাছে ৮-২২টি পাতা থাকে। পাতায় পাতলা মোমের আবরণ থাকে। এ গাছ আড়াই থেকে তিন মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
উপযুক্ত মাটি (Soil):
এটি সাধারণত, কম উর্বর, বেলে দো-আঁশ ও কাদামাটিতে ভালো জন্মায় | জল নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে। জোয়ার চাষের জন্য মাটির আদর্শ পিএইচ মান ৬-৭.৫।
জলবায়ু (Climate):
এটি মূলত গ্রীষ্ম ও উষ্ণ আবহাওয়ার ফসল | ১৫-১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে ৮০ ভাগ বীজ অঙ্কুরিত হয়। ২৫ থেকে ৩২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ভালোভাবে বৃদ্ধি হয় |
বপণের সময়:
রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমেই সরগম চাষ করা যায়। রবি মৌসুমে ১৫ অক্টোবর-নভেম্বর (কার্তিক-পৌষ) এবং খরিফ মৌসুমে ১৫ এপ্রিল-মে (ফাল্গুন-চৈত্র) মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
বীজের পরিমান:
সাধারণত হেক্টরপ্রতি ৩০-৩৫ কেজি বীজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
রোপণ:
সারিতে বা ছিটিয়ে জোয়ারের বীজ বপণ করা যায়। সারিতে বপণের জন্য জমি তৈরির পর সরু নালা তৈরি করে ২৫-৩০ সেমি. দূরত্বের সারিতে জো অবস্থায় ২-২.৫ সেমি. গভীরে বীজ বপণ করতে হয়। ২৫-৩০ সেমি. দূরত্বে সারিতে বপণ করা হলে গাছের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২.৫ লাখ এবং হেক্টরপ্রতি ৩ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
সাধারণত হেক্টরপ্রতি ১৩০ কেজি ইউরিয়া, ২০০ কেজি টিএসপি এবং ৮০ কেজি এমওপি সার ব্যবহার করা হয়। সেচসহ চাষের ক্ষেত্রে জমি তৈরির সময় ৫০ ভাগ ইউরিয়া এবং সম্পূর্ণ টিএসপি এবং এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ৫০ ভাগ ইউরিয়া ২ কিস্তিতে ১৫ দিন ও ৩০ দিন পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ছাড়া চাষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সার অর্থাৎ ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। গন্ধক সারের অভাবজনিত মাটিতে হেক্টরপ্রতি ২৩০-২৫০ কেজি জিপসাম সার এবং ১০-১২ মে.টন জৈবসার ব্যবহার করা হলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এতে শুধু ফলনই বাড়ে না, বীজের পুষ্টিগত মানও উন্নত হয়।
সেচ:
সাধারণত সেচের প্রয়োজন হয়না, তবে বেশি ফলন পেতে চাইলে সেচ দেওয়া ভালো | সাধারণত বীজ বোনার ২০-৩০ দিন পর ১ম সেচ এবং ২য় সেচ বীজ বপনের ৫০-৬০ দিন পর দিতে হবে । তবে খেয়াল রাখতে হবে, জমিতে কোনোভাবে যেন জল না দাঁড়ায় |
রোগবালাই ও দমন (Disease management system):
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বীজ শোধন করা প্রয়োজনীয় | থিরাম/ভিটাভেক্স-২০০ প্রতি কেজি বীজের জন্য ৩ গ্রাম হারে ব্যবহার করে বীজ শোধন করতে হয়। ফসল এনথ্রাকনোস ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হলে কারবেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার জলে ৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুন - Fish farming: আপনি কি মাছ চাষে আগ্রহী? মিশ্র পদ্ধতিতে মাছ চাষে পাবেন দ্বিগুন লাভ
ফসল সংগ্রহ:
রোপণের ৯৫-১১০ দিন পরে গাছের পাতা কিছুটা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে ফসল কাটার উপযুক্ত সময় হবে। ফসল পেকে গেলে দিনের প্রথম ভাগে কাটা উচিত তা না হলে দানা ঝরে যেতে পারে। ২-৩ দিন শুকানোর পর মাড়াই করে ভালো করে শুকিয়ে সংগ্রহ করতে হবে |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Biofloc fish farming: বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ কতটা লাভজনক?
Share your comments